জন্ম সনদ জালিয়াতি, জড়িত শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৪ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০২:২৮ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
রাজশাহীতে সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির লটারিতে জন্ম সনদ জালিয়াতির কারণে একই শিক্ষার্থীর নাম একাধিকবার আসার ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে জেলা প্রশাসন আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে ভর্তিসংক্রান্ত কমিটির সভায় এই শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করা হয়।
এ ছাড়াও সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, জালিয়াতি করা শিক্ষার্থীরা রাজশাহীর কোনো সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে না এবং ভর্তির সুযোগ পাওয়া সব শিক্ষার্থীর জন্ম সনদ যাচাই করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারি বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) লটারি করে।
এতে কারিগরি সহায়তা দেয় টেলিটক। গত ৬ ডিসেম্বর অনলাইনে লটারিতে ভর্তির আবেদনের শেষ তারিখ ছিল। ১২ ডিসেম্বর লটারিতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এরপর রাজশাহীর সাতটি সরকারি বিদ্যালয়ের মধ্যে চারটির ফলাফলে দেখা যায়, একজন শিক্ষার্থীর নাম একাধিকবার এসেছে। কোনো শিক্ষার্থীর নাম সকালের শিফটেও আছে আবার দিনের শিফটেও আছে।
আবার একজন শিক্ষার্থীর নাম তিনবার পর্যন্ত এসেছে। ভর্তিসংক্রান্ত কমিটি বিষয়টি অনুসন্ধানে জানতে পারে, শিক্ষার্থীদের নাম ফলাফলে একাধিকবার এসেছে। তাদের নাম, বাবা-মায়ের নাম একই থাকলেও জন্ম সনদ নম্বরের কয়েকটি ডিজিট আলাদা। কমিটির পক্ষে বলা হচ্ছে, অভিযুক্তরা একাধিক সনদ নম্বর ব্যবহার করে একাধিকবার আবেদন করেছে। এর জন্য লটারিতে তাদের নাম একাধিকবার এসেছে।
ভর্তি মেধাতালিকায় দেখা যায়, রাজশাহী প্রমথনাথ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীর নাম সকালের শিফটে রয়েছে, দিনের শিফটেও রয়েছে। একবার তার জন্ম নিবন্ধন এসেছে ২০১৪৮১৯৬৬০২৭০১৩৫২। তার বাবার নাম মিলন ভট্টাচার্য ও মায়ের নাম রাখী রানী ভট্টাচার্য। আরেকবার এসেছে, যেখানে সবই ঠিক আছে, নিবন্ধন নম্বর এসেছে ২০১৪৮১৯৬৬০৮১০১৩৫২। দুটি নম্বরের শেষে চারটি ডিজিট একই। শুধু চার ডিজিটের আগের তিনটি ডিজিট পাল্টে দেওয়া হয়েছে। একবার লেখা হয়েছে ২৭০। পরেরবার লেখা হয়েছে ৮১০।
গভ. ল্যাবরেটারি হাই স্কুলের একজন শিক্ষার্থীর বাবার নাম নূরুন্নবী মিয়া ও মায়ের নাম ফেনসি আক্তার। শিশুটির নামসহ তার বাবা-মায়ের নাম দুই জায়গায় একই আছে। শুধু জন্ম সনদ নম্বরটি তিন রকম পাওয়া গেছে। প্রথমবার ২০১৪৮৫১৭৪৪২১১৬১২২। পরেরবার ২০১৪৮৫১৭৬৪৮১১৬১২২। প্রথমবারের সঙ্গে দ্বিতীয়বারের নম্বরের শেষে পাঁচটি ডিজিট একই আছে।
একইভাবে রাজশাহী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ফলাফলে একজন শিক্ষার্থীর জন্ম সনদ পরিবর্তন করে তিনবার ও রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে দুইবার এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ভর্তিসংক্রান্ত কমিটির সভায় এই শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে এক অভিভাবক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাচ্চার ভর্তি নিশ্চিত করার জন্য একাধিকবার আবেদন করেছি। এর আগে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে আরো অনেকে ভর্তি হয়েছে। তাই আমিও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আবেদন করেছি। ’
জানতে চাইলে অভিভাবক মিলন ভট্টাচার্য বলেন, তার বাচ্চার নাম দুইবার এসেছে কি না তিনি জানেন না। তিনি দাবি করেছেন, একবার আবেদন করেছেন।
ভর্তি কমিটির সভাপতি ও রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, ‘জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে এই শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা একাধিক জন্ম সনদ নম্বর ব্যবহার করে একাধিকবার আবেদন করেছিলেন। লটারিতেও তাদের বাচ্চার নাম একাধিকবার এসেছে। ভর্তিসংক্রান্ত কমিটির সভায় তাদের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। তারা কোনো সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন না। এ ছাড়া লটারিতে যারা ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে, তাদের সবার সনদ নম্বর যাচাই করা হবে। জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের ভর্তিও বাতিল করা হবে। ’