হারিয়ে ফেললাম পিতৃস্নেহের দুটি হাত
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩:১৩ এএম, ২০ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৩৭ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
আমার পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক ড. আহমদ কবির গত ৩ জানুয়ারি পরলোক গমন করেছেন। তার মৃত্যুতে আমি হারিয়েছি অভিভাবক, হারিয়েছি পিতা, পিতার স্নেহ। বুকজুড়ে এখন কেবলই হাহাকার। আর কেউ গর্ব করে বলবেন না, ‘আমার শিক্ষক জীবনের সেরা ছাত্র রেজোয়ান’। টিভির টকশোতে আমি হাজির হলে আর তিনি কোনো দিন বাসার সবাইকে ডেকে বলবেন না, ‘এই যে এসো তোমরা, আমার সেরা ছাত্র কথা বলছে।’ এই পর্যায়ের কেউ কি আর আমার সংবাদপত্রের উপসম্পাদকীয়গুলো তার মতো অভিনিবেশ নিয়ে পড়বেন? খুব যে ঘন ঘন স্যারের সাথে দেখা হয়েছে, তা নয় নিয়মিত আড্ডা দিতেও যাইনি। কিন্তু পিতার মতোই বিশাল বুকের গভীরে আমাকে তিনি ঠাঁই দিয়েছিলেন।
আহমদ কবির স্যারের (৭৬) সাথে আমার পরিচয় ১৯৭০ সালে, ঢাকার জগন্নাথ কলেজে। ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাস করে করটিয়া সা’দত কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। রাজনীতির ডামাডোলে ছিটকে পড়ি শিক্ষাজীবন থেকে, সাময়িকভাবে। ১৯৬৯ সালের শেষ দিকে ঢাকায় পাড়ি জমাই চট্টগ্রাম থেকে। ঢাকায় এসে শুধু টিকে থাকার জন্য, জীবিকার জন্য যুদ্ধ শুরু করি। টিউশনি করেছি, ‘দস্যু বনহুর’ বই কাঁধে নিয়ে অলিতে-গলিতে বিক্রি করেছি। বই প্রতি আট আনা (পঞ্চাশ পয়সা) লাভ। শেষে হলাম প্রেসের কম্পোজিটর। হ্যান্ড কাস্টিং টাইপ। খোপে খোপে সাজানো। সেগুলো একটা একটা করে তুলে এনে জোড়া দিয়ে শব্দ তৈরি করা। স্টিকে সাজানো, গ্যালিতে রাখা এসব কাজ। শিখতে সপ্তাহ খানেক লাগে। এরপর রকেট আর্ট প্রেসে চাকরি হয়ে গেল! ৭৫ টাকা মাসিক বেতন। তার আগেই জগন্নাথে ফের প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছি। ১৯৭০ সালে।
ভর্তি হয়েই বাংলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে পেলাম আহমদ কবির, শহীদুর রহমান, আবদুল মান্নান সৈয়দ, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারকে। তারা নাইট শিফটের শিক্ষক ছিলেন। আমিও নাইট শিফটে। সারাদিন কম্পোজিটরের কাজ। সন্ধ্যায় ক্লাস, রাতে পড়াশোনা। প্রথম বর্ষের পড়াশোনা তো আমার করাই ছিল। ধারণাও ছিল মোটামুটি স্পষ্ট। কথাসাহিত্যিক শওকত আলী স্যার ছিলেন দিবা শাখায়। তার লেখা পড়তাম, দেখা করতাম। এই শিক্ষকদের সবার স্নেহ-ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছিলাম।
