‘পরীক্ষা না নিলে অনেক ক্ষতি’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২১ এএম, ১৬ জুন,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৫৮ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত পরশু প্রেসক্লাবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, এক বছর পরীক্ষা না দিলে জীবনের এমন কোনো বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে না। এই বক্তব্য নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং ঢাবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুনের সঙ্গে। তারা সবাই পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন এবং পরীক্ষা নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছেন।
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পরীক্ষা না নিতে পারলে দুই ধরনের ক্ষতি হবে। প্রথমটি হলো শিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষতি হবে। এক বছর শূন্য পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলে যাবে। এটি শিক্ষার জন্য বড় ক্ষতি। দ্বিতীয়টি হলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়, পরীক্ষা দিয়ে ফলাফল পেয়ে পরের ক্লাসে ওঠার জন্য অপেক্ষা করে। একটা প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটার ফলে শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক ক্ষতি হচ্ছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠাটা আগামীতে অনেক কঠিন হবে।
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়ার দরকার ছিল। কিন্তু আমাদের দেশে অন্যান্য খাতকে যেমন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষা খাতকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। পরীক্ষা নেয়ার জন্য সবার আগে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এর জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান করতে হবে। কিন্তু টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে এক ধরনের উদাসীনতা দেখা গেছে, তিনি আরও বলেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষা নিতে হবে। বরং পরীক্ষা না নেয়াটাই বিপজ্জনক। তবে এই পরিস্থিতিতে যেহেতু পরীক্ষা নেয়া যাচ্ছে না, তাই বিকল্প পরিস্থিতি ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, যেসব বোর্ডে সংক্রমণ হার কম সেই বোর্ডগুলোতে আগে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। আগে যে কেন্দ্রে ৪০০ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়া হতো, সেই সংখ্যাটি ১০০-তে নামিয়ে এনে পাশাপাশি কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেয়ার জন্য অতিরিক্ত খরচ হবে। এর জন্য এই খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, শিক্ষার দায়িত্বে থাকা একজন মন্ত্রী এমন কথা বলতে পারেন না। তিনি লাখো শিক্ষার্থীর জীবন এত সস্তা মনে করতে পারেন না। পরীক্ষা না নেয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের করোনার যে পরিস্থিতি, এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের কোনো দেশ স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখত না। শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে নেই। তারা ঘোরাফেরা করছে, বাজারে যাচ্ছে, ক্যাফেতে গিয়ে আড্ডাও দিচ্ছে। কম সময়ে কম সিলেবাসে বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেয়ার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, বিভিন্ন বিভাগ ভেদে বিশেষ বিশেষ বিষয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। বাকি বিষয়গুলোর ওপর স্কুল বা কলেজে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। যেখানে শিক্ষকদের পাশাপাশি উপজেলার শিক্ষা অফিসার বা বোর্ডের কোনো সদস্য থাকতে পারে। সেই রেজাল্ট বোর্ডের পরীক্ষা নেয়া বিষয়গুলোর সঙ্গে যোগ করে চূড়ান্ত ফলাফল দেয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, পরীক্ষা না নিলে অনেক ক্ষতি হবে। কোনো না কোনোভাবে পরীক্ষা নিতে হবে। স্কুল-কলেজ ছাড়া সবকিছুই স্বাভাবিক। সুতরাং, পরীক্ষা না নেয়ার কোনো মানে হয় না।