আ'লীগ সব ছাড়তে রাজি কিন্তু ক্ষমতা ছাড়তে রাজি না : শামসুজ্জামান দুদু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:১৬ এএম, ১৫ মে,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৫২ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক উদাহরণ টেনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতার সময় শেষ হয়ে এসেছে। তারা ভাবতেই পারে না ক্ষমতা ছাড়তে হবে। তারা ভাবে এটা মনে হয় তাদের জন্মগত অধিকার। আওয়ামী লীগ সব ছাড়তে রাজি কিন্তু ক্ষমতা ছাড়তে রাজি না। কিন্তু ক্ষমতা ছাড়তেই হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। না হলে আপনাদের পরিণতিও ভাল হবে না।
আজ শনিবার (১৪ মে) বিকালে তিনি কাজীর দেউরী নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে ‘দেশব্যাপী বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে’ আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাড়িতে, কুমিল্লায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদের গাড়িতে এবং ফেনীতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদীনের বাড়িতে হামলার প্রতিবাদ জানানো হয় এ সমাবেশ থেকে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবকে আমি ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেছেন ‘যারাই আওয়ামী লীগ করেছে; তারাই বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে’ অর্থাৎ দলের সবাই চোর সেটা তিনি স্বীকার করেছেন। তবে টাকা যেখানেই পাচার হোক বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তা দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। দেশের টাকা আকাশে যাক, আর সাগরে ভাসুক, সেই টাকা দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। আওয়ামী লীগ টাকা ছাড়া কিছু বোঝে না। ব্যাবসায়ীদেরকে এখন দশ নয় তাদের ১০০ শতাংশ কমিশন দিতে হয়।
বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না মন্তব্য করে দুদু বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বুঝতে পারবেন কতো ধানে কতো চাল। ১৩ বছর ধরে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার নির্যাতন করেছেন। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মামলা দিয়েছেন। তবে বিএনপি শহীদ জিয়ার দল। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। আমারা ভোট দেওয়ার অধিকার চাই, গণতন্ত্র ও গণনির্বাচন চাই। খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। নেত্রীকে মুক্ত করার কোন বিকল্প নেই। তিনি আসলে গণতন্ত্র ফিরে আসবে।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বাংলাদেশের পুলিশ দেশের জন্য রক্ত দিয়েছে। পুলিশের অনেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের পুলিশ সুনামের সঙ্গে কাজ করেছে। এই ৫০ বছরে পুলিশের বিরুদ্ধে কোন দেশের নিষেধাজ্ঞা আসেনি। পুলিশকে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। তারা পুলিশকে ডাকাতের দলে পরিণত করেছে। আমেরিকা তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। পুলিশ এখন দুবাইও যেতে পারে না, ভারতেও মনে হয় যেতে দেবে না।
সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক ও কক্সবাজারের সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, বাংলাদেশের মানুষের যে করুণ দুর্দশা, শুধু তেলের দাম বাড়ছে তা নয়, নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম বেড়েছে। এই অবস্থায় সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে দেশের মানুষকে রূপকথার গল্প শুনিয়েছিল-১০ টাকায় চাল খাওয়াবে, ঘরে ঘরে চাকরি দিবে, গ্রামকে শহরে রূপান্তর করবে। কিন্তু এখন ১০ টাকায় চালের বদলে ঘরে ঘরে হাহাকার ছাড়া কিছু দেয়নি। চাকরির বদলে ঘরে ঘরে দলীয় ক্যাডার বাহিনী দিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন বলেন, আওয়ামী লীগের অধীন কোনো নির্বাচন এদেশে হবে না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আসন ভাগাভাগির পরিকল্পনা করছে সরকার। কিন্তু আসন ভাগাভাগির নির্বাচন হতে দেওয়া যাবে না। আসন ভাগের নির্বাচনে যারা যাবে, তাদেরও প্রতিহত করবে বিএনপি।
সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, জনগণের মনে যে ক্ষোভ সেটারই প্রতিফলন ঘটেছে শ্রীলংকায়। রাজাপাকসের পরিবারের দমন পীড়ন ও লুটের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে সেখানকার মানুষ। তেমনই হবে বাংলাদেশের অবস্থা।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, বর্তমান সরকার তাদের বক্তৃতা বিবৃতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ চাইলেও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে বিরোধী দলের সভা সমাবেশ ও নেতৃবৃন্দের ওপর হামলায় সরকারের স্ববিরোধীতাই ফুটে ওঠে। বর্তমান আওয়ামী সরকার যে সন্ত্রাসনির্ভর তা এধরণের হামলায় স্পষ্ট হচ্ছে। ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় আবারো প্রমাণিত হলো দেশে এখন ফ্যাসিবাদী ও কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে।
সভাপতির বক্তব্যে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, গণতন্ত্রকে বিলীন করে আইনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে সরকারী দলের সন্ত্রাসীরা সমগ্র দেশটাকে রক্তাক্ত জনপদে পরিণত করেছে। নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্নে সরকার আরও লাগামহীন ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা পূর্ব পরিকল্পিত।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এস এম সাইফুল আলম ও ইয়াছিন চৌধুরী লিটনের যৌথ পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সি. যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব এম এ আজিজ, যুগ্ম আহবায়ক মো. মিয়া ভোলা, সৈয়দ আজম উদ্দীন, নাজিমুর রহমান, কাজী বেলাল উদ্দিন, মো. শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য অধ্যাপক ইউনুছ চৌধুরী, নুরুল আমিন, নুর মোহাম্মদ, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, কাজী সালাউদ্দীন, কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের শেখ নুরুল্লাহ বাহার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য লায়ন হেলাল উদ্দীন, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, মহিলাদলের ফাতেমা বাদশা, মনোয়ারা বেগম মনি, জেলী চৌধুরী, মহানগর ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলম, সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন প্রমূখ।