রবিতে শিক্ষার্থীদের চুল কাটার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৩২ পিএম, ২৫ অক্টোবর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:১৮ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেয়ার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনকে অভিযুক্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৬ সেপ্টেম্বর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা হলে প্রবেশপথে অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন নিজ হাতে ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন। এদিকে শিক্ষক ফারহানাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্তের দাবিতে আবারও তিনদিন যাবৎ উত্তাল হয়ে উঠেছে রবির ক্যাম্পাস।
গতকাল রবিবার (২৪ অক্টোবর) সকালে সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের বিসিক মোড় এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবন ও কান্দাপাড়া এলাকায় প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে বাইরে অবস্থান নেন তাঁরা।
এ সময় দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রারসহ ৩০ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী একাডেমিক ভবন-১-এ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এতে ৮ ঘণ্টা ধরে একটি ভবনে অবরুদ্ধ ছিলেন ৩০ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। পরে পুলিশের সহযোগীতায় অবরুদ্ধ থেকে মুক্ত হন শিক্ষক কর্মচারীরা।
দুপুরের দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শামীম হোসেন বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাঁকে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে একই বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র আবিদ হাসান নামের আরেক ছাত্র ব্লেড দিয়ে হাত কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে অন্যরা তাঁকে নিবৃত্ত করেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা কোষাধ্যক্ষ আবদুল লতিফ বলেন, ‘রেজিস্ট্রার নিজে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করছি।’
প্রসঙ্গত, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ১৪ শিক্ষার্থীকে জোর করে চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষার্থীরা সব পরীক্ষা বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। ৩০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফারহানাকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
এই ঘটনার তদন্তের জন্য রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌসকে চেয়ারম্যান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটি সরেজমিনে তদন্ত করে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব আলীর কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৬ সেপ্টেম্বর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা হলে প্রবেশপথে অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন নিজ হাতে ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনের বক্তব্য নেয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেয়ে গত শুক্রবার সিন্ডিকেট সভা ডাকা হয়েছিল। সেখানে আইনগত বিষয়গুলো পর্যালোচনার জন্য ১০ কার্যদিবস সময় নিয়ে সভা মুলতবি করা হয়েছে। এছাড়া ২৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একটি তদন্ত দল বিষয়টি তদন্ত করতে ক্যাম্পাসে আসবে। তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এদিকে ৩য় দিনের মতো আবারো ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বসে আছে শিক্ষার্থীরা।