ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:৫২ এএম, ২২ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২০ | আপডেট: ০৭:০৪ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বাজারে এখন পাওয়া যাচ্ছে অদ্ভুত দর্শন লাল রঙা ড্রাগন ফল। সুস্বাদু এই ফল অল্প সময়েই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আমাদের দেশে। অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে এই ফলের চাষ করছেন। আবার কেউ কেউ ছাদ বা উঠোনের বাগানে ড্রাগন ফল লাগাচ্ছেন শখ করে। নানারকম খাদ্যগুণ ও অ্যান্টি অক্সিড্যান্টে ভরপুর ড্রাগন ফলকে বলা হয় সুপার ফুড। টকটকে লাল রঙের এই ফলের ভেতরে ছোট ছোট কালো বিচি এর স্বাদে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। আসুন দেখে নেই ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ।
১. পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ
অত্যন্ত কম ক্যালরিসম্পন্ন (খাদ্যশক্তি) এই ফলটি নানারকম ও ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর। এক কাপ (২২৭ গ্রাম) পরিমাণ ড্রাগন ফলে যা যা পাবেন-
ক্যালরি: ১৩৬
প্রোটিন: ৩ গ্রাম
চর্বি: ০
কার্বোহাইড্রেট: ২৯ গ্রাম
খাদ্যআঁশ: ৭ গ্রাম
আয়রন: প্রতিদিনের চাহিদার ৮ শতাংশ
ম্যাগনেশিয়াম: প্রতিদিনের চাহিদার ১৮ শতাংশ
ভিটামিন সি: প্রতিদিনের চাহিদার ৯ শতাংশ
ভিটামিন ই: প্রতিদিনের চাহিদার ৪ শতাংশ
এছাড়াও এতে রয়েছে পলিফেনল, ক্যারোটেনয়েড ও বেটাসিয়ানিন।
মূল কথা হল ড্রাগন ফলে ক্যালরি অত্যন্ত কম হলেও নানারকম ভিটামিন ও মিনারেল থাকায় এটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। ক্যালরি কম থাকায় এটি ওজন নিয়ন্ত্রণেও উপযোগী।
২. দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা
ভিটামিন সি, বেটা ক্যারোটিন, লাইকোপেন ও বেটালেইন সমৃদ্ধ ড্রাগন ফল নানারকম ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে বলে ধারণা করা হয়। এদিকে এটি ফ্রি র্যাডিক্যাল তৈরিতেও বাঁধা দেয় বলে মনে করা হয়। ফ্রি র্যাডিক্যাল হল একধনের অস্থির অনু যা কোষের ক্ষতি করে ও নানারকম দীর্ঘস্থায়ী রোগ ও প্রদাহ সৃষ্টি করে। এর থেকে মুক্তির জন্য অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। আর সেই চাহিদা পূরণেই ড্রাগন ফলের জুড়ি নাই। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার হৃদরোগ, ক্যানসার, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
৩. খাদ্যআঁশে সমৃদ্ধ
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় খাদ্যআঁশ থাকা অত্যন্ত জরুরি। এটি হজমে সাহায্য করার পাশাপাশি হৃদরোগ ও কোলন প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে। ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্যও খাদ্যআঁশ প্রয়োজন। কম ক্যালরিসম্পন্ন ড্রাগনফল হতে পারে খাদ্যআঁশের দারুণ আধার। তবে উচ্চমাত্রার ফাইবার বাঁ খাদ্যআঁশ গ্রহণে কোন বাঁধা থাকলে পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনেই তবে খান। সেই সঙ্গে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে ভুলবেন না।
৪. অন্ত্র সুস্থ রাখে
আমাদের গাট বাঁ অন্ত্র যাকে আমরা নড়িভুড়ি বলে জানি। এর মধ্যে অন্তত কয়েক কোটি নানারকম মাইক্রোঅর্গানিজম আছে। সেই সঙ্গে আছে চারশরও বেশি প্রাজাতির ব্যাকটেরিয়া। অনেক গবেষকেরই ধারণা, এইসব মাইক্রোঅর্গানিজম আমাদের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব রাখে। ড্রাগনফলে থাকা প্রিবায়োটিক আমাদের অন্ত্রে উপকারি ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে সাহায্য করে। আমাদের অন্ত্র সবধরনের খাদ্যআঁশ ভাঙতে সক্ষম নয়। তখন উপকারি ব্যাকটেরিয়া সেই কাজে এগিয়ে আসে। খাদ্যআঁশ ভাঙলেই তবে আমরা খাবার থেকে শক্তি ও পুষ্টি উপাদান পাই।
৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
নানারকম রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শরীরের নিজস্ব ক্ষমতার নামই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ধরা হয় ড্রাগনফলের ভিটামিন সি ও ক্যারোটেনইড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি রক্তের শ্বেতকনিকার ক্ষতি রোধ করে। এই সাদা রক্তকনিকাই জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
৬. আয়রনের ঘাটতি কমায়
সারা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহে সাহায্য করে আয়রন। এছাড়া এটি খাবার ভেঙ্গে শক্তিতে রূপান্তরিত করতেও ভূমিকা রাখে। ড্রাগনফলে থাকা পর্যাপ্ত আয়রন আমাদের শরীরের আয়রনের চাহিদা মেটায়।
৭. ম্যাগনেশিয়ামের চাহিদা মেটায়
অনেক ফলের তুলনায় এতে অনেক বেশি ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে। আমাদের শরীরের কোষগুলোতে ম্যাগনেশিয়াম থাকে যা শরীরের মধ্যে অন্তত ৬০০ ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নেয়। এটি খাবার ভেঙে শক্তি উৎপাদন, পেশী সংকোচন ও হাড়ের গঠনে ভূমিকা রাখে। সেই সঙ্গে ডিএনএ গঠনেও সাহায্য করে। হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুকিও কমায় ম্যাগনেশিয়াম।