না'গঞ্জে জামিন না দেওয়ায় প্রকাশ্য ম্যাজিস্ট্রেটকে দেখে নেওয়ার হুমকি আ’লীগ নেতার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৫০ পিএম, ৩০ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:১১ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ফটো সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নিজের এক মক্কেলকে জামিন না দেওয়ায় নারায়ণগঞ্জের একজন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রকাশ্য আদালতে দেখে নেওয়ার এবং বদলী করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন আওয়ামীলীগ নেতা।
গতকাল সোমবার দুপুরে জেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের আদালতে তাকে উদ্দেশ্য করে এ হুমকি প্রদান করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা। প্রকাশ্য আদালতে এভাবে হুমকি দেওয়ায় ওই ম্যজিস্ট্রেট বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। বিষয়টি তিনি নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা ফারহানাকে জানালে তিনি বিষয়টি জেলা ও দায়রা জজ আনিসুর রহমানকে অবহিত করেন।
গত ২৩ মার্চ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের সামনে নাসিকের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফি উদ্দিন প্রধানের নেতৃত্বে একটি জমি দখল চেষ্টার সময় ওই ঘটনার ছবি তোলেন ফটো সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান প্রীতম। একারণে কাউন্সিলর শফি প্রধান, তার সহযোগি হারুন অর রশিদ এবং বজলুর রহমান রিপন ওরফে হাজি রিপন প্রীতমকে বেধড়ক মারধর করে এবং সঙ্গে থাকা ক্যামেরা, মোবাইল ফোন ও টাকাসহ মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। ঘটনার পরদিন এ তিনজনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করে সাংবাদিক প্রীতম। নাসিক কাউন্সিলর শফি উদ্দিন প্রধান নারাযণগঞ্জ ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং তার সহযোগি হারুন অর রশিদ একই কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
এদিকে গত সোমবার কাউন্সিলর শফি উদ্দিন প্রধান ও তার সহযোগি হারুন অর রশিদ আগাম জামিন নিতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তাদের আইনজীবী ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট খোকন সাহা। তাকে সহযোগিতা করেন, বারের বর্তমান সভাপতি মোহসীন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমানসহ ১৫-২০ জন আইনজীবী।
শুনানী শেষে নাসিক কাউন্সিলর শফি উদ্দিন প্রধানের জামিন মঞ্জুর এবং তার সহযোগি হারুন অর রশিদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট। কিন্তু তাতে আপত্তি করেন আওয়ামীলীগ নেতা অ্যাডভোকেট খোকন সাহা। ওই সময় তিনি জামিন নামঞ্জুর করা হারুন অর রশিদের জামিন আবেদন চেক ব্যাক (জামিন আবেদন ফেরৎ) চান। ওই সময় মাজিস্ট্রেট বলেন, আবেদন চেক ব্যাক করতে হলে দু’জনেরটাই করতে হবে। একজনেরটা করা যাবে না। কারণ কোর্ট একটা আদেশ দিয়েছেন। ম্যাজিস্ট্রেটের এ বক্তব্যের পর খোকন সাহা আরও ক্ষেপে যান। তিনি ম্যাজিস্ট্রেটকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি চেনেন আমাকে?। আপনাকে দেখে নেবো, আপনি কিভাবে নারায়ণগঞ্জে চাকুরি করেন। আপনাকে বদলী করিয়ে এ কোর্টে আসবো, এর আগে নয়। প্রকাশ্য আদালতে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে এ ধরণের হুমকি দেওয়ায় আদালতে উপস্থিত অন্যান্য আইনজীবী এবং কোর্ট পুলিশের সদস্যরা হতবাক হয়ে যান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জের একাধীক আইনজীবী ও কোর্ট পুলিশের সদস্যরা।
এদিকে এ ঘটনার পর ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলম ঘটনাটি চিফ জুডিশিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা ফারহানাকে অবহিত করলে তিনি ঘটনাটি জেলা ও দায়রা জজ আনিসুর রহমানকে অবহিত করে ম্যাজিস্ট্রেটদের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অ্যাডভোকেট খোকন সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি সোমবার আমার দুই মক্কেলের আগাম জামিনের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন আবেদন করি। ম্যাজিস্ট্রেট একজনের জামিন মঞ্জুর করলেও অপর জনের নামঞ্জুর করেন। ওই সময় আমি আমার দুই মক্কেলের জামিন আবেদন চেক ব্যাক চাই। আমি কাউকে কোন হুমকি দেইনি। ঘটনার সময় মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপুও কোর্টে উপস্থিত ছিলেন বলে খোকন সাহা জানান।
জানতে চাইলে বাদি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু বলেন, শুনানী শেষে আদালত একজনের জামিন মঞ্জুর এবং অপর জনের নামঞ্জুর করেন। আমি ম্যাজিস্ট্রেটের এই আদেশ শুনে আদালত থেকে বেরিয়ে যাই অন্য একটি আদালতে মামলা থাকার কারণে। এরপর কি হয়েছে আমি তা জানি না।