বাবার জন্মদিনে ফখরুল-কন্যার আবেগঘন স্ট্যাটাস
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩:০৬ এএম, ২৭ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৩১ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
জন্মদিনের প্রথম ভোরে প্রবাসী কন্যা মির্জা সামারুহ ও ঢাকায় ছোট মেয়ে মির্জা সাফারুহ’র টেলিফোনে ঘুম ভেঙেছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের।
আজ মঙ্গলবার ২৬ জানুয়ারি তার ৭৩তম জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের এইদিনে তার জন্ম হয় ঠাকুরগাঁওয়ে। জন্মদিনের কোনো অনুষ্ঠান নেই। বন্ধু-বান্ধব, নেতৃবৃন্দের অনেকে টেলিফোন করে বিএনপি মহাসচিবকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কয়েকজন বিদেশি বন্ধুও সকালে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাকে।
সকালে মির্জা ফখরুল বলেন, ৭৩ বছরে পা রাখলাম। জন্মদিন মানে আরো একটি বছর চলে গেছে, বৃদ্ধ থেকে বৃদ্ধের পথে। বড় মেয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে টেলিফোন করেছে, হ্যাপী বার্থ ডে বললো। ছোট মেয়ে ঢাকায় থাকে। সেও ভোরে বাবার ঘুম ভাঙিয়েছে, উইয়িশ করেছে। দুই কন্যা নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রাহাত আরা বেগমের সংসার। ভাড়া বাসায় তারা উত্তরা থাকেন। বড় মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগের অধ্যাপক। মির্জা শামারুহ অস্ট্রেলিয়ায় স্বামী-সন্তানকে নিয়ে আছেন। সেখানে সিডনির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরিয়াল ফেলোশিপ নেন। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানব্যেরায় ফেডারেল মেডিজেল কাউন্সিলে সিনিয়র সাইন্সন্টিস্ট। ছোট মেয়ে মির্জা সাফারুহ ঢাকার ধানমন্ডির ‘স্যানি ডেল’ স্কুলে শিক্ষকতা করেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ৭৩তম জন্মদিন উপলক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার বড় মেয়ে শামারুহ মির্জা। মির্জা ফখরুল-কন্য শামারুহ মির্জার ফেসবুক স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো-
আমরা দুই বোন যখন ছোট্ট ছিলাম, আমার বাবা চাকরি ছেড়ে, পুরো পরিবারকে ঢাকায় ফেলে ঠাকুরগাঁওয়ে চলে যান। এক-দুই দিন না, বছরের পর বছর আমরা বড় হয়েছিলাম বাবাকে কাছে না পেয়ে, কারণ তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করবেন। খুব কঠিন ছিল আমাদের বড় হওয়া। আমরা কষ্ট পেয়েছি, বিরক্ত হয়েছি কিন্তু আমার বাবাকে কোনো দিন নিরাশ হতে দেখিনি। ৩০ বছর পেরিয়ে গেল, আমরা টুক টুক করে বড় হলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি, পিএইচডি করেছি, চষে বেড়িয়েছি পৃথিবী। প্রায়ই ভাবি, আমার বাবাও শিক্ষক ছিলেন, তার জন্যেও আমার এই জীবনটা সম্ভব ছিল। কিন্তু তিনি কঠিনকে ভালোবেসেছিলেন আপনাদের জন্য। সত্যিই বলছি আপনাদের জন্য। মির্জা আলমগীর এই ৭৩ বছরেও হতোদ্যম হননি।
আজকে এই জেলে তো কালকে ওই কোর্টে। শরীরটাও ভালো না। আমি তার মেয়ে আমার দুশ্চিন্তার কোনো শেষ নেই। জিজ্ঞেস করলেই আব্বু বলে, লড়াই আমাদের করতেই হবে শেষ পর্যন্ত। মির্জা আলমগীর বাসায় আমাদের যা বলেন, যে ভাষায় বলেন, আপনাদেরও ঠিক তাই বলেন মন থেকে বলেন। তার চেহারা একটাই। মির্জা আলমগীর প্রতিশোধের জন্য রাজনীতি করেননি। তিনি শুধু একটাই জিনিস চেয়েছেন সারা জীবন গণতন্ত্র, সাধারণ মানুষের উন্নতির রাজনীতি। বাংলাদেশের আজকের পরিস্থিতিটা খুবই সহজ আসলে, আপনি যদি চিন্তা করেন। হয় আপনি সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের পক্ষে, না হলে আপনি শহরের কিছু কোটিপতির আরো বড়লোক হওয়ার পক্ষে। হয় আপনি ইনসাফের পক্ষে, না হয় আপনি বিনা বিচারে মানুষকে হত্যার পক্ষে, রামদা আর হাতুড়ির পক্ষে। ক্লিশে মনে হতে পারে কিন্তু আব্বুর সারা জীবন না হলেও অন্তত আমার সারা জীবনটুকু তিনি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্যেই দিয়েছেন। আজকে তার প্রয়োজন আপনাদের। আপনারা কেন ধরেই নিয়েছেন যে লুটপাট আর হত্যাই বাংলাদেশের একমাত্র পরিণতি। আপনারা কি স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছেন? মানুষটা তার যৌবন দিয়েছেন এই দেশের সাধারণ মানুষের জন্য, এই শেষ বয়সে এসে ক্ষমতাধর আর লুটেরাদের বিরুদ্ধে লড়ছেন। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। মির্জা আলমগীরের সারা জীবনের রাজনীতি বৃথা যাবে না। আপনি আর আমি এই ঘুরে দাঁড়ানোর রাজনীতির অংশ হবো। আমরা আমাদের সন্তানদের এমন বাংলাদেশ দিয়ে যাব যেন তারা গর্ব বোধ করতে পারে। শুধু বাংলাদেশ স্বাধীন হলে চলবে না, বাংলাদেশের মানুষকেও স্বাধীন হতে হবে!
মির্জা ফখরুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে শিক্ষাকতা পেশায় যোগ দেন। তিনি ঢাকা কলেজে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। ছাত্রজীবনে ফখরুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন শাখার সভাপতি এবং এসএম হল শাখারও নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৬ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন তিনি। ১৯৮৮ সালে ফখরুল ঠাকুরগাঁও পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি এবং কৃষক দলের প্রথমে সহ-সভাপতি এবং পরে সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন দীর্ঘদিন।
তিনি বিএনপি থেকে দুই বার সংসদ সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। ১/১১’র বিএনপির দুঃসময়ে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির সঙ্গে থেকে মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পাশে ছিলেন মির্জা ফখরুল। দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে মির্জা ফখরুল সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এবং খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর ২০১১ সালে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এবং ২০১৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব নির্বাচিত হন ফখরুল। ২০১৮ সালে একাদশ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসন থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি শপথ গ্রহণ না করায় ওই আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির জিএম সিরাজ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।