শরীয়তপুরে বহুল আলোচিত আ.লীগ নেতা ও তার ভাই হত্যায় ৬ জনের ফাঁসি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৪ এএম, ২২ মার্চ,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৫৩ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
শরীয়তপুরের বহুল আলোচিত জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও জজকোর্টের সাবেক পিপি হাবিবুর রহমান এবং তার ভাই যুবলীগ নেতা মনির হোসেন মুন্সি হত্যা মামলায় ছয়জনের মৃত্যুদন্ড ও চারজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।
আজ রবিবার দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. শওকত হোসেইন হত্যাকান্ডের ২০ বছর পর এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় তিন আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অন্যরা পলাতক রয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মির্জা হযরত আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, মামলার এজাহার ও বাদীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ (পালং-জাজিরা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও জাজিরা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন কেএম হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গজেব। তখন আওরঙ্গের পক্ষে অবস্থান নেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ। ২০০১ সালে ১ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জাজিরা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সংঘর্ষের কারণে কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হয়। স্থগিত হওয়া সেই নির্বাচন নিয়ে ৫ অক্টোবর শরীয়তপুর জেলা শহরের পালং উত্তরবাজার এলাকার হাবীবুর রহমানের বাসভবনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে একটি সভা চলছিল। সেখানে হামলা চালান স্বতন্ত্র প্রার্থী আওরঙ্গ-সমর্থক যুবলীগের সাবেক নেতা সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদারের লোকজন। তার ভাই মঞ্জুর হোসেন মন্টু তালুকদার সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়। কিছুক্ষণ পর ওই বাসভবনে আবার হামলা হয়। তখন হাবীবুর রহমান ও তার ভাই মনির হোসেনকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে খুন করে। হাবীবুর রহমান তখন শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার ছোটভাই মনির হোসেন মুন্সি ছিলেন শরীয়তপুর পৌরসভা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ব্যবসায়ী।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, হাবীবুর রহমানের স্ত্রী জিন্নাত হাবীব রহমান আওরঙ্গকে প্রধান আসামি করে মোট ৫৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ তদন্ত শেষে তৎকালীন (পালং জাজিরা) শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আওরঙ্গের নাম বাদ দিয়ে ২০০৩ সালে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। মামলার বাদী তখন আদালতে নারাজি দেন। আদালত ওই আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর পর জিন্নাত রহমান উচ্চ আদালতে রিট করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জিতে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন আওরঙ্গ। ২০১৩ সালের ৩ আগস্ট এক সড়ক দুর্ঘটনায় আওরঙ্গ মারা যান। এর পর উচ্চ আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশ দেন পুলিশকে। পুলিশ ২০১৩ সালের অক্টোবরে আদালতে ৫৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আওরঙ্গ ছাড়াও ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শাহজাহান মাঝি ও স্বপন কোতোয়াল মৃত্যুবরণ করেছেন। দীর্ঘ শুনানি ও ২৮ জনের সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে আদালত গতকাল এ রায় ঘোষণা করলেন।