শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাঁতার কাটছে হাঁস, বাড়ির উঠানে ক্লাস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১১ এএম, ১৩ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৩০ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
রাজবাড়ীর পাংশা পৌর এলাকার ৫ নং ওয়ার্ড। প্রতিষ্ঠানের নাম ডা. আব্দুল কাদের বালিকা দাখিল মাদরাসা। পুরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ ও প্রবেশ পথ পানিতে তলিয়ে গেছে। হাঁটু সমান পানি পার করে যেতে হচ্ছে মাদরাসা ও প্রশাসনিক ভবনে। ভবনের ভেতরেও পানি। প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষসহ পাঁচটি শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেছে পানি। আর ক’দিন বৃষ্টি হলে বাকি ভবনগুলোতেও পানি ঢুকবে। এ নিয়ে দারুণ দুন্ডিন্তায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা কেউ অ্যাসাইনমেন্টের খাতা নিতে কেউবা খাতা জমা দিতে হাঁটু সমান পানি পার করেই যাতায়াত করছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। প্রতিষ্ঠানের ভিতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, মাঠ জুড়ে জন্মেছে ঘাস। মাঠে ও মাদরাসার বারান্দায় জমে থাকা পানির মধ্যে সাঁতার কাটছে হাঁস!
এদিকে বন্যার শুরু থেকে বিদ্যালয়ের চারদিকে থৈ থৈ পানি। বর্তমানেও শ্রেণিকক্ষে তিন ফুটের মতো পানি রয়েছে। পানির কারণে স্কুলে প্রবেশ ও ক্লাস নেয়ার মতো অবস্থা নেই।
আজ রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে সারাদেশে ক্লাস শুরু হয়েছে। তাই টাঙ্গাইলের বাসাইলে শিক্ষার্থীদের স্কুলের পাশেই এক বাড়িতে ক্লাস করতে দেখা গেছে। কিন্তু সেখানেও জায়গা সঙ্কটে গরমে দুর্ভোগ পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে বাসাইল উপজেলার রাশড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সশরীরে ক্লাসে অংশ নিতে পেরে খুব খুশি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হোসনেয়ারা আক্তার জানান, বন্যার শুরু থেকে স্কুলে পানি প্রবেশ করেছে। সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে স্কুলের জমিদাতা নজির হোসেনের বাড়িতে ঘরের মেঝে ও উঠানে ক্লাস নেয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার প্রথম দিনে ৫ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস ছিলো। উপস্থিতিও ছিলো ভাল। স্কুলে প্রথম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ১১০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। দীর্ঘদিন পরে হলেও ক্লাসে সরাসরি অংশ নিতে পেরে শিক্ষার্থীরা খুব খুশি।
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী নিলুফা আক্তার বলেন, অনেক দিন পর ক্লাস করতে পেরে অনেক ভাল লাগছে। তবে আমাদের রঙিন স্কুলে ক্লাস করতে পারলে আরো বেশি ভাল লাগতো। কিন্তু বন্যার কারণে আমাদের স্কুলে অনেক পানি। দীর্ঘদিন পর অনেক বন্ধুরা এক সাথে ক্লাস করতে পেরেছি। একই শ্রেণির নিঝুম আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন বাড়িতে থাকলেও তেমন পড়তে পারিনি। স্কুলে ক্লাস নিলে বন্ধুদের সাথে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পড়াশোনা করা যায়। পড়ালেখাও ভাল হয়।
অন্যদিকে রাজবাড়ী আব্দুল কাদের বালিকা দাখিল মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস জানালেন, প্রতিষ্ঠানটি উঁচু জায়গা হওয়া সত্ত্বেও পানি জমে রয়েছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি কালভার্ট রয়েছে। সেটা ব্যক্তিগত জায়গার ওপর দিয়ে হওয়ার কারণে বন্ধ করে দিয়েছে মালিকপক্ষ। এ কারণেই পানি জমাট বেঁধেছে। সরকারি জায়গার ওপর দিয়ে যদি কোনো কালভার্ট থাকতো তাহলে আমাদের এই দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। ইতিমধ্যে আমাদের পাঁচটি শ্রেণিকক্ষ ও অফিস কক্ষে পানি প্রবেশ করেছে। এখন আমরা পানির মধ্যেই অফিস করছি। শুধু দুর্ভোগ আর ভোগান্তিই নয় রোগ জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কাও রয়েছে।
পাংশা পৌর মেয়র ওয়াজেদ আলী মন্ডল বলেন, মালিকানার জায়গা ছাড়া পানি বের করার কোনো রাস্তা নেই। সরকারি জায়গা দিয়ে পানি বের করতে হলে পাকা সড়ক কেটে কালভার্ট বসিয়ে বের করতে হবে। তবে আমি এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে পানি নিষ্কাশনের দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা করব। টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলের ২ হাজার ৪২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু হয়েছে। এর মধ্যে মধ্যে এক হাজার ৬২৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৭৯৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফুল দিয়ে বরণসহ নানা আয়োজনে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেয়া হয়েছে।