হামলা করে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না - আলতাফ হোসেন চৌধুরী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:১৫ এএম, ২৯ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৩২ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া একজন সেক্টর কমান্ডার, একজন বীরউত্তমের স্ত্রী, তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তিনি সারাজীবন অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছেন, বাকস্বাধীনতার জন্য, গণতন্ত্রের জন্য লড়েছেন, যার কারণেই তিনি আজ সারাবিশ্বে মাদার অব ডেমোক্রেসি হিসেবে পরিচিত। সেই বেগম খালেদা জিয়া আজ মিথ্যা মামলার আসামি, তিনি সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না, যার কারণেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য গণসমাবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে। আমরা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিতে চাই, হামলা করে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। যার বড় প্রমাণ আজ পটুয়াখালীর গণসমাবেশে পথে পথে বাধা ও সমাবেশস্থলে হামলা করেও সমাবেশ বন্ধ করা যায়নি।
তিনি বলেন, এ ফ্যাসিবাদ সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। রাজপথে আন্দোলন- সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত এ জালিম সরকারকে হটিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আমাদের সামনে এগুনো ছাড়া পিছনে হটার কোনো উপায় নেই। রাজপথে সব ফয়সালা হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে এদেশে বীরের বেশে নিয়ে আসবো ইনশআল্লাহ।
সমাবেশে অন্য বক্তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবিলম্বে মুক্তি দেয়াসহ উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ প্রেরণের দাবি জানানোর পাশাপাশি সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের ওপর বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। বক্তারা জেলার নেতৃবৃন্দকে আরো শক্তিশালী হয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন আরো জোরদার করে বর্তমান সরকারের অত্যাচার, নির্যাতন ও নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আয়োজিত সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। সমাবেশের আগে সকালে সভাস্থল প্রস্তুতের সময় হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে। নেতাকর্মীদের সমাবেশস্থলে আসতে বিভিন্নস্থানে বাধা দেয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় বিএনপির কমপক্ষে ২০ জন নেতাকর্মী আহতের ঘটনায় সমাবেশে নেতৃবৃন্দ তীব্র প্রতিবাদ করে আহতদের প্রতি সহানুভূতি জানান।
আজ মঙ্গলবার পটুয়াখালী জেলা বিএনপি আয়োজিত বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে এ সমাবেশ হয়। সমাবেশ সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব স্নেহাশু সরকার কুট্টি, সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার, দেলোয়ার হোসেন খান নান্নু ও মিজানুর রহমান।
পটুয়াখালী জেলা সমাবেশে জেলা বিএনপির আহবায়ক আলহাজ আ. রশীদ চুন্নু মিয়ার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) আলতাফ হোসেন চৌধুরী। সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারেফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসর রহমান, মাহবুবুল হক নান্নু, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেন, সহ- প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন, সদস্য জাতীয় নির্বাহী কমিটি হাসান মামুন ও জেলা বিএনপির সদস্যসচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি। আরও বক্তব্য রাখেন পৌর বিএনপির সভাপতি কামাল হোসেন, জেলা যুবদলের সভাপতি মনিরুল ইসলাম লিটন, কেন্দ্রীয় তাঁতী দলের যুগ্ম আহবায়ক মো. আনিসুর রহমান, জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা আক্তার রুমা, সাবেক ভিপি শফিকুল ইসলাম শাহিন, মশিউর রহমান মিলন, মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আশরাফ আলী হাওলাদারসহ কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মুজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, দেশে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার সুশাসন হচ্ছে না শুধু জবাবদিহিতার অভাবে। গণতন্ত্রের মূলকথা হলো বিরোধী দল কথা বললে সংসদ স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হবে, বিরোধী দলকে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না, বিরোধী দল আজ কোথাও নেই। দেশের সর্বত্র আজ দুর্নীতি, গণতন্ত্রের পক্ষে কাউকে আজ কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। সবাই মিলে আমরা আরেকবার চেষ্টা করি স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গণতন্ত্র রক্ষার জন্য চেষ্টা করি। এভাবে দেশ চলতে দেয়া যায় না। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে বেগবান করার মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে।
এদিকে গতকাল পটুয়াখালী জেলা বিএনপি সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় সভাস্থলের মঞ্চ এবং চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় শহরের শহীদ আলাউদ্দিন শিশুপার্ক মাঠে সভাস্থলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ করে বিএনপি।
পটুয়াখালী জেলার সদর থানার আহ্বায়ক কাজী মাহবুব আলম বলেন, বেলা ২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার আগে শহরের গরুরবাঁধ, চৌরাস্তা, পটুয়াখালী সেতু, ফটিকের খেয়াঘাট, থানা খেয়াঘাট, লাউকাঠী খেয়াঘাট, এলাকায় প্রবেশ পথে বিএনপি নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসার ক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত হন। সকালে সভাস্থলে হামলা চালানো হয়েছে। বিভিন্নস্থানে হামলায় আওয়ামী লীগের হামলায় আহত হয়েছেন মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আশ্রাফ আলী হাওলাদার, ভূরিয়া বিএনপির সভাপতি আ. রশিদ খান, মির্জাগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহবায়ক রাশেদ সামস, সদস্যসচিব আতাউর গাজী, আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুল হক মল্লিক, আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি আলিম মল্লিক, শহীদ গোলদার, ছাত্রনেতা জসিম, যুবদল নেতা আকাশ, নজরুলসহ অনেকে।
পটুয়াখালী শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে সড়কের মোগে মোড়ে অবস্থান নেয়। তবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপর থাকতে দেখা গেছে। দীর্ঘ ১৪ বছর পর এবার এই প্রথম পটুয়াখালী শহরের বড় পরিসরে সমাবেশ করার সুযোগ পায় বিএনপি। সকাল থেকে শত শত নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে বাধা অতিক্রম করে সভাস্থলে উপস্থিত হন।