বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়, আ’লীগ দুঃস্বপ্ন দেখছে বিএনপি এই এলো বুঝি - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১৬ পিএম, ১৩ অক্টোবর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০১:০০ এএম, ১৫ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২৪
স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে গিয়ে ঢাকাস্থ এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের এখন যে শারীরিক অবস্থা, তার চিকিৎসা বাংলাদেশে একসঙ্গে করানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দুঃস্বপ্ন দেখছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ দুঃস্বপ্ন দেখছে। তারা দেখছে এই বিএনপি চলে আসছে।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত স্মরণসভায় এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপি’র সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম অ্যাডভোকেট আফসার আহমদ সিদ্দিকী’র ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ’আফসার আহমদ সিদ্দিকী স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বলেছিল ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়াবে। এখন মানুষকে ৭০ টাকায় চাল কিনতে হচ্ছে। টিসিবির গাড়িগুলোতে মানুষের ভিড় বাড়ছে। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। সরকার পণ্যের দাম কমাতে পারছে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার কয়েকদিন জ্বর আসছিল, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাকে গতকাল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তার বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা রয়েছে। যেগুলো একসঙ্গে বাংলাদেশে চিকিৎসা করানো যাবে না। চিকিৎসকরা বলছেন, তাকে বিদেশ নিতে হবে। এ দেশে বেগম খালেদা জিয়ার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সম্ভব নয়। মাল্টি চিকিৎসা এখানে নেই। দেশের বাইরে নিতে হবে।
অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে কেনো জামিন দেয়া হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আপনারা জেনেছেন দেশনেত্রী হাসপাতালে। তিনি অসুস্থ। কেনো হাসপাতালে? যে তিন বছর তিনি জেলে ছিলেন তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। আমি বলছি, তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। ইচ্ছা করে তার চিকিৎসা করেনি। চিকিৎসকরাই বার বার করে বলেছেন, তার ( বেগম খালেদা জিয়া) যে অসুস্থতাগুলো আছে, যে রোগগুলো আছে সেই রোগগুলোর চিকিৎসা এখানে পুর্ণাঙ্গভাবে সম্ভব নয়। এটা মাল্টি ডিসেপ্লেনারী যেসমস্ত হাসপাতাল বা সেন্টারগুলো আছে অর্থাৎ সব রোগের এক সাথে চিকিৎসা করতে পারে এই ধরনের মানসম্পন্ন যে হাসপাতাল আছে সেখানে তাকে নেয়া দরকার। তারা (চিকিৎসকরা) পরিস্কার করে বলেছেন যে, এটা বাংলাদেশে এই ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই। বাইরেই তাকে যেতে হবে।
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার প্রাপ্য জামিন কেন তাকে দিচ্ছেন না? তিনি তো দয়া চাচ্ছেন না আপনাদের কাছে। আপনারা তার যে প্রাপ্য জামিন, সেটা দেন। এ ধরনের মামলায় সবাইকে তো জামিন দিয়েছেন। একজনও ভেতরে নেই আমি জানি। তাহলে তাকে জামিন দিচ্ছেন না কেন?
আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার ৫ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করার ঘটনায় ‘ধিক্কার’ জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) কেনো জেলে? তার বিরুদ্ধে যে মামলা, ২ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকার মামলা এবং মামলার রায় দেখেন সেখানে কোথাও বলে নাই যে, তিনি তহবিল তছরুফ করেছে বা এই টাকা তছরুফ করেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগটা হয়েছে যে, বিং এ প্রাইম মিস্টিার তিনি সেটা লক্ষ্য করেননি বা দেখেননি। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, এই কথাটা এসছে। অথচ তারা (সরকার) সমানে বলে যাচ্ছেন যে এতিমের টাকা খেয়েছেন। আরে পুরো টাকা তো ১০ গুন হয়েছে এখন। আপনারা(সরকার) তাকে জেলে রেখেছেন এই কারণে যে, আপনারা জানেন যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যদি বের হন তাহলে আপনাদের তখতে তাউস থাকবে না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, গতকাল খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। কয়েকদিন ধরে তার অল্প অল্প জ্বর আসছিল, ‘লো ফিভার’ আসছিল। তার চিকিৎসকরা দেখেছেন, যেহেতেু সেই হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পরে তার আর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি, টেস্ট হয়নি। সুতরাং তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা তারা নিতে চান।
দেশের ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১০ কোটি টাকা লোন নিলে পাঁচ কোটি টাকা ঘুষ দিতে হয়। সরকার আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা একেবারে ফোকলা করে দিয়েছে। একেবারে পুরোপুরিভাবে লুট করে নিয়ে গেছে। প্রতিটি ব্যাংক আজকে বিপদগ্রস্ত হয়ে আছে। আপনি ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বললে দেখবেন তারা বলবে ভাই সব শেষ। আমার এক বন্ধু আছে নাম বলবো না, তিনি ব্যাংক সেক্টরে বড় একটি দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বলেছেন যারা ব্যাংকে টাকা রাখেন তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রতিটা ব্যাংকই প্রায় ব্যাংক ক্রাফট হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়ে গেছে।
ব্যাংক থেকে আওয়ামী লীগের লোক ছাড়া কেউ লোন পায় না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে একটা বর্গীর মতো অবস্থা। বর্গীরা যখন আসে এবং সব সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়ে যায়, এই সরকার সেরকম একটা অবস্থা তৈরি করেছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমরা একটি ভয়ঙ্কর দুঃসময় অতিক্রম করছি। এতো বড় দুঃসময় এদেশে কখনো এসেছে কি না আমার জানা নেই। এখানে আমরা যারা আছি তারা অনেকেই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সঙ্গে ছিলাম, আমরা যুদ্ধ করেছি। তখনো এতো দুঃসময় ছিল না। তখন আমরা চিনতাম আমাদের শত্রু কে। কাদের সঙ্গে লড়াই করে আমাদের জয়লাভ করতে হবে। তখন আমরা সবাই এক হয়ে গিয়েছিলাম। একটি লক্ষ্য ছিল আমাদের পাকিস্তানিদেরকে সরাতে হবে, জিততে হবে।
তরুণ ও যুবকদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে যাদের যুদ্ধে যাওয়ার সময়, সংগ্রাম করার সময়, যারা এই দুঃসময়কে দূর করবে। যারা এই অন্ধকারকে দূর করে আলো নিয়ে আসবে তারা কোথায়? সেই যুবক কোথায়? সেই তরুণ কোথায়? তাদেরতো সমানে আসতে হবে। তাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। প্রতিটি সংগ্রামে অবশ্যই তাদের নেতৃত্ব দিতে হবে। আমি অনেক দিন জোর দিয়ে বলছি এটা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
তিনি বলেন, দেশে কেউ নিরাপদ নয়। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই দেখবেন হত্যা, খুন, জখম, ধর্ষণ, ছিনতাই, দুর্নীতির খবর বের হচ্ছে। এখন নতুন করে বের হচ্ছে ই-কমার্সের লুণ্ঠন। ই-কমার্সে যারা লুণ্ঠন করছে তারা কারা? কাদের আশ্রয়ে তারা লুণ্ঠন করছে? কারা তাদের প্রটেকশনটা দিচ্ছে? দেখবেন এই আওয়ামী লীগের লোকেরাই এর সঙ্গে জড়িত।
আফসার আহমদ সিদ্দিকী’র কথা স্মরণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে নিঃসন্দেহে একজন ব্যতিক্রমী রাজনীতিবিদ ছিলেন আফসার উদ্দিন আহমেদ। সম্ভবত তাদের ওই সময়টাই ছিল, যারা রাজনীতি করতেন তারা সমাজ পরিবর্তনের চিন্তা করতেন। এদেশের কৃষক-শ্রমিক-মজুর সেই মানুষগুলো যারা সব সময় নিচের দিকে থাকেন তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের চিন্তা করতেন। কিভাবে তাদের খাওয়া-পরা ও তাদের সন্তানদের লেখাপড়া, স্বাস্থ্য উন্নত করা যায় সেই চিন্তা করতেন। মরহুম আফসার আহমেদ সিদ্দিকী সাহেব সেই সময়কার, সেই ঘরানার একজন রাজনীতিবিদ। আজকাল যেটা সহজে দেখা যায় না। আজকাল রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনাটাই বদলে গেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন রাজনীতি হচ্ছে পদ চাই, পদবী চাই আর বাড়ি-গাড়ি চাই। টাকা-পয়সা কিভাবে অর্জন করব সেগুলো দরকার। এ দিয়ে কোনো পরিবর্তন হয় না। পরিবর্তন আনতে হলে আফসার আহমেদ সিদ্দিকির মতো ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। যারা মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য নিজে ত্যাগ স্বীকার করেছেন।
এ সময় তিনি বলেন, যারা ভোগ-বিলাশ করে তারা পরিবর্তন আনতে পারে না। ইতিহাস বলে যারা বিলিয়ে দিতে জানে তাদের হাত ধরেই সমাজের পরিবর্তন আসে।