করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে সরকার দুর্নীতি করছে-মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০৩ এএম, ২৯ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:২৯ পিএম, ১০ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে সরকার দুর্নীতি করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দলের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই অভিযোগ করেন। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির উদ্যোগে স্বাস্থ্য খাত ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শীর্ষক প্রামাণ্য চিত্রের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, এতো বড় একটা করোনা অতিমারি আমাদেরকে আক্রমণ করেছে, সারা বিশ্ব আক্রমণ করেছে এটাকে মোকাবিলা করার জন্য তাদের ভূমিকাটা দেখেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে শুধু তারা দুর্নীতি করবার জন্য কাজগুলো করেছে। এমনভাবে শুরু হয়েছে যে, এটা এখন ভঙ্গুর অবস্থায়। এখন ভ্যাকসিন নিয়ে শুরু হয়েছে। এই ভ্যাকসিনেও কিভাবে দুর্নীতি হচ্ছে। দুই ডলার ৩৩ সেন্ট দিয়ে কেনা ভ্যাকসিন- এরা (সরকার) চার ডলার দিয়ে কিনছে। সেখানে মধ্যস্বত্বভোগী তাদের নিজস্ব একজন সুবিধাভোগীকে তারা সেই দায়িত্ব্ অর্পণ করেছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের হাতে স্বাস্থ্য খাত ধ্বংস হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ কোনো স্বাস্থ্য সেবা পায় না। এখানে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাধারণ মানুষ যাদের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া সেটা তারা পাচ্ছে না। প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখবেন এখানে একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে-দুর্নীতি। যার ফলে কি করে জনগণের পকেটে থেকে টাকা বের করে নিয়ে এসে তাদের পকেটে ভরবে। যার ফলে কি হয়েছে? দুই শ্রেণি হয়েছে। একটা দরিদ্র শ্রেণি আরেকটা বিত্তশ্রেণি। বড় লোক শুধু বড়ই হয়েছে আর গরীবেরা শুধু গরীবই হয়েছে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বাধীনতার যে সুবর্ণ জয়ন্তী আমরা পালন করতে যাচ্ছি, সেই জয়ন্তীতে আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে সবচেয়ে বড় ফোকাস পয়েন্টে নিয়ে আসার চেষ্টা করবো এবং তার অবদানসমূহ নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছিয়ে দিতে হবে। এই সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে শহীদ জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করছে, ইতিহাসকে বিকৃত করছে। সাতক্ষীরার সাবেক সংসদ সদস্য দলের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৩৫ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারের নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তিকে বিনষ্ট করতে চায়, সমস্ত গণতন্ত্রের যারা নেতা-কর্মী তাদেরকে ধবংস করতে চায়। তারই ফলশ্রুতিতে আজকে আমাদের বিরুদ্ধে ৩৫ লাখ মামলা, ৩৫ লাখ আসামি। সেই পুরনো মামলা নিয়ে আসছে। গত পরশু সাতক্ষীরায় ২০০২ সালে একটি মামলায় আমাদের দলের সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ প্রায় ৩৪ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। ৪ ফেব্রুয়ারি ওই পুরনো মামলার রায় হবে। সম্ভবত সেই মামলায় তাদেরকে সাজা দেয়া হবে। এটা হচ্ছে সরকারের অপকৌশল যে, এভাবে জাতীয়তাবাদী, দেশপ্রেমিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমরা এই গ্রেফতারের নিন্দা ও তাদের মুক্তি দাবি করছি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও ডা. মাহমুদুর রহমান নোমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে চিকিৎসকদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম সেলিম, মোফাক্কারুল ইসলাম রানা, আবদুস শাকুর খান, আজহারুল ইসলাম, জাহিদুল কবির, ফেরদৌস আহমেদ, নিলুফার ইয়াসমীন, জাহানারা বেগমসহ বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক হুইপ সৈয়দপুরের নেতা শওকত চৌধুরীর বিএনপিতে যোগদান উপলক্ষে অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, এই যে নির্বাচন কমিশন একটা আছে। আপনারা জানেন যে, এই নির্বাচন কমিশন আসলে নিরপেক্ষ কোনো সংগঠন নয়। এই প্রতিষ্ঠানটি এখন সরকারের, আওয়ামী লীগের একটা লেজুড়ভিত্তিক একটা সংগঠনে দাঁড়িয়ে গেছে। মূলত তারা তাদের একটা অঙ্গসংগঠনে পরিণত হয়েছে। এই নির্বাচন কমিশনটি একটি সাংবিধানিক সংস্থা। এটার দায়িত্ব হচ্ছে নিরপেক্ষভাবে, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা দেখছি যে, তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত করেছে। যে দেশে সংবিধানের মূল কথা হচ্ছে, জনগণ হচ্ছে রাষ্ট্রের মালিক এবং জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করবে, তাদের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। আমরা