স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৪৫ এএম, ১৩ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১০:০৩ এএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ দেড় বছর অর্থাৎ ৫৪৩ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল খুলছে দেশের সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা। জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর মতে, বাংলাদেশের প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী মহামারির এ সময় শ্রেণিকক্ষের বাইরে ছিল। শ্রেণিকক্ষে গাদাগাদি করে ক্লাস করায় শিশুরা করোনায় আক্রান্ত হতে পারে এমন আশঙ্কার জায়গা থেকে দীর্ঘ বিরতির পরে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আজ রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের পদচারণায় প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠে শিক্ষাঙ্গন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্রছাত্রীদের ভেতর দেখা দিয়েছে উৎসুক ও উচ্ছ্বাস।
করোনার কারণে কেউ হয়তো গ্রামে ফিরে গিয়েছিল। কারো আবার মোবাইল নষ্ট। এরপরও অনলাইনে কথা হয়েছে। তবে দীর্ঘ এ সময়ে প্রিয় বন্ধুটির সঙ্গে খুনসুটি আর না বলা গল্পে শিক্ষার্থীদের মনে জমেছিল কথার পাহাড়। তাই ৫৪৩ দিন পর এটি শুধু স্কুলে ফেরা নয়, এটি ছিল প্রিয় বন্ধুর কাছে এসে হাতটি ধরা। গল্পে গল্পে হারিয়ে যাওয়া। আর বিদ্যাপীঠের জ্ঞানের পরশে আন্দোলিত হওয়া। দীর্ঘ দেড় বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পা রেখেই আনন্দ-উচ্ছ্বাসে এভাবেই হারিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতেই তাদের সবারই চোখে মুখে ছিল খুশির ঝিলিক। রাজধানীর ইস্পাহানি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারিয়া আহমেদ বলেন, অনেকদিন পর স্কুলে আসলাম, শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা আর গল্প জমেছে। খুবই ভাল লাগছে। একই কথা বলেন ইস্পাহানি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিতালি রায়। তিনি বলেন, প্রায় ২ বছর পর স্কুলে আসলাম। সব কিছু কেমন যেন নতুনের মতো লাগছে। ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জানান, আজ আমি সত্যিই খুব আনন্দিত স্কুলে আসতে পেরে। আমার খুব ভাল লাগছে। আজিমপুর গভর্নমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী সুরাইয়া বলেন, সত্যি কথা বলতে আজকের দিনটি সত্যিই মনে রাখার মত। সবচেয়ে মজা লেগেছে স্কুলে বরণ করার বিষয়টি।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তথ্যে প্রতিভাত হওয়া যায়, দেশের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করছে। এ বিষয়ে শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশাসন কড়া নজরদারি রাখতে দেখা যায়। অবশ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস থাকলেও কোনো কোনো অভিভাবকের মধ্যে ভর করেছে শঙ্কা ও আতঙ্ক। কারণ মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার বৃদ্ধির ফলে, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল, যা গতকাল সব দিক বিবেচনা করে খুলে দেওয়া হয়। তবে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তুলনামূলক কমলেও থেমে নেই।
দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাস পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলাতে সেখানে শিক্ষার্থীদের উদ্দীপনা চোখে পড়ার মতো। তবে আজ বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে অল্প সময়ের জন্য ক্লাস নেওয়া হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে শ্রেণি ও বর্ষ হিসেবে হচ্ছে। এদিকে অনেক শিক্ষার্থী নতুন ভর্তি হয়েছে, তাদের জন্য আজই স্কুল-কলেজের প্রথম দিন।
রাজধানীর ধানমন্ডির পিলখানায় অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ অঙ্গনে দেখা গেছে প্রাণোচ্ছল পরিবেশ এবং শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস। একই অবস্থা দেখে গেছে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, মণিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, মতিঝিল গভর্নমেন্ট বয়েজ হাই স্কুলসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজে।
শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধাররা জানিয়েছেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য যে নির্দেশনা দিয়েছিল। সে আলোকই প্রস্তুত করা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
এদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রাঙ্গণও প্রাণ-চঞ্চলতায় ভরে উঠতে দেখা গেছে। ১২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার পর সেগুলো কীভাবে চলবে, সে বিষয়ে গত শুক্রবার ১৬ দফা নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। যেগুলোর আলোকপাতেই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত হওয়ার পর ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর সংক্রমণ পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি না হওয়ায় দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়।