চট্টগ্রামে জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকীর আলোচনা সভায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
জিয়াউর রহমান দেশের প্রথম মুক্তিযোদ্ধা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:১৩ এএম, ৩০ মে,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৩৩ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, স্বাধীনতার ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বিদ্রোহ চট্টগ্রাম থেকেই হয়েছে। জিয়াউর রহমান দেশের প্রথম মুক্তিযোদ্ধা। তিনি পাকিস্তানের সৈন্যদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। পাকিস্তানিদের হত্যা করে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। নেতারা কিন্তু যুদ্ধের অগ্রভাগে থাকে না, ওনি কিন্তু যুদ্ধে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের বিশাল অংশ মুক্ত করেছেন জিয়াউর রহমান। তিনি দেশের ক্ষমতা নেওয়ার পর বাংলাদেশের জন্য প্রথম একটি দর্শন প্রণয়ন করেন। একটি ভাবনা দিয়েছেন, একটি চিন্তা দিয়েছেন। সেটি হলো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ।
আজ রবিবার বিকালে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের মাঠে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪১ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি'র আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয় থেকে আলোচনা সভা শেষে নেতাকর্মীরা বের হওয়ার সময় সভাস্থলে অতর্কিত ভাবে বিষাক্ত গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে শ্বাসকষ্ঠ ও চামড়া, বুক জ্বালায় আহত হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর সহ শতাধিক নেতাকর্মী। এসময় উত্তেজনা দেখা দিলে আবুল হাশেম বক্কর পুলিশের সাথে কথা বলে এর প্রতিবাদ জানান। পরে সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশি জাতিয়তাবাদের দর্শন দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। অর্থাৎ এই সীমানার মধ্যে যারা আছে সবাই বাংলাদেশি। কেউ চাকমা, কেউ মারমা, কেউ হিন্দু, কেউ খ্রিস্টান-সবাইকে একতাবদ্ধ করার জন্য জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতিয়াতাবাদের প্রবর্তন করেন। দেশের উন্নয়নের ভাবনা দিয়েছেন, একদলীয় থেকে বহুদলীয় শাসনের দর্শন চালু করেন তিনি।
আমীর খসরু বলেন, জিয়াউর রহমান গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সমান সুযোগ রেখেছিলেন। কারণ এর আগে ছিল রাষ্ট্র পরিচালিত অর্থনীতি। অথাৎ আওয়ামী পরিচালিত অর্থনীতি। বাকশাল পরিচালিত অর্থনীতি থেকে বের হয়ে সবাই যাতে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে, সেই দর্শন তিনি প্রণয়ন করেন। আজকে খুনী, স্বৈর সরকার থাকার পরও অর্থনীতি একটি অবস্থান আছে। তার কারণ জিয়াউর রহমান। বিএনপি থাকলে অর্থনীতির গতি আরও বেড়ে যেত। বর্তমানে কিছু লোকের হাতে অর্থনীতি চলে গেছে। এই অর্থনীতিকে ফিরিয়ে আনতে হলে জিয়াউর রহমানের অর্থনীতি দর্শন নিয়ে আসতে হবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন বলেন, তারেক রহমান দেশে আসলে বিপ্লব হয়ে যাবে। বেগম খালেদা জিয়াকে একবার জন সম্মুখে আসতে দেন, দেখেন দেশে কী হয়। পুলিশের সাবেক আইজি শহিদুল হক বলেছেন- আওয়ামী লীগের জন্য ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না। তাদের অত্যাচারে কাজ করা যায় না। পুলিশ ভাইদের বলব, এখনই সময় জনগণের সঙ্গে থাকার। বিপদে পড়লে এরা আপনাদের সাহায্য করবে না।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান এই চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বে দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ আসেনি। বিশ্বের নেতারা বলেছেন, জিয়াউর রহমানের মতো দেশপ্রেমিক মানুষ হয় না। তারেক রহমান তার যোগ্য উত্তরসূরী। তিনি আসলে দেশের সব মানুষ তার হয়ে কাজ করবেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের একটি বড় স্তম্ভ। এই স্থানের গুরুত্ব দেশের মানুষের কাছে অনেক বেশি। কারণ শহীদ জিয়াউর রহমান এখান থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন। জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কেউ চাইলেই এই ইতিহাস পরিবর্তন করতে পারবে না।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি'র আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের আধুনিক রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা। তাঁর শাসনামল ছিল বাংলাদেশের স্বর্ণযুগ। কৃষি থেকে শুরু করে রেমিটেন্সসহ অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছিল জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। মহান মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন সেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করে বাংলাদেশকে উন্নত ও আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তাঁর ১৯ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাড়াতে পারতো। কিন্তু দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের কারনে তিনি তা করতে পারেননি।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বিদ্রোহ চট্টগ্রাম থেকেই হয়েছে। তাই চট্টগ্রামের ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধপূর্ব এবং যুদ্ধকালীন সময়ে অবিস্মরনীয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে নীরব ছিলেন না। এদেশের সেনাবাহিনীকে সংগঠিত করে তিনি পাক সেনাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছেন চট্টগ্রাম থেকেই।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, দেশের মানুষের আহবানে দেশ ও জাতিকে পথ দেখানোর জন্য জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছিল। জিয়াউর রহমান সে বাকশাল বিলুপ্ত করে বহুদলীয় ক্ষমতায়নের প্রবর্তন করেছেন। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ৫টি মৌলিক ইস্যুকে ধংস করে দিয়েছে। বিএনপি তা ফিরিয়ে দিয়ে জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। দেশ পরিচালনায় আওয়ামী লীগ যেখানে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি সেখানে সফল হয়েছে।