সবকিছু খুললেও বন্ধই থাকছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৫২ এএম, ১০ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৪৮ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
অবশেষে কাল বুধবার থেকে খুলছে সবকিছু। তবে এবারো বন্ধই থাকছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের প্রতিরোধে সরকারের আরোপিত লকডাউন বা বিধিনিষেধ উঠে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে খুলে দেয়া হচ্ছে সবকিছু।
গতকাল রবিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধই থাকছে সব ধরনের স্কুল-কলেজ।
এদিকে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, বেসরকারি স্কুল কলেজ ও কিন্ডারগার্টেন পরিচালক/ মালিকদের দাবি স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি সবকিছু খুলে দেয়া হয় তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেয়া যেতে পারে। অন্যথায় দেশের চার কোটি শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে আরো অনিশ্চতয়তার মধ্যে পড়বে। এর আগে একই দাবিতে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে। কিন্ডারগার্টেন মালিকরাও সরকারের কাছে একাধিকবার এ বিষয়ে লিখিতভাবে এবং সংবাদ সম্মেলন করেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। অবশ্য শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠান মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে গত শনিবার শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল বলেছেন, আমরা আরো কিছু দিন সময় নিতে চাই। বিশেষ করে তিনি আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি শেষে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন। উপমন্ত্রী তার বক্তব্যে চলমান ছুটি শেষে অর্থাৎ আগামী মাসের শুরুতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যায় কি না তখনকার করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নেয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই ছুটি আছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত হলো, আবাসিক হলে থাকা শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনা ভাইরাসের টিকা দেয়ার পর শ্রেণিকক্ষে ক্লাস শুরু করা হবে। শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য হলো বর্তমানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া শুরু হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি এর আগে কয়েকবারই বলেছেন শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনার পরই খুলে দেয়া হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রস্তুতকৃত তালিকা অনুযায়ী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের এখন টিকা দেয়া শুরু হয়েছে, সে কারণে চলমান ছুটির পর তাদেরকে আবাসিক হলে এবং ক্লাসেও ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া হতে পারে। শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৫ হাজার, চিকিৎসাশিক্ষার পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুই হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর প্রায় ২৯ লাখ শিক্ষার্থী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীকে শিগগিরই টিকা দেয়া শুরু হবে। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি প্রাইভেট/ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য টিকা দেয়া শুরু হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। একই তালিকা ইউজিসিতেও পাঠানো হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না সিদ্ধান্ত হয়নি। সেটা শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানাবে। ওনারা এটা নিয়ে আলোচনা করছে কীভাবে এটা করা যায়। আগে তো ভ্যাকসিনেশন তারা জোরদার করছে। যাতে ছাত্রদেরও ভ্যাকসিন দিয়ে দেয়া যায়। তারপর দেখা যাক। সেটা ওনারা আপনাদের ব্রিফ করবে। ভ্যাকসিনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী সেদিন বৈঠক শেষে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। হেলথ মিনিস্ট্রি এ বিষয়ে আপনাদের ব্রিফ করবে। এটা আজকের মিটিংয়ে আলোচনা হয়নি। বিধিনিষেধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিনোদনকেন্দ্র এবং গ্যাদারিংয়ের পারমিশন দেয়া হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। অর্ধেক গণপরিবহন চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে সাজেশন দেয়া হয়েছে অন্তত কিছুদিন আপনারা এটা করে দেন। আমরা জেলা পর্যায়ে ডিসি, এসপি, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বসে নিজেরা ঠিক করে দেব যতগুলো বাস আছে তার অর্ধেক গতকাল চলবে, পরদিন বাকি অর্ধেক চলবে।
তিনি বলেন, এটা মেইনলি আন্তঃজেলা বাসের জন্য। বাইরে থেকে কম সংখ্যক বাস যাতে আসে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, শ্রমিক ইউনিয়নের মালিক-শ্রমিক যারা আছেন তারা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। তারা একটা পদ্ধতি বের করবে। বেইজিংয়ে আমি দেখেছি এমন। অর্ধেক বাস চলার ফলে আরও বেশি সমস্যা তৈরি হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একসঙ্গে বেশি গাড়ি ঢাকা বা চট্টগ্রামের দিকে যেন না ঢোকে। এটা লোকাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিদ্ধান্ত নেবে। সিটির ক্ষেত্রেও মেট্রোপলিটন পুলিশ ও মালিক সমিতি সিদ্ধান্ত নেবে। কোনো কিছু ভায়োলেশন হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। সবকিছু আমরা লোকাল অ্যামিনিস্ট্রেশনের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।