ভালো ঘুমের কিছু নির্দেশনা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:৪৮ এএম, ৪ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৫৪ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ঘুমের এই সমস্যা আমাদের অনেকের। এর সমাধান করার চেষ্টা করে আমরা অনেকেই ব্যর্থ হয়ে থাকি। রাতের প্রথম ভাগে ঘুমাতে চাই কিন্তু ঘুম যেন আমাদের সঙ্গে আড়ি করে বসে আছে যে আমি রাত ২টার আগে তোমাদের চোখে ধরা দিব না। দেরিতে ঘুমানোর কুফল আমরা অনেকেই হাড়ে হাড়ে টের পাই কিন্তু কোনোভাবেই ঘুমকে বসে আনতে পারি না।
আপনি হয়তো অবাক হবেন যে, প্রায় প্রতিটি মানুষ কখনও না কখনো ঘুমের সমস্যায় ভুগেন! অর্থাৎ ঘুম ভাল হয় এমন মানুষও গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবে না যে, সারাজীবনই তার ভাল ঘুম হবে।
আবার ঘুমের সমস্যা আছে, এমন মানুষের সারাজীবন মন্দ ঘুম হবে তাও নয়। ঘুম ঠিক থাকলে আমাদের মন সতেজ থাকে এবং আমাদের কর্মদক্ষতা বাড়ে।
আমাদের শরীরের মেলাটোনিন নামক একটি হরমোন আছে, যা আমাদের ঘুমের সঙ্গে জড়িত। সাধারণত আলোর উপস্থিতিতে মেলাটোনিনের ক্ষরণ কমে যায়। কেউ যদি রাতে না ঘুমিয়ে দিনের আলোতে ঘুমাতে যান তাহলে তাকে মেলাটোনিনের অনুপস্থিতিতে ঘুমাতে হবে, যা তাকে ঘুমের গভীর স্তরে যেতে বাধা দেবে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, পর্দার আলোর কারণে শরীরে ঘুমের জন্য দায়ী হরমোন মেলাটোনিনের নিঃসরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আলো যত বেশি উজ্জ্বল হয়, মেলাটোনিনের উৎপাদন ততটাই কমে। ওই গবেষণার জ্যেষ্ঠ গবেষক, মনোরোগবিদ্যা ও মনুষ্য আচরণবিদ্যার অধ্যাপক মেরি সারস্কাডন বলেন, ‘রাতে সামান্য আলো যেমন : স্ক্রিনের আলো ঘুমের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলার জন্য যথেষ্ট।’
ভাল ঘুমের জন্য আপনাকে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলা জরুরি। এই নিয়ম-কানুন মেনে চললে আপনার ঘুমের সমস্যা ধীরে ধীরে কমে যাবে। যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তারা কয়েকটি ধাপে নিয়ম মেনে চলতে পারেন।
ক) দিনের কাজ
১। কোনোভাবেই দিনের আলোতে ঘুমাতে যাবেন না। আর দিনে ঘুমালে আপনার ঘুমের চাহিদা কিছুটা কমে যায়, ফলে রাতে ঘুম আসতে দেরি হতে পারে।
২। বিকেলের পর আর চা বা কফি পান করবেন না। এগুলোতে এমন উপাদান আছে যা রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
৩। দিনে আধঘন্টা বা এক ঘন্টা ব্যায়াম রাতে আপনাকে ভালো ঘুম এনে দেবে।
খ) রাতের কাজ
১। রাতে ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন এবং কমপক্ষে এক ঘন্টা আগে আপনার ডিনার শেষ করুন।
২। ঘুমানোর এক ঘন্টা আগে নিজেকে যে কোনো স্ক্রিন থেকে বিরত রাখুন।
