নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ককে লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে চলছে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫২ পিএম, ২৯ নভেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৩৮ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বাৎসরিক ক্রয় সংক্রান্ত দরপত্র সিডিউল ক্রয়কে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক এড. শিহাব উদ্দিন শাহিনের উপস্থিতিতে তার অনুসারীরা হাসপাতালের তত্বাবধায়ককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন, সমাবেশ, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও শিহাব উদ্দিন শাহিনের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে।
আজ সোমবার বেলা ১১ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দোষিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ), স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) নোয়াখালী জেলা শাখা এ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে।
এ ঘটনায় রবিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুর থেকে শুরু হওয়া হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরের ডাকা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি এখনো চলছে। মানববন্ধন, সমাবেশ ও বিক্ষোভ থেকে আজও (সোমবার) দোষিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি তোলা হয়। গ্রেপ্তার ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও কিডনি ডায়ালসিস, স্ক্যানোসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে জরুরী রোগিদের চিকিৎসা ছাড়া অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চলবে বলে ঘোষণা দেন বিএমএ ও স্বাচিপের নেতৃবৃন্দ।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সামনের সড়কে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে বিএমএ ও স্বাচিপের চিকিৎসকরা। এসময় হাসপাতালের চিকিৎসক, ইন্টার্ণি চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারি, নোয়াখালী আবদুল মালেক মেডিকেল কলেজের শিক্ষক- শিক্ষার্থী, নোয়াখালী প্যারামেডিকেল কলেজ-এনপিসি ম্যাট্স শিক্ষার্থীরা কর্মসূতিতে যোগ দেয়। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সুধারাম মডেল থানার সামনে প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। এসময় জেলা শহর মাইজদীর প্রধান সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক শিহাব উদ্দিন শাহিনের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। ফলে প্রধান সড়কে সকল ধরণের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় ২৫ মিনিট সড়ক অবরোধ শেষে বিক্ষোভ মিছিলটি নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের দিকে ফিরে যায়।
সমাবেশে বক্তাগণ হাসপাতালের কর্মপরিবেশ ঠিক রাখার দাবি জানিয়ে বলেন, হামলার পর ২৪ ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেছে। এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এর আগেও হাসপাতালে কর্তব্যরত দ'ুজন আনসার সদস্যকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করা হয়। তারা বলেন, হাসপাতাল টেন্ডারবাজী আর সন্ত্রাসের জায়গা নয়, সেবার জায়গা। যেখানে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নেই সেখানে আমরা দায়িত্ব কিভাবে পালন করবো? সন্ত্রাসীদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই, তারা কেবল সন্ত্রাসী। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা আজ নিরুপায় হয়ে রাস্তায় নেমেছি। হামলার সাথে জড়িত দোষিদের যদি গ্রেপ্তার করা না হয় তাহলে আমাদের কর্মবিরতি চলবে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বিএমএর সভাপতি ডা. এম এ নোমান, স্বাচিপের সভাপতি ডা. ফজলে এলাহী খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম, আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. সৈয়দ কামরুল হোসেন, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ডা. আবু নাছের, নার্সেস এসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল্যাহ ফারুক, ইন্টার্ণি চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিলন দাস প্রমূখ।
হামলার ঘটনায় রোববার দিবাগত রাতে সুধারাম মডেল থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মহিউদ্দিন মো. আবদুল আজিম।
সুধারাম মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাকির হোসেন জানান, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত: নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বাৎসরিক ক্রয় সংক্রান্ত দরপত্র সিডিউল ক্রয়কে কেন্দ্র করে রোববার দুপুর ২টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক এড. শিহাব উদ্দিন শাহিনের উপস্থিতিতে তত্বাবধায়ককে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দোষিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে তাৎক্ষণিক কর্মবিরতি ঘোষণা দেয় হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক, ইন্টার্ণি চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারিরা।