ডান চোখে ক্ষত নিয়েই কারাগারে ছাত্রদল নেতা সাইদুর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১৯ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৪৯ এএম, ২৬ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
সাইদুর রহমান একজন ত্যাগী ও আদর্শবান ছাত্রনেতা। দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে সাহসী ভূমিকা আর চেষ্টার কমতি ছিল না তার। যে কারণে পুলিশের রাবার বুলেটের আঘাতে ডান চোখে ক্ষত নিয়েই কারাগার বাস করছেন তিনি। তবে কারাগারে চোখে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলেও তাকে দেখার কেউ নেই। এ যেন দুঃখ বুঝে না কারাগার। দু’ চোখে জল আর মলিন মনোভাব এখন তার নিত্যদিনের সঙ্গী।
সাইদুর হবিগঞ্জ সদর উপজেলার গোপায়া ইউনিয়নের বড় বহুলা গ্রামের মৃত শহীদ আলীর ছেলে। বর্তমানে তিনি হবিগঞ্জ ল’ কলেজে এলএলবি’তে অধ্যায়নরত ও জেলা ছাত্রদলের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। পরিবারে মা ও দুই বোন রয়েছে তার। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেলে তিনি ছোট বোন ও মায়ের সাথে বসবাস করছেন তিনি।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় আদালতে হাজির হলে হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জিকে গউছ ও জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রুবেল আহমেদ চৌধুরীসহ বিএনপি পরিবারের ৪০ নেতা-কর্মীর সাথে আটক হন তিনি। পরে নেতা-কর্মীদের সাথে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। এর পর থেকে সাইদুর কারাগারেই অবস্থান করছেন।
এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য হবিগঞ্জে সমাবেশ ডাকে জেলা বিএনপি। এতে যোগ দিতে এসে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রুবেল আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে হবিগঞ্জ শহরের সার্কিট হাউজের সামনে এসে পুলিশের বাধা মুখের পড়েন সাইদুর রহমানসহ ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ।
এ সময় পুলিশ ও ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের মধ্যে বাক-বিতন্ডা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে পুলিশের রাবার বুলেটের আঘাতে সাইদুরের ডান চোখ ক্ষত হয়। ফলে দীর্ঘদিন তিনি ঢাকা মোহাম্মদ পুর চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নেন। বিষয়টি জানতে পেরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ রফিকুল ইসলামের মাধ্যমে সাইদুরের সাথে কথা বলেন।
এ সময় তারেক রহমান তার চোখের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাবেন বলে আশ্বস্থ করেন। এছাড়া পারিবারিক ভাবে গত ৫ ফেব্রুয়ারী চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে তার চোখের অপারেশনের কথা ছিল। কিন্তু এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি আদালত কর্তৃক তিনি আটক হওয়ায় তার অপারেশন করা আর সম্ভব হয়ে উঠেনি। বর্তমানে তিনি চোখে ক্ষত নিয়েই কারাগার বাস করছেন।
জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আরিফে রাব্বানী টিটু জানান, এর আগেও ২০১৫ সালে বৃন্দাবন সরকারী কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক থাকাকালীন সময়ে কারাগার বাস করেন সাইদুর। তাৎকালীন সময়ে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক মুশফিক আহমেদ এর নেতৃত্বে মুসলিম কোয়ার্টার এলাকায় ছাত্রদলের বিশাল সমাবেশ থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। এ সময় বাক-বিতন্ডার জের ধরে পুলিশের হামলায় আহত হন সাইদুর। পরে ১/১৫ মামলা দিয়ে পুলিশ তাকে কারাগারে পাঠায়। দীর্ঘদিন কারাবাসের পর আইনী লড়াইয়ে মুক্তি পান তিনি।
তার পারিবারিক ও রাজনৈতিক সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে জেলা ছাত্রদলের তাৎকালীন সদস্য ও স্থানীয় নেতা ওয়াহিদুজ্জামান ওয়াহিদের এর মাধ্যমে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক সৈয়দ মুশফিক আহমেদের নেতৃত্বে ছাত্রদলে যোগ দেন সাইদুর রহমান। এরপর ২০১১ সালে বৃন্দাবন সরকারী কলেজ ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক ও জেলা ছাত্রদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রুবেল আহমেদ চৌধুরীর কমিটিতে যুগ্ম-আহবায়ক পদ লাভ করেন।
এরপর থেকে রুবেল আহমেদ চৌধুরীর হাত ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেন। সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় কর্মসূচি সফল করতে তার আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল অন্যতম। যার কারণে জেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদ পান তিনি।