শনিবার নয়া পল্টনই সমাবেশ : মির্জা ফখরুলের ফের ঘোষণা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৪৯ পিএম, ৮ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:৫৫ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
পুলিশি অবরোধ থাকলেও শনিবার নয়া পল্টনই সমাবেশ হবে বলে ফের ঘোষণা দিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বৃহস্পতিবার বিকালে গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব দলের অবস্থান স্পষ্ট করেন।
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট আমরা আামাদের সমাবেশ অনুষ্ঠান করবই। এর জন্য চেয়েছিলাম নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। এখন সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে এই সমাবেশটাকে শান্তিপূর্ণভাবে করার ব্যবস্থা করা।”
‘‘আমার অবশ্যই আমাদের সমাবেশস্থলে আমরা যাবো। আর জনগণ কি করবে সেটা জনগণই ডিসাইড করবে।”
নয়া পল্টন সড়ক পুলিশ অবরোধ রেখেছে সেখানে কিভাবে সমাবেশ করবেন জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আপনারা ২২ আগস্টের আগে অনেকেই বলেছেন, বিএনপি কিছুই পারে না। ২২ তারিখের পরে ৯টি সমাবেশ হয়েছে না। আপনারা নিজেরাই দেখেছেন জনগণ কিভাবে উঠে দাঁড়াচ্ছে? একটা কথা আমি বিশ্বাস করি, আমরা সবাই বিশ্বাস করি যে, এই বাংলাদেশ গণতন্ত্রের জন্যে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। সেই গণতন্ত্র আজকে পুরোপুরিভাবে এরা লুট করে নিয়ে চলে গেছে। সেটাকে ফিরে পাওয়ার জন্য জনগণ উঠে দাঁড়াচ্ছে, জনগন ফুলে উঠছে, নদী সাঁতরিয়ে পার হচ্ছে, ভেলা দিয়ে নদী পার হচ্ছে, ১০০ মাইল সাইকেলে, হেটে চিড়া-মুড়ি-গুড় নিয়ে সমাবেশগুলোতে উপস্থিত হচ্ছে।”
‘‘অপেক্ষা করুন ঢাকায় যা দেখবেন তা আপনারা নিজেরা স্বচক্ষে দেখবেন।”
তিনি বলেন, ‘‘১০ তারিখ আমাদের বিভাগীয় সমাবেশের শেষ কর্মসূচি। এই সমাবেশ থেকে আমরা পরবর্তি কর্মসূচি ঘোষণা করবো। আমাদের যেসব দাবি রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। আমরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবো।”
‘‘সেখান থেকে আমাদের আন্দোলন শুরু করে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো তারা যুগপৎ ভাবে এই আন্দোলন থাকবে।”
গতকাল নয়া পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় পুলিশি অভিযান এবং নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের বিষয় নিয়ে বিএনপি মহাসচিব স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন আসেন।
‘পুলিশি অভিযান কর্তৃত্ববাদের বর্হিপ্রকাশ’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘গতকাল নয়া পল্টনে পুলিশের এই জঘন্য, ন্যাক্কারজনক, বর্বরোচিত হামলা সরকারের ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদের বর্হিপ্রকাশ মাত্র। এই ঘটনা প্রমাণ করে বর্তমান সরকার গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না। তারা বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবার সাংবিধানিক অধিকারও কেড়ে নিয়েছে। যা গণতন্ত্র, রাজনীতির জন্য অশনি সংকেত।”
‘‘পুলিশের বর্বরোচিত, কাপুরষোচিত হামলার প্রতিবাদ ও নিন্দার ভাষা আমাদের নেই। গতকালের ঘটনা গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরাগ ঠুকে দেওয়ার শামীল। আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে গণ-আন্দোলনে পতনের ভয়ে ভীত হয়ে দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।”
সরকারকে অগণতান্ত্রিক পথ থেকে সরে আসার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব। একই সঙ্গে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পুলিশ প্রত্যাহার এবং ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠানের প্রতিবন্ধকতা দূর করার দাবিও জানান তিনি।
অথন্যায় সকল দায় সরকারকে বহন করতে হবে বলে হুশিয়ারি দেন ফখরুল।
‘পুলিশের বোমা বিস্ফোরণ-উদ্ধার নাটক’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আমাদের অসংখ্য নেতা কর্মীকে পুলিশ সেখান থেকে গ্রেফতার করেছে। অফিসের কর্মচারিদেরও তারা গ্রেফতার করে্রেছ। এরপর পুলিশ নিজেদের রেখে আসা বোমা উদ্ধার ও বিস্ফোরণ নামের নাটক সাজাঢ ও মিথ্যাচার করে।”
‘‘আমি যখন গতকাল বিএনপি অফিসে যেতে চাই সেখানে তারা আমাকে ঢুকতে দেয়নি। আমার সামনেই পুলিশ সেখানে অসংখ্য বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। শুধু পুলিশ নয়, পুলিশের সাথে সোয়াদ বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এই সন্ত্রাসে নিয়োজিত ছিল। যে গুলি করেছে তার আলোকচিত্র এসেছে গণমাধ্যমে, আর্জেন্টিনার ড্রেস পরে গুলি করছে।”
‘কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অভিযানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘পুলিশ দাবি করছে যে, বিএনপি কার্যালয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য পাওয়া গেছে এবং অনেক পাওয়া গেছে, কয়েক বস্তা নাকী পাওয়া গেছে। তারা উদ্ধারের তল্লাশি চালানোর জন্য ক্রাইম সিন ঘোষণা করেছে নাকী আমাদের অফিসসহ এলাকাটিকে।”
‘‘অথচ আইন হচ্ছে কোনো বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালাতে যদি হয় সেই বাড়ির মালিককে সঙ্গে রাখতে হবে। নিরপেক্ষ সাক্ষী থাকতে হবে। সাধারণত এই ধরনের তল্লাশি চালাতে হলে সার্চ ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে হয়। এই ক্ষেত্রে কিছুই করা হয়নি। উপরন্তু আমাদের কার্যালয়ে না ঢুকতে দিয়ে পুলিশ চার ঘণ্টা বিএনপি কার্যালয়ের ভেতরে ভাংচুর করেছে, বোমা রেখেছে, এই সমস্ত বিস্ফোরক নাটক তারা তৈরি করেছে।”
তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ বিএনপি অফিসে অযাচিতভাবে প্রবেশ করে নিচ তলা থেকে ৬ তলা পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন কক্ষ তচনচ করেরেছ। এমনকি দলের চেয়ারপারসনের কক্ষ, মহাসচিবের কক্ষ, অফিস কক্ষের দরজা তারা অন্যায়ভাবে ভেঙ্গে প্রবেশ করে এবং সকল আসবাবপত্র, ফাইল, গুরুত্বপূর্ণ নথি তচনচ করে।”
‘‘তারা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, হার্ডডিস্ক এমনকি দলীয় সদস্যদের প্রদেয় মাসিক চাঁদার টাকা, ব্যাংকের চেক বই, নির্বাচন কমিশন সংক্রান্তসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে গেছে।”
‘১৬০ বস্তা চাল উদ্ধার প্রসঙ্গ’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমাদের ঢাকা বিভাগের সমাবেশ। বিভিন্ন নেতা-কর্মীরা আসবেন সমাবেশের উপস্থিত হতে। আমি জানি না, আমার নলেজেই নাই। এমনো তো হতে পারে সেটা দেয়া হয়েছিলো ওই সমাবেশে যারা আসবেন তাদের জন্য খিচুরি-টিচুরি রান্নার করার জন্য এটা হতে পারে।”
‘‘তবে ওইখানে ১৬০ বস্তা চাল রাখার কোনো জায়গাই নাই। এটা পুরোপুরি মিথ্যা, এ টোটালি ব্ল্যাটেড লাই। আর দুই লক্ষ বোতল রাখাও জায়গা সেখানে নেই।”
‘আওয়ামী লীগ একটা সন্ত্রাসী দল’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে তারা যে বলেছেন, পাড়া-মহল্লায় পাহারা দেবে- এরকম বিষয়গুলো খুব পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে যে, তারা পুরোপুরিভাবে একটা সন্ত্রাসী দল। গণতন্ত্রের যে মূল কথা-সহনশীলতা এবং বিরোধী দলকে রাজনীতি করতে দেয়া যেটা আমার সংবিধান সম্মত অধিকার-সেগুলোতে তারা বিশ্বাস করে না। তারা যে ভয় ও ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে দেশ পরিচালনা করছে সেটা আরো স্পষ্ট হয়।”
‘‘ওবায়দুল কাদের(আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক)সাহেবের কথা থেকে এবং ঢাকার ঘটনা থেকে এটা পরিস্কার হয়ে যায় যে, এটা একটা পরিকল্পিত প্লট যে প্লট তৈরি করে তারা ১০ ডিসেম্বর আমাদের শান্তিপূর্ণ যে সমাবেশ সেটাকে তারা পন্ড করতে চায়-এটা আমরা প্রথম থেকে বলে আসছি। আওয়ামী লীগ যে দল তার দুইটা বিষয় আছে- একটা হচ্ছে সন্ত্রাস আরেকটা হচ্ছে দুর্নীতি।”
‘সমাবেশে বসে যাবে : ক্ষমতাসীনদের অপপ্রচার’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা ওদের এই প্রচারণায় বেশি গুরুত্ব দেই না। কারণ জনগণ ওদের এই প্রচারনায় বিশ্বাস করে না। আমাদের কনসার্ণ জনগম। জনগণ খুব ভালো করে বুঝে গেছে যে, আওয়ামী লীগ একটা মিথ্যাচার করা দল।”
‘‘তারা এই মিথ্যাচার করে ভুল ভুল প্রতারণা করে, মানুষকে ভুল বুঝিয়ে যেমন উন্নয়ন বিভ্রম সৃষ্টি করেছে, তেমনি একইভাবে ভুল প্রচার করে গণতন্ত্র ও রাজনীতি বিভ্রম শুরু করে্ছে। এটা ছাড়া তারা টিকতে পারে না।”
‘যুগপৎ আন্দোলন প্রসঙ্গে’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আমরা যুগপৎ আন্দোলন করবো।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, আবদুল কাইয়ুম, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, নাজিম উদ্দিন আলম, জহির উদ্দিন স্বপন, ফাহিমা মুন্নী, জিএম সিরাজ, আলী নেওয়াজ খৈয়াম, সুলতান মো. বাবু, আবুল হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।