আ’লীগ মানুষের অধিকারে বিশ্বাস করে না বলেই সব কিছু বন্ধ করেছে - রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩৮ এএম, ১৮ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৪৩ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২৪
আওয়ামী লীগ মানুষের নাগরিক অধিকারে বিশ্বাস করে না বলেই ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ সব কিছু বন্ধ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আওয়ামী লীগের কথিত চেতনার সঙ্গে স্বাধীনতার চেতনার কোনও সম্পর্ক নেই দাবি করে তিনি বলেন, এজন্যই বর্তমান সরকার ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত স্বাধীনতা দিবসে সব মিছিল-মিটিং নিষিদ্ধ করেছে। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি কাজ। ওরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, মানুষের নাগরিক অধিকারে বিশ্বাস করে না। তাই ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ সব কিছু বন্ধ করেছে। একাত্তরে পাক হানাদারদের পৈশাচিক আচরণের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সব আচরণ মিলে যাচ্ছে। আ’লীগের আত্মায় এখন ইয়াহিয়া ও টিক্কা খান ভর করেছে।
আজ বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে এক দোয়া মাহফিলে তিনি এ মন্তব্য করেন। ভাষাসৈনিক ও বিএনপির সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ন্যায়, নীতি, সত্যের কোনো দাম নেই। নিজের পরিবার-পরিজন ও সন্তানের কথা চিন্তা না করে নিজের কমান্ডারকে হত্যা করে যিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, সেই জিয়াউর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, “২৫ ও ২৬ মার্চ ব্যারিকেড দেয়া বাঙালিদের হত্যা করেছে”। এটা শুধু মিথ্যা নয়, এটা জলজ্যান্ত জঘন্য অপপ্রচার।
রিজভী বলেন, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ছিলেন ‘ফুল টাইম’ রাজনীতিবিদ। আমাদের অনেকেই আছেন ‘পার্ট টাইম’ রাজনীতিবিদ, পার্ট টাইম ব্যবসায়ী। কিন্তু তিনি ছিলেন ফুল টাইম রাজনীতিবিদ। নেতাকর্মী এবং জনগণের সাথে একটা সংযোগ তৈরি হওয়ার ব্যক্তিত্ব হলেন খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। দলের এ প্রয়াত নেতা সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, এমনিতে মনে হবে একরোখা, নিজের নীতির প্রশ্নে অটল, আপস করেন না। আবার তার সঙ্গে মিশলে মনে হবে একবারে তুলতুলে নরম মানুষ। এক-এগারোরতে দুজন সেনা অফিসার তার বাসায় গিয়ে পরিবারসহ হত্যার হুমকি দেন। তিনি ঠান্ডা মাথায় সেই হুমকি হজম করেন। পরদিন বেগম খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে বিএনপি গঠন করা হবে, সেখানে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের স্বাক্ষর করতে হবে। খোন্দকার দেলোয়ার হাসপাতালে ভর্তি হলেন, হাসপাতাল থেকে তিনি উধাও হয়ে গেলেন। এই যে অসাধারণ কৌশল একজন রাজনীতিবিদের, তিনি ছিলেন এ ধরনের ধ্রুপদী চরিত্রের একজন মানুষ।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আমরা প্রতিদিন এ ধরনের গুণী রাজনীতিবিদদের হারাচ্ছি। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে হারালাম, ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহকে হারালাম, সর্বশেষ গতকাল হারালাম ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে। এ ধরনের মানুষ হারিয়ে আমরা কাদেরকে পাচ্ছি? আমরা পাচ্ছি পাপুলকে, খালেদকে, সম্রাটকে। এরা রাজনীতিবিদ? এই যে রাজনীতির অধঃপতন, এটা সরকার সৃষ্টি করেছে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, দেশে এখন গুণী মানুষের কদর নেই। মুক্তিযোদ্ধারা আজ লাঞ্ছিত হচ্ছে সরকারের কাছে। ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসেও পর্যন্ত কোনও মিছিল-মিটিং করতে দেবে না। এই গোটা সময়টাতে মানুষ র্যালি করবে, কেউ আলোচনা সভা করবেন। কিন্তু সরকার সব বন্ধ করে দিলেন। আওয়ামী লীগ যে চেতনার কথা বলে তার সাথে স্বাধীনতার কোনও সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক নেই বলেই তো ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ সব সভা সমাবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। এটাই তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি কাজ।
রিজভী বলেন, স্বাধীনতার মূল কথা হচ্ছে মানুষের অধিকার সংরক্ষণ করা। মানুষ তার কথা বলবে নির্ভীক চিত্তে, এ নিশ্চয়তা দেয়া। ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইয়াহিয়া, টিক্কা খানরা যে কাজ করেছিলেন, গোটা দেশকে অবরুদ্ধ করে হানাদার বাহিনী যে পৈশাচিকতা করেছিল, তার সাথে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি আচরণ মিলে যায়। হানাদার বাহিনী যে গণহত্যা, নারী নির্যাতনসহ যা কিছু করেছে তার সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের সবকিছু মিলে যায়। ওদের আত্মা হচ্ছে ইয়াহিয়া খানের আত্মা, ওদের আত্মা হচ্ছে টিক্কা খানের আত্মা। ওরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, মানুষের নাগরিক অধিকারে বিশ্বাস করে না। তাই তারা ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ সব কিছু বন্ধ করেছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, ঘটানোর পর যারা ক্ষমতায় ছিলেন, সবাই আওয়ামী লীগের লোক। সেটাও আওয়ামী লীগেরই সরকার। তখন বিএনপি ছিল না বা এখন যারা বিএনপি করে তাদের কেউ সে ঘটনার সাথে জড়িত ছিল না। তখনকার স্পিকার মালেক উকিল লন্ডন থেকে বলে বসলেন ‘ফেরাউনের পতন হয়েছে’।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, আল্লাহ না করুক, আপনারও (শেখ হাসিনা) তো পতন হবেই। আবার পতন হলেই দেখবেন আওয়ামী লীগের লোকরা বলবে ‘লেডি ফেরাউনের’ পতন হয়েছে।
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদের সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য খোন্দকার আকরব হোসেন বাবলু, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ।