গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে-নজরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৫ এএম, ৫ ফেব্রুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৪৩ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
‘প্রহসনমূলক’ নির্বাচনের কারণেই দেশের সকল নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান ‘জনপ্রতিনিধিত্বহীন’ হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে লড়াই সেই লড়াইকে জোরদার করতে হবে। নিজেদের শক্তিশালী করতে হবে, আরো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শরিক হওয়া এবং জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন চাই।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন। সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সদ্য মরহুম চেয়ারম্যান এএইচএম কামরুজ্জামান খানের স্মরণে এই আলোচনা সভা হয়।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজকে দেশে নির্বাচনের নামে যে খেলা চলছে, যে প্রহসন চলছে, যে নোংরামি চলছে, তার ফলে এদেশে যেসব প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত গৌরবান্বিত হওয়ার কথা সে রকম কোনো প্রতিষ্ঠানই আজ আর গৌরবান্বিত নয়। জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত আজকে আমরা না খালি সারা দুনিয়া মনে করে এর কোনোটাই প্রকৃত জনপ্রতিনিধিশীল প্রতিষ্ঠান নয়। কারণ নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয় তাহলে সেই নির্বাচনি প্রতিষ্ঠান যেটা বা নির্বাচনে দ্বারা গঠিত প্রতিষ্ঠানÑ সেটা মর্যাদাশীল হয় না, গ্রহণযোগ্য হয় না।
তিনি বলেন, আজকে শুধু বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এ ব্যাপারে তাদের অভিযোগ, তাদের আপত্তি, তাদের প্রতিবাদ এটা করছে না। বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। মার্কিন সিনেট, মার্কিন কংগ্রেস, ব্রিটিশ কমন্স সভা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্নালিস্ট উইথআউট বর্ডার এরকম ধরনের সমস্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো যারা সারা দুনিয়ায় গণতন্ত্রের বিকাশ বা গণতন্ত্রের অবস্থান নিয়ে কাজ করেন তারা সবাই এই সম্পর্কে অভিযোগ জানিয়ে আসছেন। অতি সম্প্রতি চট্টগ্রামের নির্বাচনের পরে পেন্টাগনের একজন কর্মকর্তা মার্কিন কংগ্রেসের যে হিউম্যান রাইটস বা ডেমোক্রেসির ব্যাপারে যে কমিটি আছে সেই কমিটিতে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে আসলে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না। এর ফলে গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে গেলে এটা আলটিমেটলি সারা দুনিয়ার জন্য সংকটের সৃষ্টি করবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশের জনগণ এই সরকারকে তাদের সরকার বলে মানে না। তারাই এই সরকারকে নির্বাচিত করে নাই। ভোটই দিতে পারেনি তারা। আমরা এক নির্বাচনে দেখলাম যে, অর্ধেকের বেশি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। তার মানে জনগণের ভোট দেয়ারই দরকার হয় নাই। কখনো কী কোথাও হয় এটা। পরবর্তীতে দেখলাম ভোটের আগের রাতেই ভোট শেষ হয়ে গেছে। আমরা যখন বলি সেটা হয় সমালোচনা। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলছেন ইভিএমটা ঠিকমতো চালু করতে হবে তাহলে দিনের ভোট আর রাতে হবে না। তার মানে তারা (নির্বাচন কমিশন) স্বীকার করে নিচ্ছে যে, দিনের ভোট রাতে হয়ে গেছে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আন্দোলনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে লড়াই সেই লড়াইকে জোরদার করতে হবে। নিজেদের শক্তিশালী করতে হবে, আরো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শরিক হওয়া এবং জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন চাই। কিন্তু গণতান্ত্রিক স্বাভাবিক পথ যখন রুদ্ধ করা হয় তখন গণতান্ত্রিক শক্তি দুর্বল হয়ে যায় আর অগণতান্ত্রিক শক্তি তারা তাদের অবস্থান নেয়, তাদের ভূমিকা পালন করে। যেটা কারো আছে, আমাদের পছন্দনীয় না হলেও সে রকম কিছু ঘটে যায়। আমরা আবার ওই স্কয়ার নাম্বার ওয়ানে আসতে চাই না। আমরা এগিয়ে যেতে চাই। দেশের মানুষ রক্ত দিয়ে দেশটাকে স্বাধীন করেছে, দেশের মানুষ চায় যে, স্বাধীন দেশে তার স্বাধীনতা, তার মৌলিক অধিকার, তার জীবন এবং জীবিকার অধিকার। এসব যেন কোনোভাবে বিঘ্নিত না হয়।
তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্র পছন্দ করি, আমরা মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করতে চাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, আমরা আন্দোলন-সংগ্রামে যারা লড়াই করে জীবন দিয়েছে তাদেরও ঋণ শোধ করতে চাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। যারা খুন হয়েছে, যারা গুম হয়েছে, যারা মিথ্যা মামলায় নির্যাতিত হয়েছে তাদের ঋণ শোধ করতে চাই আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ২০ দলের শক্তি তত বৃদ্ধি পাবে যত ২০ দলের অন্তর্ভুক্ত সংগঠনগুলোর শক্তি বৃদ্ধি পাবে। কাজেই সেই চেষ্টাও করি এবং ২০ দলকে আরো সমন্বিত করে আগামী দিনের কাজগুলো জোরদার করার চেষ্টা করি। আগামীদিনে গণতন্ত্রের আন্দোলন আরো শক্তিশালী হবে, আরো জোরদার হবে এবং সেই লড়াইয়ে অতীতের মতো আমরা বিজয়ী হবো ইনশাল্লাহ।
মুসলিম লীগের মহাসচিব অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জামায়াতে ইসলামীর নুরুল ইসলাম বুলবুল, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, কল্যাণ পার্টির মাহমুদ খান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, মুসলিম লীগের কাজী আবুল খায়ের, আতিকুল ইসলাম, আজিজুর রহমান লিটন, সারওয়ার-ই-আলম, আনোয়ার হোসেন আবুড়ি, মো. শহীদুল্ল্হা ফকির, ইয়ূথ ফোরামের সভাপতি সাইদুর রহমান, সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান শামীম প্রমুখ।
পরে মুসলিম লীগের চেয়ারম্যানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।