শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার রায় সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন-রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৪ এএম, ৫ ফেব্রুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৫৯ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
২০০২ সালে সাতক্ষীরায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার রায় ‘সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার রায় ঘোষণার পর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, গুম-খুন, শেয়ারবাজার লুট, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ, পর্দা-বালিশ থেকে শুরু করে প্রতিটি সরকারি কেনাকাটায় সাগরচুরি, নির্মাণকাজে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার, জিপিএ-ফাইভ উলম্ফন, পরিবেশ দূষণ, মাদকের বিস্তার, ক্যাসিনো অর্থনীতি চালু, বিদ্যুৎ খাতের হরিলুটকে ইন্ডেমনিটি দেয়া, বিরোধী দল দমনে মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারসহ কতো ক্ষেত্রে যে তারা অপরিসীম ‘কৃতিত্বের’ বিশ্বরেকর্ড একের পর এক গড়ে চলেছে। ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব উৎপাদন ও বিতরণে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীদের মতো পারঙ্গম আর কেউ আছেন কি না তা আমাদের জানা নেই। শেখ হাসিনার সরকার অত্যন্ত ষড়যন্ত্র অভিলাষী সরকার। তারা যখন খুব বিচলিত হয়ে পড়ে তখন ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের কথা বলে অকথ্য, অশ্লীল, অসত্য ও অসভ্য প্রপাগান্ডা আওয়ামী লীগের একমাত্র হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। কারণ তারা সম্পূর্ণরূপে জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে।
তারা আর একটিতে বিশ^রেকর্ড করেছে, সেটি হচ্ছে আদালতকে ব্যবহার করে নির্দোষ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সাজা দেয়া। এর শিকার হয়েছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দেশনায়ক তারেক রহমান এবং বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ দেশের লাখ লাখ নেতাকর্মী। সাজানো ঘটনায় মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশব্যাপী একের পর এক বিএনপির নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতারের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে কারাগারে ভরে রাখা হচ্ছে। তার সর্বশেষ শিকার হলেন বিএনপির প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ বিএনপির ৫০ জন নেতাকর্মী। ২০০২ সালে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মিথ্যা অভিযোগে হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ সাতক্ষীরার স্থানীয় নেতৃবৃন্দের নামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দেয়া হয়। অথচ সেদিন হাবিবুল ইসলাম হাবিব ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী সরকার বিএনপিকে ধারাবাহিকভাবে ধ্বংস করার অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন পর এই মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে। বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। নিজেদের নির্দয় দুঃশাসন ও কুৎসিত মাফিয়া শাসনের ঘটনা দেশে-বিদেশে প্রচারকে আড়াল করতেই গতকাল তড়িঘড়ি করে হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ সাতক্ষীরার স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দকে সাজা দেয়া হলো। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা এড়াতেই সাজানো আদালতকে দিয়ে ইন্সট্যান্ট প্রতিহিংসা পূরণ করতে পারদর্শী শেখ হাসিনা হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ বিএনপির নেতৃবৃন্দকে সাজা দিলেন। এই মিথ্যা মামলাটিকে যে আওয়ামী লীগ প্রতিশোধ গ্রহণের খেলায় মেতেছে তার প্রমাণ ঢাকা থেকে একজন এডিশনাল এটর্নি জেনারেল ও তিনজন ডেপুটি এটর্নি জেনারেলকে সাতক্ষীরায় পাঠানো হয়েছিল মামলাটিকে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসার জন্য, যা নজিরবিহীন ঘটনা। জেলা পর্যায়ে সরকারের পক্ষে পিপি-এপিপিরাই মামলা পরিচালনা করেন, সেখানে একজন এডিশনাল এটর্নি জেনারেলসহ তিনজন ডেপুটি এটর্নি জেনারেলের উপস্থিতিই প্রমাণ করে যে, উক্ত মামলায় শেখ হাসিনার ইচ্ছাই পূরণ হবে। হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ সাতক্ষীরা বিএনপির নেতৃবৃন্দের নামে সাজা সুপরিকল্পিত এবং ব্যক্তিগত প্রতিশোধ গ্রহণ। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে অবিলম্বে হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ নেতৃবৃন্দের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে মুক্তির জোর দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী দীর্ঘ ষড়যন্ত্রমূলক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় দীর্ঘ পাঁচ বছর কারাগারে বন্দি আছেন। শতাধিক মামলায় জামিন হয়ে জেলখানা থেকে বের হওয়ার সময় শাহবাগ থানা মিথ্যা মামলায় জামিন হওয়ার পরেও গতকাল ৩/০২/২০২১ইং তারিখে কোতোয়ালি থানার মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখায়। আমি অবিলম্বে লায়ন আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারসহ কারামুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, বারইয়ারহাট পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী দিদারুল আলম মিয়াজীর সমর্থনকারী ছিলেন আলমগীর রাসেল। গত রাত ৯টায় তার বাড়ির সামনে থেকে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় নৌকা মার্কার প্রার্থীর সন্ত্রাসীরা। উল্লেখ্য যে, আলমগীর রাসেল হচ্ছেন মিরশরাই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মরহুম নূরুল আফসার মিয়াজির ছেলে। গতকাল সকাল ৭টায় নূরুল আফসার মিয়াজি ইন্তেকাল করেছেন অথচ রাত ৯টায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তার ছেলেকে উঠিয়ে নিয়ে গেল। আমি আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এই ন্যক্কারজনক ও অমানবিক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে আলমগীর রাসেলকে তার পরিবারসহ সর্বসম্মুখে উপস্থিত করার আহবান জানাচ্ছি।
এছাড়া মাদারীপুর জেলাধীন শিবচর পৌরসভা নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন রফিকুল ইসলাম। যেদিন বিএনপির কার্যালয় থেকে তিনি ধানের শীষের মনোনয়ন নিয়ে এলাকায় ফেরার পথে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাকে তুলে নিয়ে যায়। গত রাত ১২টায় রাজধানীর মিরপুর এলাকায় একটি মাইক্রোবাস তাকে ফেলে রেখে যায়। আজ ছিল শিবচর পৌর নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। তিনি যাতে মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারেন সে জন্যই আওয়ামী দুষ্কৃতকারীরা তাকে অপহরণ করে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, উল্লিখিত ঘটনাগুলো আওয়ামী অপশাসনেরই বাইপ্রোডাক্ট। গণতন্ত্র ও নির্বাচনকে শেখ হাসিনা যে জ¦রাগ্রস্ত করেছেন এটি তারই প্রমাণ। ভোটাররা হয়ে পড়েছে অসহায় ও নিরুপায়। বন্ধ্যা ভোটব্যবস্থায় শেখ হাসিনা আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। আওয়ামী সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গুম ও ক্রসফায়ারে হত্যার যে রেকর্ড গড়েছে তা অন্যান্য দেশের নিষ্ঠুর স্বৈরশাসককেও বিচলিত করবে। রিমান্ডের নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শারীরিকভাবে টর্চার করা আওয়ামী লীগের কালচারে পরিণত হয়েছে। বিএনপিসহ লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলায় সরকার দেশের মধ্যে যে বৃহত্তর কারাগার তৈরি করেছে সেই দেশটির এখন কোনো মানবিক মুখমন্ডল নেই। বর্তমান মানবতার অস্তিত্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এই পরিস্থিতি সরকারের অসৎ অনাচারের সারাংশ মাত্র। দেশের মানুষ ভয়-ভীতি-আতঙ্কের এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিন যাপন করছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব- উন-নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, ঢাকা মহানগন দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার প্রমুখ।