হল খুলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা ও স্মারক দিয়েছে ছাত্রদল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৪৮ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২০ | আপডেট: ০২:৩৬ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার আগে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে আবাসিক হল খুলে শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আজ বুধবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসব দাবি নিয়ে মানববন্ধন করেন তারা।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। এছাড়া দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বরাবর স্মারক দিয়েছে ছাত্রদল।
অন্য দাবিগুলো হলো- পরীক্ষা নেওয়ার আগে শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ দেওয়া, প্রয়োজনে মেকাপ ক্লাসের (ঘাটতি পূরণের বিশেষ ক্লাস) ব্যবস্থা করা, একসঙ্গে দুই সেমিস্টার ফাইনাল না নেওয়া, এক সেমিস্টার শেষ করে পরবর্তী সেমিস্টারের প্রস্তুতির জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়া, যেসব বিভাগের পরীক্ষার রুটিন ঘোষণা করা হয়েছে তা বাতিল করে পুনরায় তারিখ ঘোষণা করা এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য বাসে যাতায়াত নিশ্চিত করা।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত। বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীর জন্য ঢাকায় থাকার জায়গার ব্যবস্থা করা দুরূহ। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য রীতিমত একটি ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পরীক্ষা নেওয়ার আগে এই বিষয়টা চিন্তা করা উচিত ছিল।
এসময় তারা তাদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহ্বান জানান।
উপাচার্য বরাবর ছাত্রদলের স্মারকলিপি
দুপুরে হল খুলে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দ। এসময় সেখানে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমান উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, এই মহামারি পরিস্থিতিতে হল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই সম্মতি লাগবে। বিচ্ছিন্নভাবে আমাদের এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। অনেক জায়গায় পরীক্ষা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই অনার্স ফাইনাল ও মাস্টার্সের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা পিছিয়ে না থাকে।
পরীক্ষা দিতে এলে অনেক শিক্ষার্থীরই আবাসিক সমস্যা হবে স্বীকার করে তিনি বলেন, এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এসে হলে থেকে পড়ালেখা করত। তাদের জন্য ঢাকায় থাকাটা একটু কষ্ট হবে। তবে এই মহামারিতে শিক্ষার্থীদের এই কষ্টের চেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তার বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ১৮ মার্চ থেকে অন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেশনজট রোধে অনলাইনে পাঠদান চালিয়ে গেলেও এতদিন পরীক্ষা নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেশনজট নিরসন ও ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে স্নাতক ফাইনাল ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগ ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে পরীক্ষা নেওয়ার রুটিন প্রকাশ করেছে।
পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তকে শিক্ষার্থীরা স্বাগত জানালেও আবাসিক হল বন্ধ থাকায় ঢাকা এসে কোথায় থেকে পরীক্ষা দেবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা উল্লেখ করে এর আগে অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন আবাসিক খুলে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।