লাঠিসোটা নিয়ে সমর্থকদের থানার সামনে থাকতে বললেন কাদের মির্জা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৪৫ এএম, ২০ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:১৯ এএম, ১০ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। গুলিবিদ্ধরা হলেন- উপজেলার বড়রাজাপুর গ্রামের আবদুল ওয়াহিদের ছেলে সাইদুর রহমান (২৬), চরকাঁকড়া ইউনিয়নের সিরাজুল ইসলামের ছেলে নুরুল অমিত (২০) ও বসুরহাট পৌরসভার আবুল কালামের ছেলে রায়হান (২০)। অন্যদিকে গুরুতর আহতরা হলেন- চরফকিরা ইউনিয়নের মো. কাঞ্চন (৬০), মুছাপুর ইউনিয়নের আবুল খায়েরের ছেলে মাসুদ (২৫), চরকাঁকড়া ইউনিয়নের আবদুস সাত্তারের ছেলে কামরুল হাসান (৩০), চরফকিরা ইউনিয়নের আবদুল মান্নানের ছেলে ফরহাদ (৪০), চরফকিরা ইউনিয়নের বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির (২৮), বসুরহাট পৌরসভা এলাকার আদনান (২৪) ও মারুফ (২৫)।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. সেলিম বলেন, গুলিবিদ্ধ তিনজনসহ গুরুতর আহত পাঁচজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চাপরাশিরহাট পূর্ব বাজার এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নেন আওয়ামী লীগের উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল। এ সময় সাবেক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি মিছিল বাজারের দলীয় কার্যালয়ে দিকে যায়। হঠাৎ করে ওই মিছিলে আবদুল কাদের মির্জার সমর্থক জামাল উদ্দিন লিটনসহ কিছু লোক বাধা দেন। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিত-া শুরু হয়। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আধা ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এ সংঘর্ষ চলে।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহিদুল হক রনি বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। পরবর্তীতে এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই এবং বসুরহাটের পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা আজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে তার সমর্থকদের লাঠিসোটা নিয়ে থানার সামনে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন। আবদুল কাদের মির্জা আজ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সমর্থকদের নিয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার সামনে অবস্থান ধর্মঘট করেন। ধর্মঘট থেকে এ নির্দেশ দেন তিনি। ধর্মঘটে কাদের মির্জা বলেন, ‘আমার দাবি না মানা পর্যন্ত অবস্থান ধর্মঘট চলবে।’ এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জ থানার সামনে সমর্থকদের নিয়ে অবস্থান ধর্মঘট করেছিলেন আবদুল কাদের মির্জা। পরে বৃহস্পতিবার কোম্পানীগঞ্জে অর্ধদিবস হরতাল শেষে পুনরায় একই দাবিতে তিনি শুক্রবার ও শনিবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণ দেন। বিষয়টি জানতে আবদুল কাদের মির্জার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা রিসিভ করেন তার ব্যক্তিগত সহকারী হৃদয়।
কাদের মির্জার ব্যক্তিগত সহকারী হৃদয় বলেন, ‘মির্জা কাদের এই মুহূর্তে কথা বলবেন না। পরে কথা বলবেন।’ জানা গেছে, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি ও পরিদর্শককে (তদন্ত) প্রত্যাহার এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলসহ কিছু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার, নোয়াখালী ও ফেনীর অপরাজনীতি বন্ধের দাবিতে কাদের মির্জা এই কর্মসূচি পালন করছেন। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহিদুল হক রনি বলেন, ‘আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাদের মির্জা তার অনুসারীদের নিয়ে থানার ফটকের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তার সমর্থকরা ওই সড়কে কোনো যানবাহন চলতে দেননি। গতকালও একই দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন।’
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘কাদের মির্জা নিজেই জানেন তিনি কেমন এমন করছেন।’ এদিকে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে কাদের মির্জার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আইনগত ব্যবস্থার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে আ’লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলের অঙ্গসংগঠনের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নোয়াখালী শহর আ’লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু বলেন, ‘আবদুল কাদের মির্জা দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অপরাজনীতির অভিযোগ করেন। অথচ তিনি নিজেই অপরাজনীতিসহ নানা অনিয়ম করে বেড়াচ্ছেন। তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে দলীয় প্রধান তথা সরকার প্রধান শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, নোয়াখালী জেলা আ’লীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে অপপ্রচার করে যাচ্ছেন। বিএনপি-জামায়াতের মতো রাষ্ট্রযন্ত্রের তথা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অভিযোগ করে যাচ্ছেন। তার এসব কর্মকান্ড দলীয় শৃঙ্খলা ও রাষ্ট্রবিরোধী।’ তিনি আরও বলেন, ‘বসুরহাট পৌর নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগে থেকেই প্রচার-প্রচারণার তিনি যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তাতে বোঝা যায়, তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নন। নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি-জামায়াত জোট সমর্থিত রাজনৈতিক দলের ভোটে। মনোনয়ন পাওয়ার আগে তিনি কখনো আওয়ামী লীগ বা দলের নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি। কিন্তু দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পর থেকে পাগলের মতো প্রধানমন্ত্রী, তার বড় ভাই সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং তার স্ত্রীসহ ফেনী ও নোয়াখালীর আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারসহ অশালীন ভাষায় বক্তব্য দিয়ে আসছেন। যা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছে।’ আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘তিনি যেসব মিথ্যা বক্তব্য দিয়েছেন, সেগুলোর সত্যতা প্রমাণ করুক। কাদের মির্জার এসব অশোভনীয় এবং সংগঠনবিরোধী অসদাচরণের শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন, ‘তার ক্ষমতার দাম্ভিকতায় অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে নাজেহাল হতে হয়েছে। তার এমন আচরণের জন্য দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী কাদের মির্জার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি। পাশাপাশি সাংগঠনিক পর্যায় থেকে মিথ্যা অপপ্রচারমূলক বক্তব্য, অশোভনীয় ও অসদাচরণের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’ সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একেএম সামছুদ্দিন জেহান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আতাউর রহমান নাছের, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ইমন ভট্ট, যুগ্ম আহ্বায়ক একরামুল হক বিপ্লব ও জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আসাদুজ্জামান আরমান