৩। নিজের সঙ্গে কথা বলুন যে, একটু পর আমি ঘুমাতে যাব/এখন আমি ঘুমাতে যাচ্ছি। এটা আপনার ব্রেইনকে ঘুমের জন্য পজিটিভ মেসেজ দেবে ও ঘুমের জন্য রেডি করবে।
৪। ঘুমানোর আগে এক গ্লাস হালকা গরম দুধ খেতে পারেন। ঘুমের জন্য এটা ভাল।
৫। এমনভাবে টাইম ম্যানেজমেন্ট করবেন যাতে আপনার সব কাজ ঘুমাতে যাওয়ার এক ঘন্টা আগে শেষ হয়।
গ) সাধারণ কাজ
১। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাবেন এবং একই সময় ঘুম থেকে উঠবেন। দৃঢ়ভাবে আপনি এই নিয়মটা অনুসরণ করুন।
২। ঘুম ছাড়া কখনই অন্য কাজে আপনার বিছানা ব্যবহার করবেন না। বিছানায় শুয়ে কোনো এক্সসাইটিং মুভি বা ভিডিও দেখবেন না।
৩। অন্ধকার এবং শব্দমুক্ত রুমে সহনীয় তাপমাত্রা আপনি ঘুমাতে যেতে পারেন।
৪। আপনার পরবর্তী কাজগুলো খাতায় নোট করে রাখুন। তাহলে ঘুমানোর সময় সেগুলো নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে হবে না।
৫। যদি কোনো চিন্তা বারবার মনে আসে তাহলে তা খাতায় নোট করে রাখবেন।
৬। অন্যকে ক্ষমা করুন- বলুন যে তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম নিজে ভাল থাকবো তাই। কারও উপর রাগ/কোনো নেতিবাচক আবেগ নিয়ে ঘুমাতে গেলে তা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
৭। ৭-৮ ঘন্টা ঘুমাতে পারেন। ঘুম না এলেও এর বেশি সময় বিছানায় শুয়ে থাকবেন না।
৯। ঘুমের অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য উঠেপড়ে এর পিছে লাগাবেন না। ১০-১৫ দিন বা তার কিছু বেশি দিন এর জন্য টাইম দিন।
ঘ) ঘুমের সময়
১। কখনই ভাববেন না যে কেবল রাত ১১টা (অন্য সময় হতে পারে), এখন তো আমার ঘুম আসবে না/সম্ভবত আমি আজ রাতে ঘুমাতে পারব না/আমার তো ঘুমের সমস্যা আছে ইত্যাদি। এই চিন্তাগুলো আপনার ঘুম নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। তাই এই চিন্তাগুলো এড়িয়ে চলুন।
২। কখনও ঘড়ি পরীক্ষা করবেন না, কোনোভাবেই না।
৩। নিজের সঙ্গে কথা বলুন এটি আমার বিশ্রামের সময় তাই এখন আমি বিশ্রাম নিচ্ছি। ঘুম এলে আসবে আর না এলে না আসবে আমি আমার বিশ্রামের সময় বিশ্রাম করছি।
৪। প্রগ্রেসিভ মাস্কুলার রিলাক্সেশন (চগজ) ঘুমের জন্য ভাল একটা ব্যায়াম হতে পারে।
৫। বিছানায় শোয়ার পর ডিপ ব্রিথিং-এর মাধ্যমে আপনার শরীরকে শিথিল করতে পারেন। এর মাধ্যমে বেশি অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত যখন আপনার ব্রেইনে প্রবেশ করবে তখন তা আপনার ব্যস্ত ব্রেইনকে রিলাক্স করবে, ফলে ভাল ঘুম হবে। রাতে এটি করে ঘুমাতে যেতে পারেন। ইউটিউব থেকে এর ভিডিও দেখে নিতে পারেন।
পরিশেষে বলতে চাই- নিয়মিত ব্যায়াম, পরিমিত খাদ্যাভ্যাস আর পর্যাপ্ত ঘুম- এই তিনে ভাল থাকে দেহ ভাল থাকে মন।