এর মধ্যে শহীদুর রহমান আর আহমদ কবির স্যারের সাথে ঘনিষ্ঠতা হলো। কবির স্যার আমাকে বলেছিলেন, তিনি শহীদুর রহমান স্যারের সাথে আমার বিষয়ে আলাপ করেছিলেনÑ কিভাবে আমার পরিচর্যা করা যায়, আমার প্রতিভার স্ফুরণ ঘটানো যায়। আর তাই প্রতিদিন কবির স্যার বা শহীদ স্যার আমাকে ক্লাস শেষে দেখা করতে বলতেন। জানতে চাইতেন, কোনো কাজ আছে? জানাতাম, ক্লাসের পর পড়ালেখা ছাড়া আমার কোনো কাজ নেই। ‘তাহলে চলো আমার সাথে; লেখাপড়া নিয়েই আলাপ করতে করতে যাই।’ আমি কোনো দিন শহীদ স্যারের সাথে তার পুরানা পল্টনের বাসা পর্যন্ত যাই। সেখানেও স্যার কার্যত বিশ্বসাহিত্য নিয়ে আলাপ করতেন। চা খাই। দেরি হয়ে গেলে পরিবারের সবার সাথে বসে ভাত খাই। তারপর হেঁটে চলে আসি সদরঘাট। থাকি চুনকুটিয়া। গুদারা পার হয়ে বাসায় চলে যাই। তবে ফেরার সময় শহীদুর রহমান স্যার কখনো ধরিয়ে দেন বালজাকের ‘জনক’, কখনো আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’, কখনো টলস্টয়, কখনো মেটামরফসিস, কখনো দস্তয়েভস্কি। বলতেন, যখন পড়া শেষ হবে আমরা এই বই নিয়ে আলোচনা করব। তাই চলছিল। ফলে ক্লাসে আমার ‘ফটর ফটর’ বেড়ে গেল। তা ছাড়া ছোটদের রাজনীতি, ছোটদের অর্থনীতি, মানুষ এলো কেমন করে, মাও সেতুংয়ের রচনাবলি এগুলোÑ আগেই পড়ে ফেলেছিলাম। পড়েছিলাম আবুল মনসুর আহমদের ‘পাক-বাংলার কালচার’সহ আরো কত বই।
কবির স্যারও সাহিত্য নিয়ে বক্তৃতা করতে করতে পথ চলতেন। সাথে থাকত ইতিহাস। নবাবপুর রোড ধরে হেঁটে এসে আমরা জিন্নাহ এভিনিউতে (তখন ওই নাম ছিল) পূর্ণিমা স্ন্যাকসের দোকানে থামতাম। বনরুটি, ছোট মুরগির রান খেতাম দু’জনে। স্যার বোধহয় বুঝতে পারতেন, এসব কিনে খাওয়ার সাধ্য আমার নেই। স্যারের বাসা ছিল আজিমপুরের চায়না বিল্ডিং। বাসায় বসতাম। ফের আলোচনা। কখনো মৃদু তর্ক। তারপর একসময় হাঁটতে হাঁটতে সদরঘাট হয়ে চুনকুটিয়া। শহীদ স্যার ও কবির স্যার উভয়ের কাছেই অকপটে আমার জীবনের লড়াইয়ের গল্প বলেছি। ঘর ছেড়েছিলাম রাজনীতির কারণে। মাসোহারা বন্ধ। চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম নিজের পায়ে দাঁড়াতে। তার সবটুকু জানতেন কবির স্যার ও শহীদ স্যার। আমার একটা সুবিধা ছিল, ১৯৬৮ থেকে ১৯৭০ এই দুই বছর শুধু পড়েছি। রাজনীতি, সাহিত্য, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাসÑ দেশী-বিদেশী। পরে দেখেছি, মাস্টার্সে যা কিছু পাঠ্য, তার বেশির ভাগই পড়ে ফেলেছি ১৯৬৮ থেকে ৭০ সালের মধ্যে। ফলে দুই স্যারের সাথে আলোচনা একেবারে থমকে থাকত না। আলোচনা হতো। আর আমি কম্পোজিটরগিরি বাদ দিয়ে বাংলাবাজারে প্রুফ দেখতে শুরু করেছিলাম।
১৯৭২ সালে কবির স্যার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগ দিয়ে চলে গেলেন। রইলেন শহীদুর রহমান স্যার। রইল আমাদের সম্পর্কও, আর তাদের অপার স্নেহ। উভয়ের বাসায় আমার আগের মতোই যাতায়াত অব্যাহত থাকে। আস্তে আস্তে শহীদ স্যারের পরিবারের সদস্য হয়ে গেলাম।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা ছেড়ে চলে গেলাম সা’দত কলেজের ভিপি খন্দকার আবদুল বাতেনের সাথে, তার মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীতে যোগ দিতে। যোগ দিলাম। এর মধ্যে কখনো প্রয়োজনে ঢাকা এসেছি, খালি গায়ে। কোমরে গামছা বেঁধে। লেবার। মাটি কাটি। না শহীদ স্যার, না কবির স্যার, কাউকে কিছু বলিনি। চুপচাপ দেখা করেছি। দু’জনই বলতেন, কেন এলে ঢাকায়? সাবধানে থেকো। তারপর হাওয়া।
