বরিশালে বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবনে বৈঠক, আ'লীগ-প্রশাসন সমঝোতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৩৮ পিএম, ২৩ আগস্ট,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০১:২৬ এএম, ১৮ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে হামলা ও পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আওয়ামী লীগ নেতাদের সমঝোতা হয়েছে। এর মাধ্যমে কয়েক দিন ধরে চলা বিরোধের অবসান হলো। বৈঠকে উভয়পক্ষ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেয়ার ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন। তবে একটি সূত্র জানায়, এ বৈঠকে ইউএনও মুনিবুর রহমানে উপস্থিত ছিলেন না। তবে তিনি বৈঠকের ফলাফল মেনে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
গতকাল রবিবার (২২ আগস্ট) রাত সোয়া ৯টা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে উভয়পক্ষ হাসিমুখে বের হন। এরপর তারা দলগতভাবে ফটোসেশনে যোগ দেন।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল ইসলাম বাদলের আহ্বানে নগরীর রাজা বাহাদুর সড়কে তার সরকারি বাসভবনে এ বৈঠক হয়।
বৈঠকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান, জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন, র্যাব-৮ এর অধিনায়ক জামিল হাসান, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস, বিসিসির প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল ইসলাম বাদলের বাসভবনে তাদেরকে চায়ের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমন্ত্রণ পেয়ে তিনিসহ বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বিসিসির প্যানেল মেয়র চা-চক্রে যোগ দেন।
তিনি বলেন, ‘চা-চক্রে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ১৮ আগস্ট রাতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। আলোচনার মাধ্যমে ওই দিন রাতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির অবসান ঘটেছে।’
উল্লেখ্য, বুধবার (১৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২০ থেকে ২৫ জন কর্মচারী নগরের সিঅ্যান্ডবি রোডে উপজেলা পরিষদ এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার শুভেচ্ছা ব্যানার অপসারণের কাজ শুরু করে। এ সময় ইউএনও-এর কার্যালয় ও সরকারি বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা তাদের পরিচয় জানতে চান। এরপর তারা সকালে এসে কাজ করার জন্য বলেন।
এ সময় সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের বাগবিতণ্ডা হয়। খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী সেখানে যান। পরে সেখানে আনসার সদস্যদের সাথে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহও সেখানে উপস্থিত হন। এ সময় নেতাকর্মীরা ইউএনও-এর বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি ছোড়েন আনসার সদস্যরা। হামলা ও সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন ওসি ও প্যানেল মেয়রসহ সাতজন। এছাড়া পুলিশের লাঠিচার্জে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন।
ওই ঘটনায় ইউএনও ও পুলিশের পক্ষ থেকে মেয়রসহ আওয়ামী লীগের ছয় শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। তাদের মধ্যে ২২ জন কারাগারে আছেন। পরবর্তী সময়ে মেয়রের পক্ষ থেকে ইউএনও এবং ওসিসহ শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হলে বিচারক পিআইবিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।