অনৈক্য সৃষ্টি না করে ঐক্যের মাধ্যমে সামনে এগোতে হবে : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:১৮ পিএম, ২৮ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৮:৪৬ পিএম, ২৮ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বর্তমান পরিস্থিতিতে সংকট-সমস্যার উত্তরণে ‘অনৈক্য সৃষ্টি না করে ঐক্যের মাধ্যমে সামনে এগোতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় কবিতা পরিষদের উদ্যোগে ‘রাষ্ট্র পুনর্গঠনের লেখক-শিল্পীদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্য যে, ৫৩ বছর হয়ে গেছে আমরা শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর, এটাই আমরা করতে পারিনি, আমরা সব সময় যুদ্ধ করছি, লড়াই করছি, নিজেরা ভাইয়ে ভাইয়ে রক্ত ঝরাচ্ছি, কিন্তু ওই পথে যাওয়ার জন্য কেউ সেভাবে চেষ্টা করছি না। ফ্যাসিবাদ পরাজিত হয়েছে, ফ্যাসিবাদ যেকোনো সময় আবার ফিরে আসতে পারে, আমরা সেই রাস্তা যেন তৈরি করে না দেই। আজকে আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন কতগুলো কাজ করছি, যে কাজগুলোর মধ্য দিয়ে কিন্তু ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমাদের এখন লক্ষ্য একটাই হওয়া উচিত, সেই লক্ষ্য হচ্ছে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য যে সংস্কারগুলো প্রয়োজন, সেই সংস্কারগুলো ন্যূনতম করে আমরা একটা সেই ধরনের রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য নির্বাচন করে পার্লামেন্টে যাই। অনেকেই বলছেন যে, নির্বাচনই তো গণতন্ত্র নয়, অবশ্যই না। কিন্তু তার জন্য (গণতন্ত্রের জন্য) একটা প্রক্রিয়া লাগবে তো, সেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যদি না যাই, সেই জায়গায় আমরা পৌঁছাতে পারব না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এজন্য যে, খুব মোটা দাগে যেটা বুঝি সেটা হচ্ছে, আমাদের মনে হয় যে, আমাদের সকলেরই এখন যেটা উচিত যে, অনৈক্য সৃষ্টি না করে ঐক্যের মধ্য থেকে আমরা যে সুযোগ পেয়েছি, সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে অন্তত আমরা কিছুটা হলেও সামনের দিকে এগিয়ে যাই। আমি শুধু এতটুকু বুঝি যে, আমাদের এখন সময় হয়েছে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনে দিকে এগিয়ে যাওয়ার, সেই যাওয়াটা হচ্ছে একটা গণতান্ত্রিক লিবারেল ডেমোক্রেসির পথে এগিয়ে যাওয়ার।
তিনি বলেন, সেখানে আমরা কোনো মতেই যেন আর কোনো বিভাজন সৃষ্টি না করি। এখন যেটা এই মুহূর্তে প্রয়োজন, সবাইকে শান্ত থেকে বিষয়গুলোকে অনুধাবন করে আমাদের ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়া এবং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সামনের দিকে আগানো। এছাড়া আর কোনো পথ আছে কিনা আমি অন্তত মনে করি না। তাই আসুন আমরা সবাই একটা লক্ষ্যে এগিয়ে যাই, সেই লক্ষ্য গণতান্ত্রিক সমাজ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমরা নির্মাণ করি।
ফখরুল বলেন, আজকে যখন আমরা ভারতবর্ষের মিডিয়ার বিষয়গুলো দেখতে পাই, বুধবার রাতেই আমাকে কয়েকজন ফোন করেছিলেন। তাদের একটাই মাত্র লক্ষ্য, প্রশ্ন যে, ইসকনের ব্যাপারে আপনারা কি করছেন? এই প্রশ্নটা একেবারেই উদ্দেশ্য প্রণোদিত, একটা অবস্থা তারা তৈরি করতে চায়, সেই অবস্থা নিয়ে প্রথম বার ফেল করেছে, এখন নতুন করে আবার সেই অবস্থা তৈরি করতে চায়। এটার ব্যাপারে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আমি আমার তরুণ ভাইদেরকে আহ্বান জানাব যে, আপনারা অনেকে দায়িত্ব নিয়েছেন, দায়িত্বে এসেছেন, এই দায়িত্বটা দায়িত্বশীলভাবে পালন করতে হবে। গোটা জাতিকে সামনে রেখে এই দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা এমন কিছু করব না, এমন কোনো হঠকারিতা করব না, যে হঠকারিতার মধ্য দিয়ে আমরা আবার অন্ধকারের মধ্যে চলে যাবো।