১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। বুঝতে পারলাম না, ঢাকা ফিরব কি না। তখনই পোস্টকার্ডে গ্রামের ঠিকানায় একটি চিঠি পেলাম। লিখেছেন, যদি খবরের কাগজে প্রুফ রিডারের কাজ করতে চাও, তা হলে চিঠি পেলেই, যদি পারো ঢাকায় চলে আসো। কয়েক দিনের মধ্যে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে ঢাকা ফিরে শহীদ স্যারের সাথে তার বাসায় দেখা করলাম। স্যার বললেন, ‘আবিদুর রহমান শাহবাগ থেকে দুটি কাগজ বের করছে ‘দ্য পিপল’ ও ‘গণবাংলা’। তুমি গণবাংলায় প্রুফ রিডার হিসেবে কাজ শুরু করতে পারো। সেখানে রিডিং সেকশনের ইনচার্জ ছিলেন ওয়াসিল আহমদ। শহীদ স্যার, ওয়াসিল ভাইকে একটা চিঠি লিখে দিলেন, ‘ছেলেটা যাই পারে, ওকে প্রুফ রিডার হিসেবে নিয়োগ দিলে খুশি হবো।’ শহীদ স্যার শিক্ষকতার পাশাপাশি সাংবাদিকতাও করেছেন। ফলে তিনি সবাইকে চিনতেন। গেলাম। ইন্টারভিউ দিলাম। সাথে সাথে চাকরি হয়ে গেল। বেতন ১৫০ টাকা। কিন্তু এক মাসের মধ্যে দ্য পিপল ও গণবাংলা বন্ধ হয়ে গেল। বাংলার বাণীতে চাকরির দরখাস্ত করলাম। চাকরি হয়ে গেল। বেতন ২২০ টাকা। নিয়োগপত্র নিয়ে এলাম শহীদ স্যারের কাছে। বললেন, ‘করেছ কী? ওখানে তো তুমি চাকরি করতে পারবে না। তার চেয়ে দৈনিক বাংলায় জয়েন করো। বাংলার বাণীতে সবাই তোমাকে নিচে নামাতে পা টেনে ধরবে, দৈনিক বাংলায় সবাই তোমাকে উপরে উঠাতে পা ঠেলে ধরবে। বাংলার বাণীতে যোগ দিও না।’
শহীদ স্যার দৈনিক বাংলার রিডিং ইনচার্জ, বিশিষ্ট অনুবাদক কাজী মাসুমকে একটি চিঠি লিখে আমার হাতে দিলেন। একই কথা লেখা, ‘মাসুম ভাই, ছেলেটা যদি পারে, তবে ওকে প্রুফ রিডারের চাকরি দিলে খুবই খুশি হবো।’ কাজী মাসুম সাহেব আমাকে ভালো করে একটা মাপ দিলেন। বললেন, ‘প্রুফ কাটো। দেখি। কপি হোল্ডার লাগবে?’ আমি বললাম, না। দু’তিন কলাম প্রুফ একাই দেখলাম। সেগুলো পরীক্ষা করলেন শিফট ইনচার্জ সাইফুর রহমান। ওকে। আমি পাস। চাকরি হয়ে গেল। বেতন ১৮০ টাকা।
আমি ফের গেলাম শহীদ স্যারের কাছে। স্যার, দৈনিক বাংলা মাত্র ১৮০ টাকা দেবে। জয়েন করব? স্যার বললেন, ‘হ্যাঁ। কারণ, এখানে সব বিদ্বান ও জ্ঞানী লোকেরা কাজ করে। তোমাকে তারা উপরে ঠেলবে, নিচে টানবে না।’ দৈনিক বাংলায় জয়েন করলাম। এর দৈনন্দিন সব কিছু কবির স্যারকে জানাতাম। দৈনিক বাংলায় চাকরি হয়েছে শুনে কবির স্যার কী যে খুশি! আমাকে একেবারে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘তোমার উত্থান আর কেউ ঠেকাতে পারবে না। তুমি এগিয়ে যাবেই। শহীদুর রহমান কথা রেখেছে।’
১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য অনেক বিভাগে পরীক্ষা দিলাম। বাংলা, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। সব ক’টাতে অ্যালাউড। কবির স্যারকে বললাম, ‘আমি বাংলা পড়তে চাই’। কবির স্যার বললেন, ‘কেন?’ বললাম ‘লেখক হতে চাই’। স্যার বললেন, ‘বাংলা পড়লে লেখক হওয়া যায়, তোমাকে কে বলল?’ তবু শেষ পর্যন্ত বাংলায় পড়ারই সিদ্ধান্ত নিলাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো অনেককে পেলাম শিক্ষক হিসেবে। তার মধ্যে আহমদ শরীফ, আবুল কাসেম ফজলুল হক উল্লেখযোগ্য। কাসেম স্যার সবসময় প্রেরণা দিতেন গবেষণায়। বলতেন, ‘সাংবাদিকতায় আছি, পরিচয় আছে। পাশাপাশি এই কাজগুলো করে রাখো।’ তার সেই অনুপ্রেরণা ও অবিরাম তাগাদায়ই হয়েছে আমার পিএইচডি। সবসময়ই যোগাযোগ ছিল শহীদুর রহমান ও আহমদ কবির স্যারের সাথে। কার্যত গত সপ্তাহে কী করেছি, তারা দু’জন সে কথাও জানতেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার শেষ পর্যায়ে নেদারল্যান্ডসের এইএসএস-এ পড়ার বৃত্তি পেলাম। কবির স্যারকে জানাতে গেছি। আমাকে দু’হাতে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘তোমার জন্য আমি গর্বিত’। বিদেশ থেকে ডিগ্রি নিয়ে ফিরে আসার পর ১৯৯১ সালের শেষে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাকে ডেকে নিয়ে উপ-প্রেস সচিব হিসেবে বক্তৃতা লেখকের কাজ দিলেন। কবির স্যারের সাথে দেখা করতে গেলাম। তিনি নির্বাক হয়ে কেবলই আমার গালে-মুখে-মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলেন। বললেন, ‘আমরা তো বিভিন্ন মানুষের জীবনের সাফল্যের কথা কেবল পড়েছি। কিন্তু একজন মানুষ সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় এতটা সফল হতে পারে, স্বচক্ষে সেটা তোমাকে দেখলাম।’ বুক থেকে আর ছাড়ছিলেন না কবির স্যার। আমার চোখের পানিতে তার বুক ভিজে গেল। প্রেস ইনস্টিটিউটের ডিজি বা মহাপরিচালক হয়ে ফের দেখা করতে গেলাম। স্যার নিজের হাতে আমাকে মিষ্টি খাওয়ালেন। বললেন, ‘তুমি আরো বড় হবে রেজোয়ান, তুমি আরো বড় হবে’। আমার চোখ গড়িয়ে নামল অশ্রুধারা। ততদিনে শহীদুর রহমান স্যার ইহলোক ত্যাগ করেছেন। তার সাথে সম্পর্কের কাহিনী অন্যরকম।
২০১৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আমার ৬৭তম জন্মদিন। কবির স্যার, কাসেম স্যার, মনসুর মূসা স্যার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘনিষ্ঠ সহপাঠীদের দাওয়াত দিলাম। কবির স্যারের বাসায় গেলাম দাওয়াত দিতে। স্যারকে বললাম, কী খাবেন স্যার? স্যার বললেন, ‘কামরুন (আমার স্ত্রী) কি শিমের বীচি দিয়ে শুঁটকি রাঁধতে পারবে?’ আমি বললাম, ওরা ময়মনসিংহের লোক। শুঁটকিপাগল। পারবে। তিনি বললেন, ‘আর যাই করো, শিমের বীচি দিয়ে শুঁটকি রাঁধতে বলো।’ বাসাভর্তি উৎসবের আয়োজন। স্যার গান শুনতে পছন্দ করেন। বসল গানের আসরও। রাত ১১টা পর্যন্ত গান চলল। আমার ছোট ছেলে উমরকে ২০ মিনিট ধরে বুকে জড়িয়ে ধরে রাখলেন। সেটাই শেষ দেখা। তারপর দু-একবার কথা হয়েছে দেখা হয়নি। স্যার তার অন্য ছাত্রদের কাছেও আমাকে নিয়ে গর্ব করতেনÑ ‘তার শিক্ষক জীবনের সেরা ছাত্র’।
স্যার অসুস্থ হয়ে ল্যাবএইডে ভর্তি হয়েছিলেন। ফেসবুকের মাধ্যমে জানলাম। বুক কাঁপছিল। স্যারের নম্বরেই ফোন দিলাম। ভাবী ধরলেন। বললেন, ‘রেজোয়ান, তোমার স্যার তো নেই।’ চুপ করে থাকলাম। ভাবী বললেন, ‘তিন-চার দিন আগে তোমার টকশো ছিল না? দেখে তোমার স্যার, আমাদের ডাকলেন, বললেন, দেখো, আমার জীবনের সেরা ছাত্র কথা বলছে, দেখো।’ টেলিফোনে এ প্রান্তে হু হু করে কেঁদে ফেললাম। এই পৃথিবীতে পিতৃ-মাতৃহীন আমি, একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com