এই অস্ত্রবাজরা অধরাই থাকে কেন?
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০৪ এএম, ১৪ জুন,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:১৭ এএম, ১০ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের দেশের বিভিন্নস্থানে বৈধ ও অবৈধ অস্ত্রের মহড়া করতে দেখা যায়। টেন্ডার দখল, ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন করতে দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মহড়ার ভিডিও ভাইরাল হতে দেখা যায়। অথচ সরকার দলীয় হওয়ায় ঐ সকল সন্ত্রাসী রয়ে যায় অধরা। সর্বশেষ গত শনিবার পাবনায় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে গণপূর্ত ভবনে মহড়া দিতে দেখা যায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। সেই ঘটনায় অস্ত্র জমা নিলেও কোনো নেতাকর্মীকে আটক করেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এই সকল ঘটনাকে দেশে আইনের শাসনের অভাব বলে উল্লেখ করছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা বলেন, সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের অপরাধের বিচার যদি না করা হয় তবে সমাজে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
এ বিষয়ে বর্ষীয়ান আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন দিনকালকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলা মুশকিল। যারা আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত তারাই আইন ভঙ্গ করে চলছে। অথচ এই সকল বিষয়ে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
গত শনিবার গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে আসা সিসিটিভি ফুটেজ ও ছবিতে থেকে দেখা গেছে, গত ৬ জুন দুপুরে পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাজী ফারুক, পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ আর খান মামুন এবং জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালুর নেতৃত্বে প্রায় ২৫-৩০ জনের একটি দল আগ্নেয়াস্ত্র হাতে গণপূর্ত ভবনে আসেন। তারা অস্ত্র হাতে অফিসের বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশ করেন এবং কিছুক্ষণ পরে বের হয়ে চলে যান।
এই প্রসঙ্গ টেনে মাসুদ আলম বলেন, গণমাধ্যমে ঘটনাটি প্রকাশ পাওয়ার পরে অস্ত্র প্রদর্শনকারী দুই ঠিকাদার এ আর খান মামুন ও শেখ লালু গতকাল সকালে পাবনা সদর থানায় তাদের দুটি লাইসেন্সকৃত শটগান থানায় জমা দিয়েছেন। সরকারি দফতরে অস্ত্র হাতে প্রবেশ করার ঘটনায় পাবনা সদর থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে, পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। অস্ত্র বৈধ হলেও জনমনে ভীতির সৃষ্টি হতে পারে এমনভাবে অস্ত্র প্রদর্শনের সুযোগ নেই। অস্ত্র আইনের শর্ত ভঙ্গ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে এ ঘটনায় পূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো মামলা বা অভিযোগ করা হয়নি। পাবনা পূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিম গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনার সময় আমি অফিসের বাইরে ছিলাম। তবে সিসিটিভি ফুটেজে দেখেছি, অস্ত্র হাতে অনেকে এসেছেন। তারা আমাকে সরাসরি বা ফোনে কোনো হুমকি দেননি, কথাও হয়নি। তাই আমরা লিখিত অভিযোগ করিনি। যেহেতু তারা কোনো অনিষ্ট করেননি, সেহেতু এ ব্যাপারে কোনো মামলা করার পরিকল্পনা গণপূর্ত বিভাগের নেই।
এ বিষয়ে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল রহিম লাল গণমাধ্যমকে বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো এ ধরনের অনৈতিক কোনো কর্মকান্ড সমর্থন করে না। আর এটি দলীয় কোনো ব্যাপার নয়।
অস্ত্র হাতে গণপূর্ত বিভাগে প্রবেশের কারণ জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদার ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, এটি ভুলবশত ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদারি কাজের সাথে আমি জড়িত না। অন্য জায়গায় যাওয়ার পথে ওই অফিসে গিয়েছিলাম। তবে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না।
ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিতে জড়িত দুই ঠিকাদার পাবনা সদর থানায় তাদের বৈধ অস্ত্র জমা দিয়েছেন। গতকাল রবিবার বিকেলে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নোয়াখালীর বসুরহাটে প্রায়ই আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ঘটছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। দেখা গেছে আওয়ামী লীগের অস্ত্রের মহড়া। কিন্তু আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে জড়িতদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না।
এর আগে কক্সবাজার শহরে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে। জড়িয়েছে সংঘর্ষেও। কিন্তু এ ঘটনায় এখনো কেউ আটক হয়নি। তাছাড়া গাজীপুরের ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রায়ই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অস্ত্রের মহড়া করতে দেখা যায়। অথচ ঐ সকল সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে আইনের মুখোমুখি করা হচ্ছে না।