নির্বাচিত সরকার যতক্ষণ না আসবে গণঅভ্যুত্থান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে : দুদু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৫ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ১১:০৪ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের উদ্দেশ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, এই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম দিক হচ্ছে একটি নির্বাচিত সরকার। সেই নির্বাচিত সরকার যতক্ষণ না আসবে গণঅভ্যুত্থান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে। যদি সেই মর্যাদা ধরে রাখতে হয় তাহলে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে সংকট কাটাতে হবে।
আজ সোমবার প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ সমবায় দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আয়োজনে ভারতের আগ্রাসনে, হাসিনার দেশজুড়ে অরাজকতার প্রতিবাদে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
শামসুজামান দুদু বলেন, ড. ইউনূস সাহেব একটু হুঁশে আসুন। এই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম দিক হচ্ছে একটি নির্বাচিত সরকার। সেই নির্বাচিত সরকার যতক্ষণ না আসবে গণঅভ্যুত্থান তার মর্যাদা হারাবে। যদি সেই মর্যাদা ধরে রাখতে হয় তাহলে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে সংকট কাটাতে হবে। এর কোনো ভিন্ন পথ আছে এটা আমি মনে করি না। সেজন্য আমরা নির্বাচনকে আহবান করেছি। আমি মনে করি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচনের দিকে দেশকে এগিয়ে নেয়া উচিত।
তিনি বলেন, ভারত একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের যে সহযোগিতা করেছিল, আমাদের দেশের মানুষকে তাদের ভ‚খÐে জায়গা দিয়েছিল তার জন্য আমরা তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা তাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করি। কিন্তু এই ভারত বিগত ৫৩ বছরে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের বন্ধুত্ব, আমাদের কৃতজ্ঞতাকে তারা তাদের স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে। মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করার পরে তারা আমাদের তৎকালীন নব্য বাংলাদেশে কিভাবে লুটপাট করেছিল তাদের সেনাবাহিনী এবং তাদের জনগণ। তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যংক থেকে নির্বিচারে যেমন শেখ হাসিনা লুটপাট করেছে, ঠিক তেমনই সেই সময় ভারতও বস্তা বস্তা টাকা লুট করেছে। তখন আমাদের টাকার দরকার ছিল। কারণ সদ্য স্বাধীন দেশে সাধারণ মানুষের জন্য খাবারের প্রয়োজনে, বেঁচে থাকার প্রয়োজনে টাকার দরকার ছিল। কিন্তু সেই সময় ভারত সেই টাকা নিয়ে গেছে। সেই সময় সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ পাকিস্তানিদের কাছে থেকে যে অস্ত্র পেয়েছিল সেই অস্ত্রগুলো তারা ট্রাকে ট্রাকে ভরে ভারতে নিয়ে গিয়েছিল। সেই সময় রাশিয়ান কয়েকটি এসএলআর ছাড়া বাংলাদেশে আর কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি। অথচ হাজার-হাজার কোটি টাকার অস্ত্র সেই সময় আমাদের বাংলাদেশে থাকার কথা ছিল। অর্থাৎ একটা সেনাবাহিনী তৈরি করার মতন অস্ত্র সেই সময় বাংলাদেশে ছিল।
