শ্রীলঙ্কার মাথাপিছু আয় আমাদের চেয়ে বেশি কিন্তু তারা এখন ধুঁকছে : মেনন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৩৩ পিএম, ১১ এপ্রিল,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১১:১৮ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, খাদ্য সংকট ও বৈদেশিক নির্ভরতা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের অন্যতম কারণ ছিল। এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও খাদ্য উৎপাদনের জন্য যে পানি প্রয়োজন, এই বিষয়ে আমরা উদাসীন। বরেন্দ্র অঞ্চলে আদিবাসীরাই একসময় বিশাল বিশাল পুকুর খনন করেছিল। এখন সেখানে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর এক ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে। সমস্ত পুকুর শুকিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় নদী ব্যবস্থাপনা ও ভূ-উপরস্থ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন স্থানে নদী দখল করে রাস্তাঘাট, দোকানপাট নির্মাণ করা হচ্ছে। টিপামুখ ও তিস্তার বাঁধ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এসবের কিছুই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আমরা পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর করছি তবে তিস্তা কেন খনন হচ্ছে না?
আজ সোমবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘কৃষকের পানির অধিকার নিশ্চিত করার দাবি'তে জাতীয় কৃষক সমিতি ও বাংলাদেশ খেতমজুর ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির অভাবে দুই আদিবাসী কৃষক অভিনাথ ও রবি মার্ডির মৃত্যুর ঘটনার প্রেক্ষিতে মেনন বলেন, দুই কৃষকের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে পানি সংকটের বিষয়টি সবার সামনে এসেছে। এসব বিষয়ে এখন কথা বলার লোকও কমে গেছে। আমরা আমাদের যাবতীয় উন্নয়নের হিসাব করছি জিডিপি ও মাথাপিছু আয় দিয়ে। শ্রীলঙ্কার মাথাপিছু আয় আমাদের চেয়ে বেশি কিন্তু তারা এখন ধুঁকছে। তাদের সকল ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ছে।
ধর্মাশ্রয়ীদের বিপক্ষে এবং কৃষকদের পক্ষে দাঁড়াতে যুবকদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যেখানে বিজ্ঞান পড়াতে গেলে জেলে যেতে হয়, টিপ পড়ার কারণে কথা শুনতে হয় এমন বাংলাদেশ কখনও দেখতে চাইনি। এসব কথা বললে এখন নাস্তিক বলা হয়। মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু, কাজী নজরুল- এরা সবাই কি নাস্তিক ছিল?
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি না পেয়ে আত্মহননকারী দুই কৃষক অভিনাথ ও রবি মার্ডির পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গেছিলাম। ১২ দিন অনুরোধ করেও সেচের পানি পায়নি তারা। কৃষকের পানির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এটা একটা কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এ হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হরেন্দ্রনাথ শীল ফোরামের সভাপতি সঞ্জীব দ্রং এর লিখিত বক্তব্যে বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দুইজন আদিবাসী কৃষককে পানি চেয়ে না পেয়ে আত্মহত্যা করতে হয়েছে। করোনায় ৯২ ভাগ আদিবাসীদের আয় কমে গেছে। চারিদিকে এতো উন্নয়ন তবুও বৈষম্য কেন? এই দুই পরিবারের এখন কি হবে বলে অভিযোগ জানান তিনি।
সভার প্রধান আলোচক এএলআরডি'র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হক বলেন, একটা গোষ্ঠী এখন পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। পানির অধিকার সবার আগে কৃষকের। করোনায় এই কৃষকেরা আমাদের বাঁচিয়েছে। ১৭ কোটি মানুষের যারা খাদ্য যোগান দেয় তাদের সম্মান জানাতে হবে, তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ভারতের কৃষকদের মতো রাস্তায় নামতে হবে।
জাতীয় কৃষক সমিতির সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিকের সভাপতিত্বে আলোচনায় সভায় সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরাসহ ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।