ভাইস চেয়ারম্যান স্ত্রীর মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান স্বামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৩৯ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৪৩ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা কুসুম, তিনি তার স্বামী ওই উপজেলাধীন ঝলম দক্ষিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন জিয়ার বিরুদ্ধে নির্যাতন ও যৌতুক দাবীর অভিযোগে মামলা করেছেন। ওই মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেছেন কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন আদালত।
ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা কুসুম ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন জিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী। জনপ্রতিনিধিত্ব করার পাশাপাশী আফরোজা কুসুম উপজেলা আওয়ামী লীগ ও মহিলা লীগের গুরুত্বপুর্ন দায়িত্বে রয়েছেন। তার স্বামী ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন জিয়া উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক পদে রয়েছেন।
স্ত্রী আফরোজা কুসুমের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা নিয়ে প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন এলাকার ত্রাস হিসাবে পরিচিত সরকার দলীয় এই ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ওরফে শাহীন জিয়া।
যৌতুক না দেয়া এবং নির্যাতনের অভিযোগে স্ত্রী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেত্রী আফরোজা কুসুম তার স্বামী স্থানীয় যুবলীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন জিয়ার বিরুদ্ধে কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে গত বছর মামলা দায়ের করেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর ওই আদালতের বিচারক আসামী ইউপি চেয়ারম্যান ও যু্বলীগ নেতা শাহীন জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
আফরোজা কুসুমের দাবি, "আদালতের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানাটি মনোহরগঞ্জ থানায় গেলেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে শাহীন জিয়াকে গ্রেফতার করছে না। উল্টো চেয়ারম্যান শাহিন জিয়া প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এছাড়াও শাহিন জিয়া তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন"।
মঙ্গলবার দুপুরে আফরোজা কুসুম জানান, "শাহীন জিয়া আমাকে বিয়ের পর থেকে প্রায়ই যৌতুকের জন্য নির্যাতন ও মারধর করেছে। আমি লজ্জা ও মানসম্মানের ভয়ে এসব কথা প্রকাশ না করে সবকিছু সমাধানের চেষ্টা করেছি। আমি তার কাছে সামাজিক স্বীকৃতি চেয়েছি, কিন্তু সে আমাকে স্বীকৃতি দিতেও টালবাহানা করে।
স্বীকৃতি চাওয়ায় সে আমার কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে এবং প্রায়ই আমাকে নির্যাতন করে। এসব ঘটনায় গত বছর তার বিরুদ্ধে কুমিল্লার নারী ও শিশু আদালতে মামলা দায়ের করেছি। মামলা করায় শাহীন জিয়া আমাকে হত্যার চেষ্টাও চালায়, হত্যা চেষ্টার ঘটনায় আমি থানায় তার বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি"।
আফরোজা কুসুম আরও জানান, "আইনি প্রক্রিয়ায় ওই মামলায় আদালত তার বিরুদ্ধে গত ৮ সেপ্টেম্বর ওয়ারেন্ট জারি করেছে। আমি নিজেই বিষয়টি থানার ওসি সাহেবকে জানিয়েছি। কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না। উল্টো সে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এছাড়া বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য। আমি তার ভয়ে বর্তমানে আতংক এবং নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছি। তাকে দ্রুত গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি"।
এদিকে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে অভিযুক্ত জিয়াউর রহমান ওরফে শাহীন জিয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজের একাধিক ব্যাক্তির সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তারা দিনকালকে বলেন, "তারা দুজনেই সরকারী দল সমর্থিত জনপ্রতিনিধি। পাশাপাশী তারা দুজনেই সরকারী দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের গুরুত্বপুর্ন নেতৃত্বে রয়েছেন। নারী হিসাবে মামলার বাদী আফরোজা কুসুম অনেকটাই অসহায়। তবে দলীয় ক্ষমতার প্রভাবে বিবাদী চেয়ারম্যান শাহীন জিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে গ্রেফতারী পরোয়ানা মাথায় নিয়েও বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। স্ত্রীর উপর নির্যাতন ছাড়াও শাহিন জিয়া নিজ এলাকায় অনেক অপকর্মের সাথে জড়িত"।
মনোহরগঞ্জ থানার ওসি মো. মাহাবুল কবির বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমাদের কাছে গ্রেফতারি পরোয়ানার কপি এখনও আসেনি। পরোয়ানার কপি থানায় পৌঁছলে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে গ্রেফতার করা হবে।