আজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০৬ পিএম, ১২ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৪৬ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
আজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। মহামারি করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ দিবসটি অনলাইনে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমান বয়সী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং অর্জন স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় আসতে পারে।
১৯৬৭ সালে ঢাকা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে সাভার এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নতুন স্থান নির্বাচন করা হয়। সাভারের ওপর দিয়ে এশিয়ান হাইওয়ে। এই মহাসড়কের পশ্চিম পাশে নির্ধারণ করা হয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার স্থান। এর পূর্ব পাশে রয়েছে ডেইরি ফার্ম, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, উত্তর-পূর্ব পাশে সাভার সেনানিবাস ও জাতীয় স্মৃতিসৌধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প প্রধান হিসেবে ড. সুরত আলী খানকে নিয়োগ করা হয়। ১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট পূর্ব পাকিস্তান সরকার এক অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে এ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করে 'জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়'। ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন বিশিষ্ট রসায়নবিদ অধ্যাপক ড. মফিজউদ্দিন আহমদ। ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আহসান আনুষ্ঠানিকভাবে 'জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়'-এর উদ্বোধন করেন। তবে এর আগেই ৪ জানুয়ারি অর্থনীতি, ভূগোল, গণিত ও পরিসংখ্যান বিভাগে ক্লাস শুরু হয়। প্রথম ব্যাচে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১৫০ জন। স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট পাস করা হয়। এই অ্যাক্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়'। ৬৯৭.৫৬ একর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৫টি অনুষদের অধীনে ৩৬টি বিভাগ চালু আছে। এছাড়া ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইটি), ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ-জেইউ), বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং ও ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। আবাসিক হল ১৬টি। নির্মাণাধীন রয়েছে ৬টি। ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ১৫ হাজার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
ইংরেজ শাসনামলেই পূর্ববাংলায় একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের দাবি ক্রমেই জোরালো হয়ে ওঠে। ১৯১১ সালের ডিসেম্বর মাসে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষিত হওয়ার পর অখণ্ড ভারতের প্রধান প্রশাসক লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা সফরে আসেন। এ সময় নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহসহ আরও অনেকে পূর্ববাংলার মানুষের জন্য একটা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের দাবি জানান। পূর্ব বাংলার মানুষজনের উপর্যুপরি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ প্রশাসন ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান ও ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। তখন পূর্ববাংলার নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান। ১৯২১ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, কৃষি, প্রকৌশল ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলেও পূর্ব পাকিস্তানের উচ্চশিক্ষার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকার কাছাকাছি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর জেলার সালনায়।
৫০ বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য বা অর্জন স্বল্প পরিসরে এ নিবন্ধে তুলে ধরা সম্ভব নয়। শিক্ষা, গবেষণা, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব দেওয়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা দ্যুতি ছড়িয়েছেন। নতুনত্ব এবং অভিনবত্বে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কীর্তি অনেক।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় তার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের মধ্য দিয়ে আরও সামনের দিকে অগ্রসরমান। এ কথা বলা যায়, সুবর্ণজয়ন্তী প্রাক্কালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য বা অর্জন দীপ্তিময়। আগামীতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তবুদ্ধি এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় দেশ ও জাতি আরও ঋদ্ধ হবে, সে আশা করা যায়।