নাঙ্গলকোটে করোনাকালে শিক্ষকদের কোচিং বানিজ্য
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:২০ পিএম, ৩১ মার্চ,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৪৮ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
মহামারী করোনাকালেও কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চল নাঙ্গলকোট উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাঙের ছাতার মতো কতিপয় শিক্ষকদের প্রাইভেট ও কোচিং বানিজ্য জমে উঠেছে।
তাদের বাসা-বাড়ী এখন যেনো এক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। স্থানীয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ ব্যাপারে নিরব দর্শক। অথচ সরকার মহামারী করোনা সংক্রমন প্রতিরোধে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে কিন্তু নাঙ্গলকোটে শিক্ষকদের কেউ কেউ এ বিধি নিষেধ মানতে নারাজ।
ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে এক নির্দেশনা জারি করেছেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, নাঙ্গলকোট পৌরশহরসহ এ অঞ্চলের ১৬টি ইউনিয়নে কতিপয় শিক্ষকদের অবৈধ কোচিং বানিজ্যের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবক।
মহামারী করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ-খোলার পাশাপাশি শিক্ষকদের কোচিং বানিজ্যের রোষানলে পড়ে দেউলিয়ার পথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রামীণ শিক্ষা ব্যবস্থা। ২০১২-২০২০ সালে শিক্ষকদের অবৈধ প্রাইভেট কিংবা কোচিং বানিজ্য বন্ধে বর্তমান সরকার একটি বিশেষ নীতিমালা প্রনয়ন করলেও স্থাণীয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নিরব দর্শক। অথচ নীতিমালা বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষের নাকের ডোগায় প্রকাশ্যে চলছে কতিপয় শিক্ষকদের অবৈধ কোচিং বানিজ্য।
চলমান করোনাকালে এবং নানা কারনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট পড়তে বাধ্য হচ্ছে ওইসব শিক্ষকদের কাছে। বিশেষ করে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ, মাদ্রাসা ও কেজি- কিন্ডারগার্ডেনসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কতিপয় শিক্ষকদের এ কোচিং বানিজ্য এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের মতো প্রসার ঘটেছে।
সূত্রগুলো আরও জানায়, এ উপজেলায় সরকারী-বেসরকারী ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত ক্লাসে ইংরেজী, গণিত, আইসিটি, হিসাব বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান বিষয়ে ভালভাবে শিক্ষার্থীদের পড়ান না। এছাড়া অখ্যাত প্রকাশকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে নিম্নমানের বইগুলো পাঠ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে আরেকটি বানিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে। আবার অনেক শিক্ষককে করোনার পূর্বে বিদ্যালয়ে পাঠদানকালীন সময়ে তাদের কাছে প্রাইভেট পড়া ও কোচিং পড়তে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ এবং কেউ কেউ ওই সময়ে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে নিজেদের কোচিং বানিজ্যে সময় দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।
এলাকার অভিভাবকদের একাধিক সূত্র জানায়, স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় নাঙ্গলকোট পৌরশহরসহ ১৬টি ইউনিয়নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেখাপড়া চলছিল দায়সারা ভাবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ম্যানেজিং কমিটিতে অনভিজ্ঞ, দলীয় নেতা-কর্মী ও অশিক্ষিত লোকদের স্থান পাওয়ায় গ্রামীণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো নাজুক করে তুলেছে। যে কারনে চলমান করোনাকালেও শিক্ষকদের বাসা-বাড়ীতে গিয়ে কোচিং-প্রাইভেট পড়া ছাড়া কোন শিক্ষার্থীদের উপায় নেই।
এ সুযোগে শিক্ষকদের কোচিং বানিজ্য দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারনে ওইসব কোচিং বানিজ্যে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১৫/২০দিন পড়া বাবত বিষয়ওয়ারী ৫’শ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত ওই শিক্ষকদের দিতে হয়।
এ অঞ্চলে ছোটবড় প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষকদের প্রাইভেট কিংবা কোচিং ব্যবসা রয়েছে। সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করোনার কারনে বন্ধ রাখলেও এ অঞ্চলের বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। এ ব্যাপারে শিক্ষকদের কাছে জানতে চাইলে তারা নানা অজুহাত দিয়ে বিদ্যালয় অফিস কক্ষ খোলা রাখার কথা শিকার করেন।
এ ব্যাপারে নাঙ্গলকোট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মিনহাজ উদ্দিন জানায়, মহামারী করোনাকালে সরকারি সিদ্ধান্ত মতে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সুযোগ নেই। শিক্ষকদের প্রাইভেট ও কোচিং বানিজ্য চালানোর কোন প্রশ্নই উঠে না। আগামী ২/১ দিনের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ মনিটরিংয়ে বের হবো। প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলাতো দূরের কথা আমরা এ উপজেলার সকল কেজি-কিন্ডারগার্টেন, কওমী মাদ্রাসা ও এফতেদায়ী মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের উদ্যোগ নিচ্ছি। আর সঠিক তথ্য মতে বিদ্যালয় খোলা রাখা প্রমানিত হলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।