দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে আহত রাবি শিক্ষার্থী, বিক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৪০ পিএম, ১০ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:১১ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
নামাজ পড়তে ডাকা ও রুমের সামনে উচ্চস্বরে কথা বলা নিয়ে সংঘর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী সাফায়ার নাইম নাফি গুরুতর আহত হয়েছেন।
গতকাল বুধবার (৯ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর ধরমপুর এলাকায় এন আর ছাত্রাবাসে এ ঘটনা ঘটে।
আহত নাইম নাফি পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে। বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৪নং ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন।
এদিকে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে আহত হওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকালে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি প্রথম বিজ্ঞান ভবন থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে ভিসির বাস ভবনের সামনে অবস্থান নেয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগানে প্রশাসনের কাছে তাদের দাবি জানান, 'আমার ভাই আহত কেন? প্রশাসন জবাব চাই', 'WE WANT JUSTICE', 'সন্ত্রাসীদের কালো হাত ভেঙে দাও মুচরে দাও', 'আমার ভাই রক্ত ঝরে, প্রশাসন জবাব চাই?
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান বলেন, 'আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাসের বাইরেও নিরাপদ না। হামলাকারীদের আজকের মধ্যে গ্রেফতার না হলে ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে যাবে। প্রশাসনকে বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুন। আর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে না পারলে রাবিয়ানরা ঘরে বসে থাকবে না।’
সুমন হোসাইন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, 'প্রতিটি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা আজ হুমকির মুখে। ক্যাম্পাসের যেখানে সেখানে চুরি, ছিনতাই বেড়ে গেছে। মেসেও শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নয় সেখানে নিয়মিত চুরি, ছিনতাই হতেই থাকে। ছোট ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য সকল ব্যয় প্রশাসনের গ্রহণ করতে হবে। সেইসাথে দোষীদেরকে যত দ্রুত সম্ভব আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।'
এদিকে আহত নাফিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও ছাত্রাবাস সূত্রে জানা গেছে, এন আর ছাত্রাবাসে থাকতেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে রুমের সামনে উচ্চস্বরে কথা বলা, নামাজে ডাকা নিয়ে আগে থেকে তর্কবিতর্ক হয়েছিল শরিফের। পরে বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ফরিদুল ইসলামের নেতৃত্বে পদার্থ বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিভাগের ১৩-১৪ জন শিক্ষার্থী মীমাংসা করতে এন আর ছাত্রাবাসে যান।
আলোচনার এক পর্যায়ে ছাত্রাবাসটির অন্যন্য বর্ডার ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা মোটামুটি সমাধানের পর্যায়ে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু রুমের মধ্যে স্থান সংকুলান না হওয়াতে ভুক্তভোগী নাফিসহ কয়েকজন ছাত্রাবাসের ফটকে দাঁড়ান। এর মধ্যে কিছু বুঝে উঠার আগেই বহিরাগত ৫-৭ জন এসে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে। এসময় বহিরাগতরা ছুরি দিয়ে আঘাত করতে থাকেন ছাত্রাবাসের ফটকে দাঁড়ানো নাফিসহ শিক্ষার্থীদের উপর।
এসময় তাদের সাথে সংঘর্ষ বেঁধে যায় শিক্ষার্থীদের। পরবর্তীতে আহত নাফিকে রাবি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরবর্তীতে রাজশাহী মেডিক্যালে নিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে তিনি রামেকের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেন, 'আমরা আপাতত আহত শিক্ষার্থীকে (নাফিকে) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। চলাফেরা নিয়ে সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে কথাকাটি থেকে ঘটনার সূত্রপাত। বিষয়টি জানা মাত্রই আমি আর ছাত্র উপদেষ্টা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। ওই শিক্ষার্থীকে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। এখন আহত শিক্ষার্থীর উন্নত চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত আছি।’
এ বিষয়ে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার আলী তুহিন বলেন, ‘আমরা এখনো লিখিত অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কিছু করতে পারবো না।’