আলতাফ পারভেজের ফেসবুক লেখা
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী-সংগঠকের শিবির পরিচয় জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৪৫ পিএম, ৪ জানুয়ারী,শনিবার,২০২৫ | আপডেট: ০৩:৪৩ পিএম, ৬ জানুয়ারী,সোমবার,২০২৫
গত কয়েক মাস ধরে অনেক ছাত্রলীগ কর্মী-সংগঠককে দেখা যাচ্ছে শিবির পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ করছেন।
কেউ কেউ বলছেন, ‘নিরাপত্তা’র খাতিরে তারা ছাত্রলীগ করেছেন বা এই সংগঠনের ছায়াতলে কাজকর্ম করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে বিশ্লেষণের বদলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলই দেখেছি বেশি।
কিন্তু এর গুরুতর একটা ফৌজদারি দিকও থাকতে পারে-- যা এসময় বাড়তি নীতিগত মনযোগ দাবি করে।
প্রথম কথা হলো, বহু সংগঠনের শত শত কর্মী তো ছাত্রলীগে যোগ না দিয়েও নিজ বিশ্বাস নিয়ে ক্যাম্পাসগুলোতে ছিলেন—নিপীড়নের মুখেও ছিলেন।
তারপরও যদি কথিত আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে গত পনেরো বছর ধরে কোন কোন শিবিরকর্মীকে ছাত্রলীগ করে যেতে হয় তাহলে শেষোক্ত সংগঠনের হয়ে তারা ভিন্নমতালম্বীদের অত্যাচার-নিপীড়নেও অংশ নিয়েছিলেন কিনা সে প্রশ্ন কিন্তু আসে।
গত পনেরো বছর, বিশেষ করে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, প্রথম দফার কোটা আন্দোলন, হলে হলে গেস্টরুমের লাগাতার নিপীড়নের যে ভয়াবহ অধ্যায় বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করেছে এবং তাতে ছাত্রলীগকর্মীদের যে গণ-ভূমিকা ছিল তাতে নিশ্চয়ই সংগঠনটির তখনকার সকল কর্মী অংশ নিয়েছেন।
অংশ না নিলেও সমর্থক ভূমিকায় থাকতে পারেন। ‘ছাত্রলীগ করতে থাকা তখনকার শিবিরের নেতাকর্মীরা’ ফৌজদারী এই অনুমানের কী জবাব দিবেন জানি না—কিন্তু এ বিষয় প্রশ্ন আকারে নিশ্চয়ই উঠবে একসময়।
ক্যাম্পাসগুলোকে সন্ত্রাস ও নিপীড়নের অতীত ট্রমা থেকে মুক্ত করতে হলে সহিংস অতীতের প্রকাশ্য-গোপন সকল ভূমিকারই জবাবদিহিতা দরকার।
অহিংস ধাঁচের কোন সংগঠনে ছদ্ম পরিচয়ে থাকা আর সহিংস ধাঁচের কোন সংগঠনে ছদ্ম পরিচয়ে থাকার গুণগত ফারাক অনেক।
ছদ্মপরিচয়ে কোন সাংস্কৃতিক সংগঠন করা বা কোথাও চাকুরি করা আর কোন সহিংস সংগঠনের নেতাকর্মী থাকা নিশ্চিতভাবে ভিন্ন বিষয়। এসবের আইনগত তাৎপর্যও আলাদা আলাদা।
বিদ্যাপীঠগুলোতে অতীত ভূমিকার জন্য গত অক্টোবর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ছাত্রলীগ এখন নিষিদ্ধ। এই নিষেধাজ্ঞা, উল্লিখিত প্রজ্ঞাপনের ভাষায়-- আলোচ্য এই সংগঠনের অতীতে নেতাকর্মীদের সকলের সহিংস দায়ের কারণে। সেক্ষেত্রে ‘ছদ্মভূমিকা’র নিজস্ব সনদে ঐ সংগঠনের ঐসময়কার কেউ কেউ রাজনীতিতে নতুনভাবে পুনর্বাসিত হতে পারেন কি না--এটা কেবল নৈতিক প্রশ্ন নয়, ফৌজদারি প্রশ্নও বটে। এটা যদি জবাবদিহিতার আওতার বাইরে রাখা হয় তাহলে ছাত্রলীগের বাকি নেতাকর্মীরাও দাবি করে বসবেন তারা বিভিন্ন ক্যাম্পাসে টিকে থাকতে যেয়ে ‘প্রতিপক্ষে’র বিরুদ্ধে অপরাধকর্মে জড়িয়েছেন, তারা আসলে অন্য কোন সংগঠনের ছদ্ম কর্মী ছিলেন।
এরকম ‘কৌশল’ ও অজুহাতের ফাকফোকর অতীত সন্ত্রাসের বিচার-সম্ভাবনাকে খাটো করে কি না বা ক্যাম্পাসে-ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী অতীতকে নতুন আঙ্গিকে জাগরুক রাখছে কি না সেটা নিশ্চয়ই ভাবনার ব্যাপার।
লেখক: আলতাফ পারভেজ