বার বার করে বলেছি, এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। আমরা দাবি করেছি যে, নির্বাচন কমিশনের এই মুহূর্তে পদত্যাগ করা দরকার, এই সরকারের এই মুহূর্তে পদত্যাগ করা দরকার এজন্যে যে, তারা সংবিধানকে লঙ্ঘন করে জনগণের অধিকারকে কেড়ে নিয়েছে এবং বিনা ভোটের একটা বেআইনি সরকার তারা হয়ে আছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার নির্বাচন কমিশন পরিচালনার কোনো যোগ্যতা নেই বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। চট্টগ্রাম সিটি করোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এ নির্বাচনে যা হয়েছে তা আপনারা পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন। একেবারে রক্তাক্ত, মানুষ মারা গেছে ২ জন। বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্রে থাকতে দেয়া হয়নি, তাদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে বের করে দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, এখন প্রত্যেকটি নির্বাচনেই প্রশাসনকে পুরোপুরি ব্যবহার করা হচ্ছে। বিএনপির প্রতিপক্ষ এখন আর আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপির প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই পুলিশ প্রশাসন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বিএনপি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাস করে। অর্থাৎ বিএনপি কখনো ভিন্নপথে বন্দুক-পিস্তল নিয়ে জোর করে অথবা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করে না। বিএনপি জনগণের সমর্থনের মধ্য দিয়েই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। সেই জন্য তারা সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে। অনেকে বলেন, এই নির্বাচন করার কী যুক্তি আছে? আমরা বলি এই নির্বাচন করাটা গণতান্ত্রিক সংগ্রামের একটা অংশ হিসেবে নিয়েছি। নির্বাচনে আমাদের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সম্পৃক্ত করতে পারি এবং জনগণের কাছে যেতে পারি। যেটা অন্য সময় যাওয়াটা কঠিন দুষ্কর ব্যাপার। যেতেই দেয় না, মুভ করতে দেয় না। সভা-সমিতি-মিটিং করতে দেয় না। যেটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ন্যূনতম অধিকার মানুষের জন্য। সেই ডেমোক্রেটিক স্পেসটা তারা নিয়ে নিয়েছে। সেই কারণে আমরা নির্বাচনে অংশ নেই।
নতুন যোগদানকারী নেতা শওকত চৌধুরীকে বরণ করে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শওকত চৌধুরী সাহেবকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি আশা করি, যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলছে সৈয়দপুরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তিনি নেতৃত্বে দেবেন। আজকে বিএনপিতে যোগ দিচ্ছে আরো অনেকে। বিএনপি হচ্ছে একমাত্র দল যারা গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে পারে, যারা দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারে। অতীতে বিএনপি গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে, আগামীতেও ফিরিয়ে আনবে। আগামী দিনগুলোতে বিএনপির নেতৃত্বে ইনশাল্লাহ সমস্ত রাজনৈতিক দলকে নিয়ে যে গণঐক্য তৈরি হবে, সকল মানুষকে নিয়ে যে গণঐক্য তৈরি হবে সেই গণঐক্যের মাধ্যমে যে জোয়ার সৃষ্টি হবে, সেই উত্তাল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো।
যোগদানকারী নেতা শওকত চৌধুরী বলেন, জাতীয়তাবাদকে উদ্ধার করার সময়। এখন দেশে দুই দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। দুইটাই গণতান্ত্রিক দল। আজকে আওয়ামী লীগ যে গণতন্ত্রটাকে প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে বা চালাচ্ছে সেটা হলো প্রশাসনিক গণতন্ত্র। জনগণের গণতন্ত্র তাদের মধ্যে নাই। জনগণের গণতন্ত্র রয়েছে বিএনপিতে। জনগণের গণতন্ত্রের জন্য তারা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করছে। এই যোগদানের মাধ্যমে আমি সেই সংগ্রামের সাথে সম্পৃক্ত হলাম। আপনারা জানেন, আমি ছাত্রদলের প্রেসিডেন্ট ছিলাম। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাথে আমার অনেক স্মৃতি আছে, ম্যাডামের সাথে আমার বহুবার দেখা হয়েছে। আজকে আমি আমার পুরনো দল বিএনপিতে ফিরে এসেছি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন যাতে এই প্রশাসনিক গণতন্ত্রেকে নস্যাৎ করে আমরা সত্যিকারের গণতন্ত্র, জনগণের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, সৈয়দপুর বিএনপির আহবায়ক আবদুল গফুর সরকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ফরহাদ হোসেন আজাদ, সৈয়দপুর বিএনপির সদস্য সচিব শাহীন আখতার, রংপরের জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম, বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খানসহ সৈয়দপুরের স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।