অবশেষে সর্বোচ্চ আদালতে জামিন পেলেন ছাত্রদল নেতা বাবর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩০ এএম, ২৬ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০২:০৩ পিএম, ৬ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলায় অবশেষে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে জামিন পেয়েছেন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বাবর।
গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশ বহাল রাখেন। সাজ্জাদ হোসেনের পক্ষে আপিল বিভাগে মামলা পরিচালনা করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। সাথে ছিলেন বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
‘আইনমন্ত্রী আনিসুল হক করোনা আক্রান্ত’ গত বছরের ৩ জুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস দেয়ার ঘটনায় পরদিন ৪ জুন তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে আখাউড়া থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন নয়ন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, সাজ্জাদ হোসেন বাবর তার ফেসবুক আইডি থেকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এমপি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর পোস্ট ও কমেন্ট করে অপপ্রচার করেছে। যার ফলে পরপর দুইবার আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনকারী আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এমপির ব্যক্তিগত সুনামসহ আওয়ামী লীগের এবং সহযোগী অঙ্গসংগঠনের তথা দেশের গণমানুষের মনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। ওই মিথ্যা বিভ্রান্তিকর পোস্টকে কেন্দ্র করে মন্ত্রীর এলাকার (কসবা-আখাউড়া) জনমনে আতঙ্ক বিরাজসহ আইনশৃঙ্খলা অবনতি হওয়ার আশঙ্কা বিদ্যমান।
এই মামলা দায়ের করার পর আখাউড়া থানা তার বার্তার মাধ্যমে চন্দনাইশ থানাকে জানায়। চন্দনাইশ থানা পুলিশ সাজ্জাদ হোসেন বাবরকে গত ৫ জুন গ্রেফতার করে আখাউড়া থানায় পাঠায়। এরপর সাজ্জাদ হোসেন বাবরের পক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সেশন জজ আদালতে জামিন আবেদন করা হলে গত ৩০ জুন তার জামিন আবেদন খারিজ করেন আদালত এবং তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন।
এরপর সাজ্জাদ হোসেন বাবরের আইনজীবী ও বিএনপির আইনসম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল তারপক্ষে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। গত ৪ অক্টোবর বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি খন্দকার দিলুরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে এক বছরের জন্য জামিন দেন এবং তার জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেন।
হাইকোর্টের জামিন আদেশের পর সরকার পক্ষ তার জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করলে চেম্বার আদালত তার জামিন স্থগিত করেন। এরপর ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার এবং জামিন চেয়ে সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে গত বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে জামিন দেন।
সাজ্জাদ হোসেন বাবর এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে আছেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় গত ১৩ অক্টোবর তার মা মারা গেলেও তিনি মায়ের নামাজে জানাজা ও দাফনে অংশ নিতে পারেননি।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, বাবরের বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে তার আইনগত ভিত্তি নেই এবং তা জামিনযোগ্য। তিনি বলেন, এই আইনের অপব্যবহার করে একজন নিরীহ নাগরিককে শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী হওয়ার কারণে গত সাত মাস ধরে কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে থাকতে হচ্ছে। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো তিনি তার গর্ভধারিণী মাকে এই কারাগারে থাকা অবস্থায় হারিয়েছেন। এমনকি মায়ের নামাজে জানাজা এবং দাফনেও অংশ নিতে পারেননি।
তিনি আরো বলেন, এই মামলা যে ভিত্তিহীন তার প্রমাণ দেশের সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ জামিন দিয়েছেন। রাষ্ট্রযন্ত্র এই আইনকে অপব্যবহার করে মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলছে।