নির্বাচনি মাঠ খালি করতেই সরকার পূজামন্ডপের ঘটনায় বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে - বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫১ এএম, ২৮ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:০২ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
নির্বাচনি মাঠ খালি করতেই সরকার পূজামন্ডপের ঘটনায় বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিভিন্নস্থানে পূজামন্ডপে হামলার ঘটনায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার দায়েরে ক্ষোভ প্রকাশ করে আজ বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, মন্দির ভাঙা বিষয়ে মোট মামলা হয়েছে ৬০টি। আসামি সংখ্যা হচ্ছে ১৫ হাজার ৯৬ জন। ইতিমধ্যে তারা (পুলিশ) গ্রেফতার করেছে ১৮৬ জনকে। তার মধ্যে বিএনপিরই ১৮৬ জন। এটা আপনারা যারা গণমাধ্যমে কাজ করেন তারা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন এই ঘটনার পেছনে সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ আছে এবং তারা শুধু তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে, সম্প্রদায়ের সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে। আমাদের দলের উচ্চ পর্যায়ের টিম স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে সরেজমিন ঘটনাস্থল দেখে এসেছেন। আমি যেটা বলতে যেটা বলতে চাই, বরকত উল্লাহ বুলু (বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান)সহ যাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে, এরা কেউ এর (পূজামন্ডপের হামলা ঘটনা) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না এবং তাদের কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা এই মামলার মধ্যে নেই। এই মামলাগুলো করার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, বিএনপিকে হয়রানি করা, তাদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা এবং যেহেতু তারা আসন্ন নির্বাচন করতে চায় সেই নির্বাচনের পূর্বেই যেন বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঠ থেকে একদম সরিয়ে দেয়া যায় মিথ্যা মামলা দিয়ে, সাজা দিয়ে বিভিন্নভাবে, এ জন্য এই ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে। আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ সব সময় এসব করে এসেছে এবং করে এভাবে তারা রাজনীতিতে টিকে থাকতে চায়। তিনি বলেন, বরকত উল্লাহ বুলুর বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা ও ১৬৪ ধারায় নির্যাতন করে যে স্বীকারোক্তি আদায় করা নেয়া হয়েছে- এটা আমরা মনে করি যে, একটা মিথ্যা প্রয়াস বা চেষ্টা বরকত উল্লাহ বুলু ও কামাক্ষা চন্দ্র দাসসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি করা এবং তাদের আবার একটা আইনগতভাবে বিপদগ্রস্ত করার একটা প্রচেষ্টা। আমরা অবিলম্বে এসব মামলা প্রত্যাহার চাই এবং প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করার কথা বলছি, বিএনপির নেতাকর্মী যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের অবিলম্বে ছেড়ে দিতে বলছি। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দায়ী দোষী ব্যক্তি তাদের অবশ্যই বিচারে আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা সব সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি, আমরা বিশ্বাস করি যে, এদেশে সকল ধর্মের সমান অধিকার থাকবে, আমাদের গঠনতন্ত্রের মধ্যে সেটা আছে। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও বারবার বলেছেন যে, ধর্ম যার যার, এই রাষ্ট্রটা সবার। এই রাষ্ট্রে সকলের সমান অধিকার আছে। আমাদের নেত্রী কখনোই সংখ্যালঘু শব্দটা ব্যবহার করেন না। তিনি বলেন যে, সবাই তো এদেশের মানুষ, তারা সংখ্যালঘু হবে কেন?
মির্জা ফখরুল বলেন, এটা খুব পরিষ্কার যে, সরকার পরিকল্পিতভাবে মাঠ পরিষ্কার করার কাজ করছে। গতবার ২০১৮ সালেও দেখেছেন আপনারা যে, নির্বাচনের ৭-৯-১০ দিন আগে থেকে তারা (সরকার) এমনভাবে মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা শুরু হলো, হাজার হাজার গায়েবি মামলা প্রত্যেকটি নির্বাচনি আসনে। ইনক্লোডিং দ্য কেনডিডেটস তাদের গ্রেফতার করা হলো, যারা কর্মী মাঠে কাজ করছিলেন তাদের গ্রেফতার করা হলো, বিএনপির সকল নেতাকর্মীর গ্রেফতার করে মাঠ একদম খালি করা হলো এবং আগের দিন রাতে ভোট করে নিয়ে যাওয়া হলো। এবার তার আগে থেকেই এই যে মামলাগুলো দিচ্ছে। সরকার অতিদ্রুত মামলাগুলো শেষ করতে চায়। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, আমাদের মামলাগুলো শেষ করে ফেলবে। তারা তালিকা তৈরি করেছে সরকারের হোম মিনিস্ট্রি থেকে যে, মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে এবং নেতাদের ওই ইলেকশন যাতে করতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। দ্য এলাউডি ফর ইট।
এবার নির্বাচন নিয়ে আমাদের চিন্তাই নেই বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এবার আমরা নির্বাচন নিয়ে চিন্তাই করছি না। আমরা এই সরকারের পতন, এই সরকারকে যেতে হবে এবং পদত্যাগ করে চলে যাওয়ার পরে একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। দ্যাটস অল, ফাইনাল।
প্রত্যেকটি ঘটনায় সরকারি দলের ইন্ধন রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, রংপুরে দেখা গেল রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতারা এ ঘটনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। পরে বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে মামলা দেয়া হয়েছে। চারটি মামলায় ৪১ জনকে আসামি করা হয়েছে। কুমিল্লায় পাগল ইকবাল বলে একজনকে সাজিয়েছে। বলা হচ্ছে সে নাকি কোরআন শরীফ নিয়ে মন্ডপে রেখেছে। যেগুলো কোনোমতে বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি বলেন, আমি প্রথম দিন থেকে বলেছি সরকারের এজেন্সিগুলো দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটা করেছে। মূল উদ্দেশ্যে হলো, জনগণের ভাতের সংকট, ভোটের সংকট, বাকস্বাধীনতার সংকট, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধির সংকট, এসব থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর জন্য এই ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে। চৌমহনীতে ২৩টি মামলায় ৭ হাজার ৯৬১ জনকে আসামি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই মামলার শেষ হবে কবে? এগুলো তো শেষ হবে না। উদ্দেশ্য হলো- এই মামলাগুলোতে বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে তাদের হয়রানি করা এবং একটা বড় গ্রেফতার বাণিজ্য করা। চট্টগ্রামে ফ্লাইওভারের পিলারে ফাটল ও পাটুরিয়ায় ফেরি ডুবে যাওয়ার ঘটনায় সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও নজরদারির অভাবে এসব ঘটনা ঘটছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ।