ক্ষমা চান অন্যথায় জনগণ ক্ষমা চাওয়ারও সুযোগ দেবে না- প্রধানমন্ত্রীকে মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৬ এএম, ২৪ মে,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ১১:২৬ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতু থেকে টুস করে নদীতে ফেলে দেয়ার মন্তব্য ও কটূক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীকে জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, জনগণের কাছে ক্ষমা চান। অন্যথায় জনগণ আপনাদের ক্ষমা চাওয়ারও সুযোগ দেবে না। জনগণের কাছে শেখ হাসিনা ক্ষমা না চাইলে জনগণ তাকে টেনে নিচে নামাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নার্ভাস হয়ে পড়েছেন বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তার ক্ষমতার দিন শেষ, শেখ হাসিনা দেখতে পাচ্ছেন আর ক্ষমতায় আসতে পারবেন না।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ‘প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার হুমকির’ প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি। এই বিক্ষোভ সমাবেশে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে অসংখ্য নেতাকর্মী ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অংশ নেন।
সরকারপ্রধানের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এখন সময় আছে পদত্যাগ করুন। নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। তিনি বলেন, আমি নিন্দা ও ধিক্কার জানাই প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের জন্য, যিনি বেগম খালেদা জিয়াকে টুস করে পদ্মা থেকে ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। আজকে সমস্ত দেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে ধিক্কার ও নিন্দা জানাচ্ছে। কোনো সভ্য এবং গণতান্ত্রিক সমাজে এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করা যায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু করার বড়াই করছেন দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, পদ্মা সেতু আপনার একার না, আওয়ামী লীগের পৈতৃক সম্পত্তিও না। জনগণের পকেট থেকে যে ট্যাক্স কেটে নিয়েছেন, সেই টাকা দিয়ে করেছেন। এখানে যে দুর্নীতি করেছেন, তা আপনাদের সমস্ত দুর্নীতির সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণ জানতে চায়, পদ্মা সেতুর জন্য মানুষের কত টাকা কেটে নিয়েছেন? জাতির কত টাকা আপনারা এই পদ্মা সেতুতে ব্যয় করেছেন, আর কত টাকা নিজেদের পকেটে ভরেছেন?’
তিনি বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ উন্নয়ন উন্নয়ন করে চিৎকার করে। কিসের উন্নয়ন, কার উন্নয়ন করেছেন? উন্নয়ন করেছেন পি কে হালদারের, উন্নয়ন করেছেন আপনাদের শিক্ষামন্ত্রীর ভাইয়ের, উন্নয়ন করেছেন আপনাদের ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের (সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী) ভাইয়ের এবং উন্নয়ন করেছেন আপনাদের নিজেদের প্রত্যেকের, যারা আজ ক্ষমতায় আছেন তারা লুটপাটের রাজত্ব তৈরি করেছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দ্রব্যমূল্যের চাপে সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে গেছে। আমাদের কৃষক-শ্রমিক, যারা দিন আনে দিন খায় তারা আজ হিমশিম খাচ্ছেন না শুধু, তাদের আজ দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তারা জীবনযাপন করতে পারছে না। আপনাদের (সরকার) কোনো অসুবিধা হয় না। কারণ আপনি (শেখ হাসিনা) তো আজকে একটা দুর্গের মধ্যে নিজেকে বন্দি করে রেখেছেন, নিজেই করেছেন। নিজেই বলেছেন সেদিন, আমি তো আমার ঘরেই বন্দি। আপনি স্বেচ্ছায় বন্দি হয়েছেন। কারণ আপনি জনগণকে ভয় পান। তাই জনগণের সামনে আপনি আসেন না। জনগণের সামনে এলে আপনি জনগণের ভাষা বুঝতে পারতেন, জনগণ কি বলতে চায় তা বুঝতে পারতেন। তারা এই দেশকে একটা লুটপাটের রাজত্ব তৈরি করেছেন। জনগণের কোনো উন্নয়ন হয় না।
আওয়ামী লীগ দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে বলে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রত্যেক দিন অর্থনীতিবিদরা বলছেন- বাংলাদেশের অর্থনীতি রসাতলে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছেন। প্রত্যেক দিন খবরের কাগজ খুললে দেখা যায়, লুটপাট হচ্ছে। আর এর সঙ্গে জড়িত সরকারি দলের লোকেরা। তিনি আরও বলেন, আপনি বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার হুমকি দেন। তিনি হচ্ছেন সেই নেত্রী, যিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। যিনি কোনো দিনও নির্বাচনে পরাজয়বরণ করেননি।
বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তাঁকে এখন যদি উন্নত চিকিৎসা দেয়া না হয়, তাহলে তাঁর জীবন হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। আমরা বারবার বলেছি, তাঁকে মুক্তি দেন। তাই আজকে এখান থেকে দাঁড়িয়ে আহ্বান ও দাবি জানাতে চাই, এখনও সময় আছে তাঁকে মুক্তি দিন। বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেন। আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর যে মামলা আছে, তা তুলে নিন। যারা কারাগারে আছে তাদের মুক্তি দেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি পরিষ্কার করে বলছি, এখনো সময় আছে, পদত্যাগ করুন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচনে জনগণের যে সরকার গঠন হবে সেই সরকারই হবে জনগণের সরকার। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। তরুণ-যুবকদের বলতে চাই- এগিয়ে আসুন, সময় এখন আপনাদের, তারুণ্যের সময়। আপনাদের আজকে এদেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হবে, সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে হবে, দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে ও ঢাকা উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক এবং দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনুর যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমানউল্লাহ আমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নাল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, যুববিষয়ক সহ-সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, আমিরুল ইসলাম আলিম, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. মুস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।
এছাড়া বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করীম বাদরু, সহ-সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন নান্নু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি আনু মোহাম্মাদ শামীম, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসীন আলী, সহ-সাধারণ সম্পাদক সর্দার নুরুজ্জামান, সৈয়দ শহিদুল ইসলাম, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, মৎস্যজীবী দলের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ওলামা দলের সদস্যসচিব নজরুল ইসলাম তালুকদার, ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা নবী উল্লাহ নবী, ইউনুস মৃধা, ইশরাক হোসেনসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।