বাংলাদেশকে ‘নতজানু’ করে রাখার ষড়যন্ত্র চলছে-মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৪৪ এএম, ২২ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৩০ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
বাংলাদেশকে ‘নতজানু’ করে রাখার ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বৃহস্পতিবার বিকালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে দলের এক ওয়েবিনারে তিনি এই মন্তব্য করেন। বিএনপির স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে গঠিত ‘সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম কমিটি’র উদ্যোগে ‘স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধ্যান-ধারণা’ শীর্ষক এই ওয়েবিনার হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন শিক্ষাবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ।
মির্জা ফখরুল বলেন, তারা (সরকার) আজকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের মানুষকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন, বাংলাদেশের মানুষকে তাদের যে পরিচিতি আছে সেখান থেকে দূরে ঠেলে দিতে চাইছেন। আজকে একটা ষড়যন্ত্র চলছে যে, বাংলাদেশ তার যে স্বতন্ত্র, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব তাকে ভুলে গিয়ে সে অন্য জায়গায় নতজানু হয়ে থাকুক- এভাবে পরিকল্পনা চলছে। যে পরিকল্পনাকে আমাদের রুখে দিতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই পতাকাই ধারণ করেছেন যে পতাকা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান তার হাতে তুলে দিয়েছিলেন এবং একইভাবে আমাদের নেতা তারেক রহমান তিনিও সেই পতাকা তুলে ধরছেন। আজকে আমাদের সেই পতাকা তুলে ধরেছেন। এই পতাকাই মুক্তির পতাকা। আমাদের স্লোগান একটাই- আমরা আজকে শৃঙ্খলিত হতে চাই, আমরা আজকে মুক্ত হতে চাই এবং মানুষকে এই অবস্থা থেকে বাঁচাতে চাই। শহীদ জিয়াউর রহমানের যে আদর্শ সেই আদর্শ অনুসরণ করে, আমরা মানুষকে বাঁচাতে চাই, দেশকে বাঁচাতে চাই। আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাই।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান যে গানটি ভালোবাসতেন- ‘প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ’। আমার অথবা আমাদেরও শেষ ঠিকানা হচ্ছে বাংলাদেশ। যেটা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের দলীয় সংগীত আছে তার মধ্য দিয়ে এটা ফুটে উঠে। বাংলাদেশ সম্পর্কে এই যে আমাদের অনুভূতি, এই অনুভূতি যতই প্রবল হবে, ততই কিন্তু আমরা জাতি হিসেবে শক্তিশালী হবো।
মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদÑ এই দুইটাকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ শহীদ জিয়াই বাংলাদেশের জনগণের জন্য নতুন একটা পরিচিতি, স্বতন্ত্র একটা অস্তিত্ব তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে, তার রাজনীতির মধ্য দিয়ে সেটা প্রমাণ করেছেন। তিনি তার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তার মধ্য দিয়ে জাতিকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ উপহার দিয়েছিলেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটি একটা দর্শন। এই দর্শনের ওপর ভিত্তি করেই আমাদের জাতি সত্তা দাঁড়াতে শুরু করেছে। অলরেডি ৫০ বছর পার করে ফেলেছি আমরা। আপনি দেখবেন আওয়ামী লীগ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ধারণা বিরোধিতা করে। কিন্তু আজকে যখন পাসপোর্ট তৈরি করেছে নতুন করে, সেই পাসপোর্টেও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ রাখতে বাধ্য হয়েছে। আসলেই ওটাই সত্য ও ওইটাই সঠিক কথা।
জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আসলে জিয়াউর রহমানকে আলাদা করে স্বাধীনতার কথা চিন্তাও করা যায় না। কারণ তার স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে গোটা জাতি অনুপ্রাণিত হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এই নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলতে পারেন। আমাদের যারা সরকারে আছে তাকে অখ্যাত মেজর হিসেবে চিহ্নিত করতে চান। এই অখ্যাত মেজরের ঘোষণায় কিন্তু তখন বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তখন তাদের বড় বড় নেতারা সেদিন জনগণের সামনে সেই ঘোষণাটি দিতে পারেননি। যারা আজকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ভুলিয়ে দিতে চান, তার সম্পর্কে বিকৃত কথা, ইতিহাস বিকৃত করে জনগণের সামনে তুলে ধরতে চান, নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে চান তাদের উদ্দেশে শুধু একটি কথা বলতে চাই- যার যে অবদান সে অবদানটাকে স্বীকার করুন।
