রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে চুল কেটে দিলেন শিক্ষক, আত্মহত্যার চেষ্টা শিক্ষার্থীর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৪৭ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৪৬ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বিসিক বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ ছাত্রের মাথার চুল কাঁচি দিয়ে এক শিক্ষক কেটে দেয়ার অপমান সইতে না পেরে নাজমুল হাসান তুহিন (২০) নামের এক ছাত্র সোমবার রাত ৮টার দিকে ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। সে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি মাগুরা জেলায় বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ছাত্ররা জানায়, এদিন দুপুরে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন ফেসবুকে চুলকাটার বিষয়ে স্ট্যাটাস দেয়ায় তাকে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেয়। এ দিনের পরীক্ষা শেষে সে দ্বারিয়াপুরের শাহ মুখদুম ছাত্রাবাসের ৫ম তলার নিজ কক্ষে দরজা বন্ধ করে মোট ৩৫টি ঘুমের বড়ি এক সাথে গুড়ো করে খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বিষয়টি তার সহপাঠিরা টের পেয়ে তাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। সেখানে ভর্তির পর তার চিকিৎসা চলছে।
এদিকে এ আত্মহত্যার চেষ্টার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এদিন রাত ১১টার দিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে ভিড় করে। এ সময় তারা এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষী ওই শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করে। এ সময় সেখানে উপস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী ও অন্যান্য শিক্ষক কর্মচারি উপস্থিত থেকে তাদেও শান্ত করার চেষ্টা করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৬শে সেপ্টেম্বর দুপুরে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের বিভাগের ইয়ারচেঞ্জ ফাইনাল পরীক্ষায় রাষ্ট্র বিজ্ঞান পরিচিতি বিষয়ে পরীক্ষার জন্য হলে প্রবেশের সময় ওই বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন কাঁচি দিয়ে ১৪ জন পরীক্ষার্থীর মাথার সামনের অংশের বেশ কিছু চুল কেটে দেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন একই বিভাগের সহকারী প্রক্টর রাজিব অধিকারী ও জান্নাতুল ফেরদৌস মুন।
এ সময় তারা এ ঘটনার প্রতিবাদ না করে সেখানে নীরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। ২৭ সেপ্টেম্বর সোমবার দুপুরে ওই বিভাগের বাংলাদেশের ইতিহাস বিষয়ে পরীক্ষা শুরুর আগে লাঞ্ছিত পরীক্ষার্থী ও তাদের সহপাঠিরা এ ঘটনার প্রতিবাদে পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করার জন্য বিসিক বাসস্ট্যান্ড এলাকার শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজে অবস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস-১ এর গেটে জড়ো হয়।
এ সময় ওই শিক্ষক ও তার ভাড়াটিয়া গুন্ডা বাহিনী তাদের পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে ও সবাইকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে সবাইকে পরীক্ষার হলে যেতে বাধ্য করে। এ ঘটনার পর থেকে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা আবারও হুমকি ধামকির আশংকায় আতংকিত হয়ে পড়ে। পরীক্ষা শেষে এ অপমান সইতে না পেরে শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান তুহিন আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তার অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী বলেন, আমরা নাজমুলের সু চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। তার উন্নত চিকিৎসা চলছে। আশা করি সে ভাল হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবে।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মনোয়ার হোসেন সুজন বলেন, তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের সহকারী প্রক্টর জান্নাতুল ফেরদৌস মুন বলেন, এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি না। তাছাড়া বিষয়টি ওই সময়ই মীমাংসা হয়ে গেছে। এটা নিয়ে আর ঘষামাজা করার কিছু নেই। তারপরও কেন আত্মহত্যার চেষ্টা বুঝতে পারলাম না ।
এ বিষয়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন বলেন, এ ধরনের কোন বিষয় আমার জানা নেই। এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি তাও বলছি না। তবে কয়েকদিন আগে কিছু ছাত্র আমার কাছে এসে পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে বলেছিল। আমি এতে রাজি হইনি। হয়তো বা সেই রাগে এ ধরনের অপপ্রচার চালিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অন্য বিভাগের ছাত্ররা মিথ্যা গুজব ছড়াতে ফেসবুকে এ সব দিয়েছে। আমার বিভাগের কোন ছাত্র দেয়নি। এটা একটা গুজব। কিন্তু আমি কখনও কাউকে বকাঝকা করি না। আর নাজমুলের ঘটনাটি অবশ্যই খতিয়ে দেখছি আসলে কি হয়েছে।
এ বিষয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ও ট্রেজারার আব্দুল লতিফ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এই প্রথম শুনলাম। এ ধরণের কোন লিখিত অভিযোগও পাইনি। ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত হওয়া পরীক্ষা গুলি নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য কোন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে না। সরকারের নিয়মের মধ্যেই এটা করা হচ্ছে। এতে সরকারি আদেশ অমান্য হয়নি। কেউ যদি আত্মহত্যার প্ররোচনায় বাধ্য করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।