বাম জোট ছাড়ল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২৫ এএম, ২৬ মে,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৩৮ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় সরকার গঠন এবং সরকার পতনের ‘এক দফা দাবির’ আন্দোলনে জোর দিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট ছাড়ল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন। আন্দোলনের গতিমুখ নিয়ে বাম জোটে ভাঙনের সুর শোনা যাচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। গত মঙ্গলবার জোটের বৈঠকে দুই দলের সদস্য পদ স্থগিত করার মধ্য দিয়ে তা পরিণতি পেল। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা বলছেন, বাম জোটের মাধ্যমে আন্দোলন করে ‘সরকার পতন সম্ভব নয়’। জোটের আন্দোলনের কৌশলগত দিক নিয়েও প্রশ্ন ছিল তাদের। সেই মতানৈক্যের কারণে তারাই জোটের সদস্য পদ স্থগিত করতে বলেছিলেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বুধবার বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের কৌশল নিয়ে আমাদের মতপার্থক্য রয়েছে। জনগণের দাবি আদায়ের জন্য বৃহত্তর ঐক্য এবং আন্দোলনের বিকল্প নেই। ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে সব বাম, গণতান্ত্রিক শক্তিকে বৃহত্তর আন্দোলন ও তার ভিত্তিতে আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার তাগিদ থেকেই আমরা বাম জোটের সদস্য পদ স্থগিত রাখতে বলেছি। নির্বাচন সামনে রেখে আরও পাঁচটি দলের সঙ্গে মিলে নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ার প্রক্রিয়ায় আছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন। মূলত এ বিষয়টিই সম্প্রতি বাম জোটে ভাঙনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনে। গত নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টে থাকা নাগরিক ঐক্য, জেএসডি ছাড়াও রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নূরের দল গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন থাকছে সেই মঞ্চে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে প্রগতিশীল দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে ২০১৩ সালে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা গঠনের পর ২০১৮ সালের জুলাই মাসে বাম গণতান্ত্রিক জোট গঠনের ঘোষণা আসে। ওই বছর জোটগতভাবেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় দলগুলো। কিন্তু নির্বাচন বা আন্দোলন- কোনো দিকেই সাফল্য আসেনি। এর মধ্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন সম্প্রতি নতুন মঞ্চে যাওয়ার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলে বাম জোটে ভাঙন অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়। মঙ্গলবার প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন জোটের নেতারা। সেখানে সার্বিক বিষয়ে আলোচনার পর বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের নেতাদের বলা হয়, যে কোনো একটি জোটে থাকতে হবে। দুই জোটে থাকার সুযোগ নেই। পরে জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের বামজোটের সদস্য পদ স্থগিত রাখা হয়।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা দীর্ঘ দিন ধরে বাম জোটে আছি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাম জোট কোনোভাবেই ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের জন্য গণতান্ত্রিক বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না। বৃহত্তর গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হলে এর বাইরে গিয়ে গণতান্ত্রিক মঞ্চ তৈরির মাধ্যমে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাতে বাম জোটের নেতাদের আপত্তি ওঠে, যার ফলে আমরা নিজেরাই বলেছি আমাদের সদস্য পদ স্থগিত রাখতে।
নতুন মঞ্চের বিষয়ে সাকি বলেন, আমরা বাম জোটের বাইরে গিয়ে গণতান্ত্রিক মঞ্চ তৈরি করতে আরও পাঁচটি দলকে সঙ্গে নিয়েছি। তবে বামজোটও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে, যদি তারা মনে করেন। সাত দলীয় এই মোর্চার নাম আপাতত বলা হচ্ছে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। আগামী সপ্তাহেই এ মঞ্চের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। ভোটের আগে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের সঙ্গেও তারা আন্দোলনে যুক্ত হতে পারে বলে নেতাদের কথায় আভাস পাওয়া গেছে।
ভাঙনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে জোটের সমন্বয়ক ও ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার বলেন, গতকালের মিটিংয়ে জোটভুক্ত সকল দলই ছিল। জোটের বাইরে গিয়ে আরও একটি রাজনৈতিক মঞ্চ করার চেষ্টা নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে। তারা বলেছে, নির্দিষ্ট কয়েকটি দাবি নিয়ে তারা ওই মঞ্চ তৈরি করছে। আর বাম জোট শিক্ষা, খাদ্য, রাজনৈতিক, কর্মসংস্থান, আন্তর্জাতিক ইস্যুসহ অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কাজ করে। সেখানে দুই জায়গায় থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তারা বলেছে আমরা দুই জায়গায় থাকব। তবে আমরা বললাম না, দুই জায়গায় থাকার সুযোগ নেই, কারণ মঞ্চে সাম্প্রদায়িক শক্তি, মৌলবাদী গোষ্ঠী থাকতে পারে, তাদের সঙ্গে আমাদের আদর্শিক দূরত্ব থাকতে পারে। তাহলে আপনারা ঐ জোটেই থাকেন। পরে সর্বসম্মতিক্রমে জোটে তাদের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। দুই দলের সদস্যপদ স্থগিতের পর বাম জোটে এখন সাত দল সক্রিয় থাকল বলেও জানান সাত্তার।