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ৬৯- এর গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে, তারও আগে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে, মুক্তিযুদ্ধ সমস্ত কিছুকে একটা বিকৃত অর্ধ সত্য, সত্য সব কিছু মিলিয়ে টিলিয়ে একভাবে তারা ন্যারেটিভ তৈরি করেছে। সেই ন্যারিটিভের উদ্দেশ্য হলো চিরদিন সরকার আওয়ামী লীগ সরকার। কারণ লুটপাট না চালাইলে বাঁচতে পারবে না। ওবায়দুল কাদের বলে গিয়েছিলেন হিস্ট্ররিক কথা আমি মনে করি, এই নির্বাচনে আমাদের বিজয় হতে হবে। তা না হলে গাট্টি বুস্কা নিয়ে বিদেশে যেতে হবে কিংবা জেলের ভাত খেতে হবে। সুতরাং তারা বুঝেছে যে, বাঘের পিঠে চড়ছি নামা ওত সহজ না, ওরজন্য কোনো উপায় নেই, ডেসপারেট. তাদের জীবন-মরণ সমস্যা হয়ে গেছে এবং তার জন্য দেশ ধ্বংস হোক সেটাতে তাদের আপত্তি নাই।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে যদি পরিবর্তন না হয় তাহলে কোনো সংস্কার টিকবে না। সংস্কার আজকে মনে হবে আছে শক্তিশালী হয়েছে, ধীরে ধীরে সেটা বিবর্ণ হতে থাকবে, মলিন হতে থাকবে, একসময় ইউজলেস হয়ে যাবে। ধরেন, এরকম যদি হয়, এমনিতেই তো আমি দেখছি যে, যদি সবাই মিলে বসে, আচ্ছা কার কি মত, ১০টা কমিশন সাজেশন দিয়েছেন, সেই সাজেশন নিয়ে তো কমিশনগুলো বসছে না, সরকার বসবে। কমিশন কেনো বসবে না? তা আমি ঠিক বুঝলাম না। মোহন (মোহন রায়হান) কবিতা লিখেছে, সলিমুল্লাহ খানকে যদি বলি একটু বুঝাও তো ভাই কি লিখেছে, এটা একটা কথা হলো নাকি? কিন্তু ওরা(অন্তবর্তীকালীন সরকার) এরকম সিষ্টেম করেছে, ওরা বসবে না, বসবে সরকার।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, চট্টগ্রামের ঘটনা একটা উস্কানি ছিলো যে, একটা ধর্মের নামে, সম্প্রদায়ের নামে ধর্মীয় দাঙ্গা বাধানোর জন্য, একটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর জন্য যেখানে অনেকে অপেক্ষা করছিলো যে, এরমধ্য দিয়ে প্রতি অভ্যুত্থানের একটা তৎপরতা জারি রাখা যায় কিনা। চট্টগ্রামের লক্ষ লক্ষ মানুষ সংবেদনশীলতা, সহনশীলতা, সহমর্মিতা, সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে নতুন একটা উদাহরণ আমরা কিন্তু তৈরি করেছি। সারা বাংলাদেশে খেয়াল করবেন, মানুষ কিন্তু জেগে উঠেছে অভ্যুত্থানকে রক্ষা করব, ঐক্যটাকে রক্ষা করব, কোনো উস্কানিতে আমরা পা দেবো না। এটাই হলো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সাফল্যের জায়গাটা। এই ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে, এই ঐক্যকে জাগিয়ে তুলতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, পতিত ফ্যাসিস্টরা ও তাদের দেশী-বিদেশী দোসরা প্রতি মুহূর্তেই বাংলাদেশের অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করা, অভ্যুত্থানের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা যে অন্তর্বর্তী সরকার আছে তাকে ব্যর্থ করার চক্রান্ত করছে এবং নানাভাবে সেটা করায় সক্রিয় হচ্ছে। যেটা আমরা সর্বশেষ চট্টগ্রামে দেখলাম, নৃশংসভাবে একজন আইনজীবীকে হত্যা করা হয়েছে এবং পরিস্কারভাবে এদেশে একটি এমন এক ধরনের সংঘাতের উস্কারি তৈরি করা হচ্ছে যাতে করে বাংলাদেশ তথা দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ে।
কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক কবি মোহন রায়হানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কবি রেজাউদ্দিন স্টালিনের সঞ্চালনায় সভায়, লেখক সলিমুল্লা খান, বিএনপির নুরুল ইসলাম মনি, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান, কবি হাসান হাফিজ, লেখক আবু সাঈদ, কবি সোহরাব হাসান, কবি মাহবুব মোর্শেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।