চবির হিসাব নিয়ামককে ছাত্রলীগ নেতার মারধর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৫ এএম, ১৪ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:০৭ এএম, ২১ অক্টোবর,সোমবার,২০২৪
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) হিসাব নিয়ামক ফরিদুল আলম চৌধুরীকে মারধর করেছে ছাত্রলীগ নেতারা। গত মঙ্গলবার বেলা দেড়টার সময় নিজ কার্যালয়ে ১০-১২ জনের ছাত্রলীগের একটি দল তার ওপর চড়াও হয়। এ সময় তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দেয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, জোহরের নামাজ শেষে হিসাব নিয়ামক তার চেয়ারে বসা অবস্থায় ছাত্রলীগের নেতারা তার অফিসে প্রবেশ করে তাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে তারা তাকে টেনে-হেঁচড়ে চেয়ার থেকে কক্ষের বাইরে নিয়ে আসে। কয়েকজন সহকর্মী তাকে তাদের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয়। এ সময় তারা তাকে জামায়াত-শিবিরের এজেন্ট, রাজাকার ও দালাল আখ্যায়িত করে বিভিন্ন অকথ্য গালাগালি ও হুমকি দেয়। লোকজন জড়ো হতে থাকলে পূর্বপাশের সিঁড়ি দিয়ে তারা নেমে চলে যায়। প্রাথমিকভাবে তাদের পরিচয় জানা না গেলেও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে জানা যায়।
ঘটনার পরপরই হিসাব নিয়ামক দপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের কাজ বন্ধ করে বারান্দায় জড়ো হন। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে কর্মবিরতি পালন করেন তারা। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার। পরে হিসাব নিয়ামককে নিয়ে ভিসির সাথে বৈঠক করেন তারা। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিকে মারধরকারীরা শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী সিক্সটি নাইনের কর্মী বলে ধারণা করছেন প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, ‘মারধরের ঘটনাটি আমি শুনেছি। আমি অফিসার সমিতির সাথে এ নিয়ে কথা বলেছি। এতে শাখা ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নিয়ামক দপ্তর থেকে জামায়াত-শিবিরকে অর্থায়ন করা হয়। এ বিষয়টা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, হিসাব নিয়ামকের ওপর হামলার ঘটনাটি শুনেই আমরা তার কার্যালয়ে ছুটে যাই। তিনি একজন বয়স্ক ও শ্রদ্ধেয় মানুষ। মারধর গুরুতর না হলেও তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ভিসি মহোদয় বিষয়টিতে অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছেন। তিনি তদন্তপূর্বক এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
তদন্ত কমিটির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘হিসাব নিয়ামককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার বিষয়ে আমরা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। এতে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল মনসুরকে আহবায়ক ও গোপনীয় শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার সৈয়দ ফজলুল করিমকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া ও কেন্দ্রীয় স্টোর শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও অফিসার সমিতির সভাপতি রশিদুল হায়দার। কমিটিকে দ্রুততম সময়ে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’
এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) হিসাব নিয়ামক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফরিদুল আলম চৌধুরীকে মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে চবি অফিসার সমিতি। গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরে মানববন্ধন করে অফিসার সমিতি। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন অফিসার সমিতির সভাপতি রশিদুল হায়দার চৌধুরী জাবেদ, সাধারণ সম্পাদক হামিদ হাসান নোমানী।