ভিসির দৌড়ে কলিমউল্লাহর সহযোগীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৪৬ এএম, ১৪ মার্চ,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৩৫ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির অভিযোগে বিতর্কিত হলেও বহাল আছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ও তার দুর্নীতির সহযোগীরা। তাদের কেউ কেউ এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী ভিসি হওয়ার চেষ্টায় আছেন! বিশ্ববিদ্যালয়টির বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গণিতের শিক্ষক মশিউর রহমানসহ অন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, প্রশাসন চালাতে গিয়ে ড. কলিমুল্লাহর নেপথ্যে মদদ দিয়েছেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও প্রোভিসি ড. সরিফা সালোয়া ডিনা। এ ছাড়াও ছিলেন অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. হাসীবুর রশিদসহ আরও কয়েকজন।
জানা গেছে, ভিসি কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের পর তার পাশে নেই এই শিক্ষকরা। এমনকি ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনেও তারা ভিসির সঙ্গে ছিলেন না। কারণ তারাই এখন পরবর্তী ভিসি পদ পেতে মরিয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তে ইতিমধ্যে প্রমাণিত। তার বিরুদ্ধে আরও ১০৮টি প্রশানিক, আর্থিক ও নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়ে ইউজিসি আলাদা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
ভিসি কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে আইন লঙ্ঘন করে নিজের পছন্দের ব্যক্তিতে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ, অবৈধভাবে প্লানিং কমিটি গঠন, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, নিয়ম বহির্ভূতভাবে ক্রয়, অবৈধভাবে চারটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেয়া, যোগ্য শিক্ষক থাকা সত্তে¡ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিনপদ আঁকড়ে রাখা। এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসি। ভিসি কলিমউল্লাহ ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে ইউজিসি।
অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি ড. সরিফা সালোয়া ডিনা পরোক্ষভাবে ভিসি কলিমউল্লাহ ও তার প্রশাসনকে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতিতে সহযোগিতা করে চলেছেন। অনিয়মের ব্যাপারে বারবার তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তিনি নীরব থেকেছেন। মুখে লিয়াজোঁ অফিসে না যাওয়ার কথা বললেও বাস্তবে তিনি সেখানে নিয়মিত সভা সিন্ডিকেট মিটিং করেছেন।
ড. সরিফা সালোয়া ডিনা ভিসির আস্থাভাজন, তাই তার পছন্দের ছাত্রী সিরাজুম মনিরাকে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ ওঠে। নিয়োগ পাওয়া সিরাজুম ক্যাম্পাসে আওয়ামী লীগ সরকার নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের জন্য সমালোচিত। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যু নিয়েও ফেসবুকে ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট করে জেল খেটেছিলেন সিরাজুম মনিরা।
ড. ডিনার স্বামী বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. পরিমল চন্দ্র বর্মণও বিতর্কিত ব্যক্তি। মহান বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকা অবমাননার অন্যতম আসামি তিনি। স্বামীকে বাঁচাতেই নিন্দনীয় এমন ইস্যুতে চুপ ছিলেন তিনি। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনিয়ম-দুর্নীতিতে সবসময় ভিসি কলিমউল্লাহকে সহযোগিতা করলেও সময় বুঝে সরে দাঁড়িয়েছেন ডিনা। জানতে চাইলে প্রোভিসি ড. সরিফা সালোয়া ডিনা বলেন, ‘এসব অভিযোগ অসত্য, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. হাসীবুর রশিদও ভিসির আর্থিক নানা অনিয়মের ফাইলে স্বজ্ঞানে স্বাক্ষর করে সহায়তা করেছেন। ভিসির অনৈতিক কাজে বাধা দেননি বরং ফাইল সই করেছেন।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. হাসীবুর রশিদ বলেন, আমি কখনও ভিসির পক্ষে বা বিপক্ষে ছিলাম না। এখনও নেই। আমার কর্মপরিধির বাইরে যাই না। বড় প্রকল্প নিয়ে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, আমি তার সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ বছর সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ নেই। প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের বাইরে আমার কোনও সম্পৃক্ততাও নেই।
মশিউর রহমান বলেন, ভিসির সঙ্গে দুর্নীতিতে বাধা না দিয়ে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন প্রোভিসি, রেজিস্ট্রার, ট্রেজারার ও অর্থ পরিচালকসহ আরও কয়েকজন। আমরা সবার অন্যায়ের বিচার চাই।