নোংরা পরিবেশে তৈরি খাবার দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছে ববি ক্যাফেটেরিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৪৭ পিএম, ২২ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২৪ | আপডেট: ০৩:২৬ এএম, ২৮ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে খাবার বিক্রির অভিযোগ্ উঠেছে।
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রথম দিন পদার্পণ করায় আরো একধাপ দাম বাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ করে দিয়েছে ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজার। নোংরা পরিবেশ আর পরিমাণে কম দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে ক্যাফেটেরিয়াটির বিরুদ্ধে।
মূল্য তালিকা অনুযায়ী মাছের দাম ২৭ টাকা, কিন্তু রুইমাছ বিক্রয় করা হচ্ছে ৫০ টাকা এবং পাঙ্গাশ ৪০টাকা। ব্রয়লার মুরগীর দাম দেওয়া আছে ২৭টাকা, বিক্রয় করা হচ্ছে ৪০ টাকা,যার এক টুকরো দিয়ে ভাত খাওয়া সম্ভব নয়।সমুচার দাম ৭টাকা দেওয়া থাকলেও বিক্রয় করা হচ্ছে ১০টাকা।রং চায়ের দাম ৪টাকা হলেও পাওয়া যায় না,পক্ষান্তরে ১৫টাকায় পাওয়া যায় কফি।ফলে বলতে গেলে বাধ্য হয়েই চায়ের বদলে বেশি দামের কফি খেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ১০০টাকা প্লেট মোরাগ পোলাও বিক্রয় করা হলেও পরিমাণে খুবই কম।ভাতের প্লেট বিক্রয় করা হয় ১০টাকা, যেখানে হোটেলে অতিরিক্ত প্লেটের দাম ৫টাকা করে। ক্যাফেটেরিয়াতে ডিমসহ কম দামের খাবারগুলো পাওয়া না গেলেও সবসময়ই থাকে বেশি দামের খাবারগুলো। চার্টে দেওয়া খাবার না রেখে রাখা হয় বার্গার, স্যান্ডউইচসহ দামীয় খাবারগুলো যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য খাওয়া কষ্টকর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ব্যবহৃত কালো, নষ্ট তেল ঢাকনা ছাড়া পড়ে আছে। যা পরবর্তীতে রান্নার কাজে ব্যবহৃত হবে। অনেকদিনের পুরনো ছোলাবুট পড়ে আছে, যার উপর ছত্রাক বাসা বেঁধেছে। ভাজা মাছ, তেল, মসলা সবকিছুই ঢাকনা ছাড়া নোংরা পরিবেশে পড়ে আছে। রান্নাঘর, পরিবেশনের জায়গাও অপরিচ্ছন্ন, স্যাতসাতে এবং নোংরা। ১০ হাজার শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া ১জন বাবুর্চিসহ মাত্র ৪/৫ কর্মচারি দিয়ে চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী তামিম ইকবাল রাজু বলেন, ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের দাম তো বেশি নেয়, তারপর ভাতে যে চাল ব্যবহার করা হয় তা খুবই নিম্নমানের। ভাত কোনোদিন শক্ত আবার কোনোদিন একদম নরম।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষার্থী ওয়াহিদ-উন নবী বলেন, ক্যাফেটেরিয়ার মাছ-মাংসের পিস একেবারে ছোট, যা দিয়ে ভাত খাওয়া যায় না। একই দামে হোটেলে যে খাবার পাওয়া যায় তার মান ক্যাফেটেরিয়ার চেয়ে ভালো, মাছ-মাংসের সাইজও বড়।
শিক্ষার্থীরা জানান, তারা বেশিরভাগ সময়ই ক্যাফেটেরিয়াতে না খেয়ে বাইরের হোটেলে খান। নবাগত শিক্ষার্থীরা সবকিছু চিনে না বা জানে না বলে ক্যাফেটেরিয়ায় খায়।
টিএসসির পরিচ্ছন্নতাকর্মী শিউলি আক্তার বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত এখানে চাকরি করছি। এর আগে যারা ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনা করতেন তারা পরিচ্ছন্নতা কর্মী রাখতেন। কিন্তু বর্তমানে ক্যাফিটেরিয়ায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই তাই পরিবেশ নোংরা থাকা স্বাভাবিক। আমার একার পক্ষে তো সকল কাজ করা সম্ভব না বা ক্যাফেটেরিয়ার যে ময়লা হয় তা আমার পরিষ্কার করার দায়িত্বও না। কথা ছিলো আমাকে একবেলা ক্যাফেটেরিয়াতে খাওয়াবেন, আগে যারা ছিলো তারা খাওয়াতো।কিন্তু বর্তমান ম্যানেজার খাওয়াচ্ছে না।
এসব বিষয় জানতে চাইলে ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজার মোঃ মামুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে ক্যাফেটেরিয়াও বন্ধ থাকে, তাই বাবুর্চিসহ লোকজন চলে যায়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব না, তাই আমি চিন্তা করেছি ক্যাফেটেরিয়া ছেড়ে দেব। মাছের সাইজ একটু ছোট হলে, ২/৩ পিস খেলেই তো হয়।
দিনকাল/এসএস