ক্যাম্পাসের বাইরে নিরাপদ নয়, তাই হলে থাকার বিকল্প নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৫৪ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৪৬ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে হলে অবস্থান করছে জাবি শিক্ষার্থীরা। হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হলেও ছাত্ররা ক্যাম্পাস ছাড়তে নারাজ। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা আলাদা। তারা ক্যাম্পাসের বাইরে নিরাপদ নয়, তাই হলে থাকার বিকল্প নেই।’
এ বিষয়ে আন্দোলনকারী উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শারমীন আক্তার সাথী বলেন, ’আমরা শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যকে সাধুবাদ জানাই। তবে জাহাঙ্গীরনগরের পরিস্থিতি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো না। এখানকার অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে, যা মোটেও শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ নয়। এই ভিন্ন পরিস্থিতি বুঝতে হবে। এই প্রেক্ষিতে আমরা হলে অবস্থানের সিদ্ধন্তে এখনো অটল আছি এবং আজকেই পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ছাত্রী হলে শিক্ষার্থীরা উঠবে।’
অন্য এক বিবৃতিতে আন্দোলকারী শিক্ষার্থীরা বলছে, ‘আমরা অবাস্তব এ নির্দেশ মানি না। হল খোলা আছে, খোলা থাকবে, আমরা হল থেকে বের হব না। কোনোভাবে হল থেকে বের করার চেষ্টা করা যাবে না। আগামী ২৪ ঘণ্টার মাঝে গেরুয়ার সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে হবে ও এর ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে। সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করতে হবে। কোনো অজ্ঞাত মামলা করলে চলবে না।
ক্যাম্পাসের কতিপয় ছাত্র শিক্ষক ও কর্মচারী ও কর্মকর্তা এই হামলার ঘটনার সাথে সংযুক্ত আছে বলে বিভিন্ন মাধ্যেম শোনা যাচ্ছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে সত্যতা নিশ্চিত করতে হবে। অজ্ঞাত মামলা তুলে নিয়ে চিহ্নিত ব্যক্তিদের নামে সরাসরি মামলা করতে হবে এক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট সহযোগিতা করব।’
এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, যারা হলে আছেন তাদের বেশির ভাগ গেরুয়া এলাকায় থাকতেন। এই শিক্ষার্থীরা হল ছাড়লে তাদের আবার গেরুয়ায় যেতে হবে। শিক্ষার্থীদের ওপর গ্রামবাসীর হামলার ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও হামলাকারীদের গ্রেফতারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ অবস্থায় গেরুয়ায় আবার যাওয়া নিরাপদ নয়। এ ছাড়া অনেক শিক্ষার্থী এখনো গেরুয়ায় আটকে আছেন। সেখানে শিক্ষার্থীরা যেসব বাসা ও মেসে থাকতেন, সেগুলোর বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। খাবারের হোটেলসহ নিত্যপণ্যের দোকানগুলো বন্ধ হওয়ায় নানা অসুবিধায় আছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, এ রকম অরাজক পরিস্থিতিতে গেরুয়া এলাকায় ফিরে যাওয়া শিক্ষার্থীদের পক্ষে সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত না করা পর্যন্ত হল ত্যাগ করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, হল প্রভোস্টরা শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ না করার ঘোষণা দিলে তারা ফিরে আসেন।
আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের প্রাধ্যক্ষ ও প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের জন্য অনুরোধ করেছি। তারা হল ছাড়তে রাজি হয়নি। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।’
দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে জড়ো হন। সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এই হলের তালা ভেঙ্গে ফেলেন। পরে বঙ্গমাতা হলের আবাসিক ছাত্রীরা হলে উঠে যান।
উল্লেখ্য, ছাত্রদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রোববার রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী অজ্ঞাত ২৫০ জন গেরুয়াবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে জাবি প্রশাসন। এর আগে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ছেলেদের আটটি হলে যান হলের প্রোভোস্টসহ হল প্রশাসন। তারা শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেন।