স্ত্রীর কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত অধ্যাপক এম এ মান্নান, ৩ দিনের কর্মসূচী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৩৯ পিএম, ২৯ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:০৮ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
স্ত্রীর কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র, সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ মান্নান।
আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অধ্যাপক এম এ মান্নানের প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অংশ গ্রহণ করেন।
পরে গাজীপুর মহানগরীর শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার বাদ জুমা অনুষ্ঠিত জানাজার নামাজে ১০ সহস্রাধিক মুসুল্লী অংশ গ্রহণ করেন।
জানাজার নামাজে আরো অংশ গ্রহণ করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, শ্রীপুরের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, মহানগর বিএনপির আহবায়ক সালাহউদ্দিন সরকার, যুগ্ন আহবায়ক শওকত হোসেন সরকার, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান, জাতীয় পার্টির নেতা ও সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন, অধ্যাপক মান্নানের ছেলে এম মঞ্জুরুল করিম রনিসহ বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
জানাজার নামাজের আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, অধ্যাপক মান্নান বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন। তিনি অত্যন্ত সফল জননেতা ছিলেন। গাজীপুরের উন্নয়নে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তিনি তার রাজনৈতিক আদর্শের মধ্যে আজীবন বেঁচে থাকবেন। তিনি মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
শুক্রবার দুপুর সোয়া ১২টায় অধ্যাপক এম এ মান্নানের মরদেহবাহি গাড়ী শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে পৌঁছালে উপস্থিত নেতাকর্মীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। প্রিয় নেতাকে শেষবারের মতো একবার দেখার জন্য, ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য লাশের পাশে ভীড় করেন। এসময় এক অর্ভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারনা হয়। ফুল দিয়ে তার কফিনে বিএনপি ও এর অংগ সংগঠনের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা জানান।
পরে শুক্রবার বাদ আছর মহানগরীর সালনায় নাসিরউদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তৃতীয় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এখানে দলীয় নেতাকর্মীসহ কয়েক হাজার মুসুল্লী অংশ গ্রহণ করেন। পরে মরহুমের নিজ বাড়ীতে পারিবারিক কবরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয় জনপ্রিয় এ রাজনৈতিক নেতাকে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকায় ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, কিডনিসহ নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। তিনি অসুস্থ হয়ে ঢাকার নিউ ডিওএইচএসের বাসায় শয্যাশায়ী ছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে গত বুধবার (২৭ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে লাইফ সাপের্টে নেওয়া হয়। সেখানে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মারা যান।
অধ্যাপক এম এ মান্নান ২০১৩ সালের ৬ জুলাই গাজীপুর সিটি করপোরেশনে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। পরে ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বারিধারার বাসভবন থেকে পুলিশ তাকে নাশকতার একটি মামলায় গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় ওই বছরের ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে। তার বিরুদ্ধে নাশকতা, গাড়ি পোড়ানোসহ বিভিন্ন ধারায় প্রায় ৩০টি মামলা দেওয়া হয়। পাঁচ বছরের মেয়রের মেয়াদকালে ২৮ মাস কারাগারে আটক ছিলেন মান্নান।
অধ্যাপক এম এ মান্নানের মৃত্যুতে ৩ দিনের কর্মসূচী গ্রহণ করেছে জেলা ও মহানগর বিএনপি। এসবের মধ্যে রয়েছে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, কোরআন খানি, ইফতার ও দোয়া মাহফিল।