অন্যথায় আপনারা যেটাকে মহান করে তুলে ধরতে চান, সবচেয়ে বড় এবং একমাত্র নেতা হিসেবে দেখাতে চান তাকেও কিন্তু খাটো করা হয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যেটা প্রাপ্য সেটা তাকে অবশ্যই দিতে হবে। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি বাংলাদেশের রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তার ডাকেই মানুষ যুদ্ধ ক্ষেত্রে নেমে এসেছিল।
১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। একেবারে হতাশায় নিমজ্জিত একটা জাতিকে তিনি একটা আশার আলো দেখিয়েছিলেন এবং কর্মে উদ্দীপ্ত করেছিলেন-এটা বাস্তবতা এবং তারই ফলে আজকে বাংলাদেশ যেখানে দাঁড়িয়েছে তার ভিত্তিটা তিনি নির্মাণ করে দিয়েছেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে একটা জাতিকে যেহেতু তিনি একটা পরিচিতি দিতে পেরেছিলেন, একটা স্বাতন্ত্র্য দিয়েছিলেন সেজন্য আজকে জাতি এই জায়গায় এসেছে এবং লড়াইটা করছে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে মানুষের মূল আকাক্সক্ষাটা ছিল একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, একটা মুক্ত সমাজ ব্যবস্থা। দুর্ভাগ্য আমাদের, আজকে এই ৫০ বছর পরে আমরা এটা পালন করতে যাচ্ছি-কী বলে পালন করব? আমাদের তো লজ্জা হওয়া উচিত যে, আমরা ৫০ বছর পরেও একটা সুষ্ঠু রাজনৈতিক কাঠামো নির্মাণ করতে পারিনি, আমরা নির্মাণ করতে পারিনি যে, একটা চমৎকার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা পরিবর্তন হবে এবং সেটার জন্য দায়ী আজকে যারা ক্ষমতা জোর করে দখল করে আছে, অস্ত্র নিয়ে দখল করে আছে, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তাদের কারণেই এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
কমিটির আহবায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব ইসমাইল জবিহউল্লাহর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত জজ ইকতেদার আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সিলেটে বিভাগে ‘স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী’র প্রথম সভা অনুষ্ঠিত : স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি সিলেট বিভাগের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট নগরের একটি হোটেলে আয়োজিত প্রস্তুতিমূলক প্রথম সভায় প্রধান অতিথি জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, শিগগিরই কেন্দ্রীয় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির নির্দেশনা এবং পরামর্শে সিলেট বিভাগের জেলা, উপজেলা ও তৃণমূল পর্যায়ে উদযাপন কমিটি গঠন করা হবে। সভার সভাপতি, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সিলেট বিভাগের আহবায়ক ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে বিএনপি পরিবার আজ ঐক্যবদ্ধ। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এক উজ্জ্বল নাম। শহীদ জিয়ার আদর্শের দল বিএনপি তাই ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ উদযাপনে । জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় উদযাপন কমিটির নির্দেশনা ও পরামর্শে সিলেট বিভাগে সর্বাত্মক শ্রদ্ধার সাথে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন- বিএনপির সিলেট বিভাগের সদস্য সচিব ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবনের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনেরর উপদেষ্টা ড. মো. এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সহ-সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, হাদিয়া চৌধুরী মুন্নি, নুরুল ইসলাম সাজু, সদস্য মিডিয়া কমিটি সিলেট বিভাগ ও সহ-সভাপতি সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সহ-সভাপতি মো. আনসার উদ্দিন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান শরীফ, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি আব্দুল কাদের হালিমী, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শোরমান আলী, জাতীয়তাবাদী কৃষক দল নেতা মাহবুবুর রহমান আউয়াল, জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের নেতা জাকির হোসেন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সালেহ আহমদ খসরু, সিলেট মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতা সিদ্দিকী, জাসাস সিলেটের সভাপতি জাসিম উদ্দিন প্রমুখ।
এছাড়াও গুলশানে চেয়ারপারসনের অফিসে স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন সচিবালয় কমিটির সভা হয়েছে সন্ধ্যা ৬টায়। এতে সভাপতিত্ব করেন আহবায়ক ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজয় কান্তি সরকার, সদস্য সচিব ও তথ্য গবেষণা ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রিয়াজুদ্দিন নসু।