রাতে স্কুল ঘর বিক্রি, শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫১ পিএম, ১৫ মার্চ,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৪৩ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিধি লঙ্ঘন করে রাতের আধাঁরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শানপুকুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি মাত্র ১৪ হাজার টাকায় বিক্রির ঘটনায় উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার সেলিনা খাতুন, ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হারুন অর রশিদসহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার (১৪ মার্চ) সকালে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে কুমারখালী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযুক্ত অন্যান্যরা হলেন ওই এলাকার মৃত ইদবার আলী শেখের ছেলে ইয়াছিন আলী বিশ্বাস ও মৃত মোবারক শেখের ছেলে বাচ্চু শেখ।
লিখিত অভিযোগে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম উল্লেখ করেন যে, বিদ্যালয়ে থাকা চারচালা বিশিষ্ট সেমিপাকা ওয়াল ঘর যাতে ইটের পরিমান চার হাজার ৫০০, যার আনুমানিক মূল্য ৩৬ হাজার টাকা, ১১ ব্যান টিন যার মূল্য ৪০ হাজার টাকা, ৩০ টি সিমেন্টের খুটি যার মূল্য ১২ হাজার টাকা, এবং ঘরের ব্যবহৃত কাঠের মূল্য ৩০ হাজার টাকা, ডাব ও বাঁশের রুই এর মূল্য ৩২ হাজার টাকাসহ সর্বমোট আনুমানিক মূল্য দেড় লক্ষ টাকা।
প্রধান শিক্ষক আরো উল্লেখ করেন, বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হারুন অর রশিদ, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সভাপতি ও ম্যানেজিং কমিটিকে অবিহত না করে ৩ নং আসামী বাচ্চু শেখের নিকট গোপনে বিক্রি করেন।
বাচ্চু শেখ গত ৬ মার্চ রাত আনুমানিক ৩ টার দিকে অজ্ঞাতনামা লোকজন সাথে করে বিদ্যালয়ের ঘরটি ভাংচুর করিয়া রাতের আধারে তার বাড়িতে নিয়ে যায়।
পরদিন ৭ মার্চ সকালে স্কুলে এসে ঘর দেখিতে না পেয়ে তাৎক্ষনিক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও অন্যান্যদের অবিহত করলে সবাই তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে আসলে লোকমুখে জানতে পারি যে, বাচ্চু শেখের বাড়িতে ঘরটির ইট, টিন, কাঠ ও বাঁশ আছে।
এরপর বিদ্যালয়ের সভাপতিসহ সাক্ষীগণ নিয়ে বাচ্চু শেখের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে স্কুলের জিনিসপত্র দেখতে পায়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসামী জানায় যে, ১ নং আসামী হারুন অর রশিদের নিকট থেকে ঘরটি ক্রয় করেছে।
বিষয়টি ১ নং আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে বিষয়টি স্বীকার করেন। পরবর্তীতে জানা যায়, ৪ নং আসামী সেলিনা খাতুন অন্যান্য আসামীদের সহযোগীতায় ঘরটি বিক্রয় করেছেন এবং ১ নং আসামী হারুন অর রশিদ জনৈক মোঃ উজ্জল খা'র বিকাশের দোকান থেকে যাহার বিকাশ নং ০১৮৫৩৪৯২৬০০ ও ০১৭১৫৮৩৩৯৫৯ থেকে ৪ নং আসামী সেলিনা খাতুনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যাহার নম্বর ০১৭৫২৭১২৮৭৫ তে সর্বমোট ১৩ হাজার বিকাশের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করেছে।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, আসামীগণ পরস্পর যোগসাজোশ করে সরকারি সম্পদ আত্মাসাৎ করেছে। উক্ত ঘটনার স্বাক্ষীদের সাথে আলাপ আলোচনা করে আসামীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব হয়।
অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, এটিও স্যারের নির্দেশে ১৪ হাজার টাকায় ঘর বিক্রি করে ১৩ হাজারর ৯০০ টাকা এটিও স্যারকে দিয়েছি। বিষয়টি প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি জানে।
নিজের ভুল স্বীকার করে মাপ চেয়ে তিনি আরো বলেন, ঝামেলা হওয়ায় এটিও স্যার পুনরায় টাকা বিকাশে ফেরত দিয়েছে, বর্তমানে টাকা আমার কাছে আছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য মঙ্গলবার (৯ মার্চ) সভাপতির বাড়িতে বসাবসি করেছি। আর এটিও স্যারের সাথে সম্পর্ক ভাল হওয়ায় মাঝেমাঝে টাকা লেনদেন করার কথাও জানান সহকারি শিক্ষক হারুন অর রশিদ।
এ ব্যাপারে বাচ্চু বলেন, সহকারী শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ ও প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলামের উপস্থিতিতে আলোচনা করে আমি এ ভবন ১৪ হাজার টাকায় ক্রয় করি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ৭ই মার্চ সকালে স্কুলে গিয়ে ভবন ভাঙা দেখতে পাই। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সহকারী শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ স্কুলের পুরাতন ভবন বিক্রয় করেছে।
আমার অবর্তমানে তিনি সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাসহ আসামীদের নিয়ে ভবনটি বিক্রি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও চাঁপড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মনোয়ার হোসেন লালন বলেন, স্কুলের পুরাতন ভবন বিক্রয় করতে হলে ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশন ও নিলাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিক্রয় করতে হয়।
অথচ সহকারী শিক্ষক হারুন আমাদেরকে না জানিয়ে রাতের আঁধারে গোপনে এ ভবন বিক্রয় করে টাকা এটিও ম্যাডামকে বিকাশ করেছে। কর্তৃপক্ষের উচিত জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
শানপুকুড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের ভবন বিক্রয়ের বিষয়ে আমি কোনো কিছু জানিনা। সহকারী শিক্ষক আসামীদের যোগসাজশে রাতারাতি এ ভবন বিক্রয় করেছে। সে দোষ স্বীকার করে মাপ চেয়েছে।
অভিযুক্ত উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিনা খাতুন বলেন, পুরাতন ভবন অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগে সহকারী শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ এর বিরুদ্ধে শানপুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও স্কুলের সভাপতি লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করেছি। তবে ঘটনার সাথে আমি জড়িত নয়।
বিক্রিত টাকা বিকাশে গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, সহকারি শিক্ষক হারুন আমার কাছ থেকে জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য টাকা ধার নিয়েছিল, ধার শোধ হিসেবে ১৩ হাজার ৯০০ টাকা বিকাশ করেছিল। তিনি আরো বলেন, ভবন বিক্রির টাকা কিনা আমার জানা নেই, তবে হারুনকে আবার বিকাশেই সেই টাকা ফেরত দিয়েছি।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। ঘটনাটি দুদক মামলার সিডিউলভুক্ত হওয়ায় থানায় জিডি প্রস্তুত করে জেলা সমন্বিত দুর্নীতি দমন কমিশনারের উপ – পরিচালক বরাবর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। জিডি নম্বর ৫৮৫, তাং ১৪/০৩/২০২১।