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, স্বাধীনতার পরপরই পার্শ্ববর্তী বন্ধু নামধারী দেশটি সদ্য স্বাধীন দেশের সাথে যে ব্যবহার করেছিল সেই একই ব্যবহার আমরা এই ডিসেম্বরেও লক্ষ্য করছি। গত চার মাস আগে ১৬ বছরের এক পৈশাচিক শাসক, পৈশাচিক দল, পৈশাচিক শাসনে যা শুরু করেছিল ১৬ বছর আগে, সেটি চার মাস আগে যখন তার পতন হয় সেই পতন ভারত আজ পর্যন্ত মেনে নিতে পারেনি। ভারত সেই ভয়ংকর হত্যাকারী গণহত্যাকারী লুটেরা তার প্রধান শেখ হাসিনা এবং তার দলকে আশ্রয় দিয়েছে। এই আশ্রয়ের মধ্যে দিয়ে এটা প্রমাণ হয়েছে তারা গণহত্যাকারী এবং লুটেরার পক্ষের একটা শক্তি। তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিনাশী যা করেছে, যে দল এবং যে নেত্রী তার পক্ষের শক্তি, তার পক্ষের সমর্থক, তার পক্ষের মানুষ। অর্থাৎ ভারত সবসময় আওয়ামী লীগ, শেখ মুজিব, শেখ হাসিনার বাইরে কখনও আর অন্য কোনো চিন্তা করতে পারে না। এর বাইরে কোনো চিন্তা করতে পারেনি বলে তারা বাংলাদেশের জনগণের বন্ধু হতে পারেনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের বন্ধু হতে পারেনি। এই কথা যখন আমরা বলবো ভারত সেই সময় অখুশি হবে। প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনা কতগুলো চুক্তি করেছে, দেশ বিরোধী চুক্তি করেছে সমস্ত রাজনৈতিক দল গত ১৬ থেকে ১৮ বছর ধরে বলে আসছে। একটা দেশের সঙ্গে আরেকটা দেশের চুক্তি হওয়ার পর বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সেই চুক্তি পার্লামেন্টে উত্থাপন করার কথা। শেখ হাসিনার আমলে এ পর্যন্ত একটা চুক্তিও আমরা লক্ষ্য করিনি পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হয়েছে। এমন কি দেশবাসীর সামনে কোনো সাংবাদিক সম্মেলনেও উত্থাপন করেনি। বরং শেখ হাসিনা দম্ভ করে বলেছে, আমি ভারতকে এমন কিছু দিয়েছি তা ভারত কখনোই ভুলতে পারবে না। কি দিয়েছেন আমরা জানি না। ব্যক্তিগতভাবে দিয়েছেন না দলীয়ভাবে দিয়েছেন না সরকারিভাবে দিয়েছেন সেটা আমরা জানি না। এখন ডক্টর ইউনূসের সেই চুক্তি এবং দেয়া- নেয়ার ব্যাপারটা জাতির সামনে উপস্থাপন করতে হবে। যেমন তাদের লুটেরার একটি খন্ডিত অংশ আমি বলব ড. ইউনূস প্রকাশ করেছে। সবটা প্রকাশ করতে পেরেছে এটা আমার কাছে মনে হয় না। তার পরেও ডক্টর ইউনূস ও তার সরকারকে আমি অভিনন্দন ও ধন্যবাদ দেব দুর্নীতির একটা চিত্র কমপক্ষে জাতির সামনে আপনারা উপস্থাপন করেছেন। এই যে দুর্নীতি একটা ভয়াবহ দুর্নীতি। স্বাধীন দেশের কোনো শাসক এটা করতে পারে এটা ভাবা যায় না।
তিনি বলেন, ভারত এবং তাদের মিডিয়া বলছে তারা বাংলাদেশের কিছু অংশ দখল করে নেবে। আমি ভারতকে অনুরোধ করবো এই ভয়াবহ চিন্তা থেকে একটু দূরে থাকুন। বাংলাদেশের জাতি এই ভূখন্ডের মানুষ সারা দেশের অন্যতম বীরের জাতি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে না সারা পৃথিবীর মধ্যে তারা সশস্ত্র যুদ্ধ করে, সশস্ত্র লড়াই করে পাকিস্তানিদেরকে পরাজিত করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ভারত ও পাকিস্তান ব্রিটিশদের সাথে টেবিলে বসে দেন দরবার করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। যুদ্ধ করে নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে যুদ্ধের ময়দানে। শেখ মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্ব চেয়েছিলেন। ২৫ মার্চের রাতে আক্রমণের আগ পর্যন্ত তিনি আলোচনা করেছিলেন। যুদ্ধের কথা বলেন নাই। এমন কোনো তথ্য প্রমাণ নেই তিনি মুখে কোথাও স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রমাণ এটাই আছে বাংলাদেশ বীর হিসেবে চিহ্নিত যিনি বাঙালি জাতির কাছে তিনি হচ্ছেন শহীদ জিয়াউর রহমান। কালুরঘাট থেকে বলেছিলেন আমি মেজর জিয়া বলছি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। একমাত্র বাঙালি একমাত্র বাংলাদেশের যিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন এবং রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন। বাঙালি কখনো কারোর দাসত্ব মানে নাই। এটা মানতেও তারা চায়নি। কখনো মানবেও না। বাঙালির সঙ্গে যদি পার্শ্ববর্তী দেশ মনে করে যুদ্ধ করবে তাহলে ভুল করবে।
ভারতের উদ্দেশ্যে কৃষকদলের সাবেক এ আহবায়ক বলেন, আপনারা হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছেন না। এর থেকে মর্মান্তিক ঘটনার কিছু আছে। ভারতে আমাদের দেশের মানুষ যায় টাকা খরচ করে হোটেলে থাকে। ডাক্তারদেরকে টাকা দিয়ে তারপর সেই চিকিৎসা নেয়। ফ্রি চিকিৎসা নিতে যায় না। আপনারা বললেন যে, চিকিৎসা দেবেন না। এখন কি অবস্থা। আপনাদের হাসপাতাল ফাঁকা হয়ে গেছে। আপনাদের অনেকের চাকরি চলে যাচ্ছে। যে হোটেলগুলোতে বাঙালিরা থাকতো সেগুলো একেবারে ফাঁকা। এখন কলকাতা থেকে যেসব সংবাদ আসছে সেগুলো মর্মান্তিক। আমরা তো ভাই ইচ্ছা করে এসব বন্ধ করিনি। আপনারা বন্ধ করেছেন। আপনারা ভিসা বন্ধ করেছেন আমরা তো কিছু বলি নাই। বন্ধ রাখেন। এই চার মাসে এত লাফাচ্ছেন কেন। চার বছর পরে আমাদের এখানে বিশেষায়িত হাসপাতাল যদি হয়ে যায়। এখানে যদি আমরা উৎপাদন বাড়াই, শহীদ জিয়া যেটা প্রমাণ করেছিলেন। শেখ মুজিবের সময়ে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিল। আর জিয়াউর রহমানের সময় এদেশে শুধু চাল উৎপাদনই সীমারেখা অতিক্রম করে নাই বিদেশে রফতানি করা হয়েছে। এই জাতির তিনিই ছিলেন দিক নির্দেশক। শহীদ জিয়াউর রহমানের অনুসারী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। তারেক রহমান যদি এই বাংলাদেশের আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয় নিশ্চিতভাবেই ভারত থেকে পেঁয়াজ-রসুন কেনার কোনো প্রয়োজন হবে না। সেজন্য আমরা বন্ধুত্ব চাই। ভারতের সাথে যুদ্ধ চাই না। আমরা ভারতের সাথে বন্ধুত্ব চাই সমমর্যাদার ভিত্তিতে। ভারতের সাথে মর্যাদার সঙ্গে যদি দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্ব হয়, স্বাধীন জাতির সাথে স্বাধীন জাতির বন্ধুত্ব হয় তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি নাই। প্রভু আর দাসের সঙ্গে কোনো বন্ধুত্ব হয় না। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে কিন্তু প্রভু নাই। আমরা এই নীতিতে বিশ্বাস করি। সমমর্যাদা এবং সমভাবে যদি কেউ ভাবতে চাই তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি নাই। যে কোনো পরিস্থিতিতে আমাদের তৈরি থাকতে হবে। জিয়াউর রহমান আমাদেরকে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন এবং বেগম খালেদা জিয়া প্রমাণ করেছেন। আর আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে যদি দাঁড়াতে হয় তাহলে দায়িত্ব নিয়েই দাঁড়াতে হবে। সেজন্য যে সুযোগ এসেছে সেই সুযোগ আমরা ব্যবহার করতে চাই।