বাংলাদেশ ভয়ঙ্কর মৃত্যুপুরীর দিকে ধাবিত হচ্ছে : বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১২ এএম, ১১ আগস্ট,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:১২ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
করোনার নাজুক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ভয়ঙ্কর মৃত্যুপুরীর দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তারা এ সব কথা বলেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, করোনা সুরক্ষা সামগ্রী গাজীপুরের কাপাসিয়ায় উদ্বোধন করতে যাচ্ছি। আমরা এর আগে বিএনপির সাংগঠনিক সত্তরটি জেলায় এসেবা পৌঁছে দিতে পেরেছি। প্রতিদিন করোনা রোগী বাড়ছে সেই সাথে বাড়ছে অক্সিজেন চাহিদা, বিভিন্ন রকম ওষুধের চাহিদা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দলের নেতাকর্মীরা সারাদেশের শহর থেকে শুরু করে গ্রাম-গ্রামান্তরে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা গত বছর করোনার সময় তিন কোটি মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিয়েছি। এবারও মানুষের পাশে আছি। করোনা প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার আগেই আমরা বলেছিলাম বর্ডার সিলগালা করে দেন। সরকার তা করেনি। যার ফলে করোনা ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই আমরা তারেক রহমানের নির্দেশে এবং তার প্রদত্ত ওষুধ সকল জেলায় পৌঁছে দিয়েছি। আমাদের নেতাকর্মীরা স্বউদ্যোগে তা বিতরণ করছেন। গাজীপুরের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মরহুম আ স ম হান্নান শাহ যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আপনারা তার যোগ্য কর্মী হিসেবে মানুষের পাশে আছেন।
এজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। সরকারের অযোগ্যতা ও অপরিপক্কতার কারণে করোনা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সারাদেশে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মানুষ করোনার সাথে যুদ্ধ করে চলছে। আমাদের লড়াই করতে হবে লড়াই করে কাজ করতে হবে। যতদিন করোনা থাকবে ততদিন আপনারা মানুষের পাশে থাকবেন। বিএনপি গণ মানুষের দল। তাই আমাদের মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যেতে হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার কারণে করোনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। খুলনায় আজকে এক লক্ষ লোক নতুন আক্রান্ত হয়েছে। চব্বিশ জন মারা গেছেন। এটাতো সরকার হিসেবে। বেসরকারি হিসেবে আরো কয়েক গুণ লোক আক্রান্ত ও মারা গেছেন। সর্বোপরি বাংলাদেশ ভয়ঙ্কর মৃত্যুপুরীর দিকে ধাবিত হচ্ছে। আর সরকার লকডাউন দিচ্ছে আর নিজেদের প্রয়োজনে খুলছে।
তিনি বলেন, সরকারের লুটপাট ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কথা বললেই হতে হয় গুম খুন অথবা যেতে হয় কারাগারে। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন কেউ অসত্য বললে তাকে শাস্তি পেতে হবে। তাদের মতে অসত্য বলতে সরকারের গুম খুন আর লুটপাট তুলে ধরা। আওয়ামী লীগের গতির দিকে না চললে শাস্তি। কেউ তাদের দুর্নীতি লুটপাটের কথা বললে গুম-খুন অথবা কারাবরণ করতে হয়।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সরকার গণটিকার নামে গণ হয়রানি করছে। টিকা কেন্দ্রেই স্বাস্থ্যবিধি নেই। মানুষ বাঁচার জন্য টিকা নিতে গিয়ে আরো বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। যেখানে একটি কেন্দ্রে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ লোক টিকা নিতে পারে সেখানে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হচ্ছে। যেখানে নেই কোনো স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা।
বিএনপির এই নেতা বলেন, করোনাকালীন সময়ে সরকারের অদক্ষতার কারণে আশি পার্সেন্ট লোক গরীব হয়েছে। মানুষের খাদ্য ব্যয় কমে গেছে। মানুষের মনে হাহাকার। সরকার মানুষের অভাব উত্তরণের জন্য কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। রপ্তানি কমে গেছে এগারো শতাংশ। রেমিট্যান্স কমেছে আঠাশ শতাংশ। সবকিছু মিলিয়ে মানুষ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। রিজভী বলেন, বিএনপি’র স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় নেই। বিএনপি নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে করোনা সুরক্ষা সামগ্রী অক্সিজেন ও বিভিন্ন ধরনের ঔষধ বিতরণ করে যাচ্ছে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সার্বিক সহযোগিতায় সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা করোনা রোগীদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন সেলিম ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সদস্য রাশেদুল হকে সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, গাজীপুর জেলা বিএনপির আহবাহক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মজিবুর রহমান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা.মাজহারুল ইসলাম, শাহ রিয়াজুল হান্নান। এছাড়াও গাজীপুর জেলা ও কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ফরিদপুর জেলা বিএনপির উদ্যোগে করোনা হেল্প সেন্টার ও ঔষধসামগ্রি বিতরণ উপলক্ষে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বিএনপি করোনা টিকার নয়, সরকারের অব্যবস্থাপনার সমালোচনা করছে। টিকা নিতে একজনের পাশে একজন স্বাস্থ্য বিধি না মেনে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। তাতে করোনা বিস্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা সেটার বিরোধিতা করছি, সমালোচনা করছি। আপনারা বেশি বেশি করে বুথ খুলতেন তাতে লোকের চাপ কমতো। তাতো করেননি আপনারা। এখন পর্যন্ত আমরা জানি না যে, দেশে আমি যদি ৭০% লোককে দুই ডোজ টিকা দেই আমরা যে লে ২৫ কোটি ডোজ টিকা লাগবে-সেটার কী অবস্থা। পাইপলাইনে কী অবস্থা, কবে কোনটা আসছে, কত স্টক আছে-দেশের মানুষ কিছু জানে না। সব আন্দাজি তারা বলতেছে। আমরা এগুলো নিয়ে সমালোচনা করি। টিকার বিরুদ্ধে আমরা-এটা না। দেশের সকল মানুষের জন্য টিকা কবে আসবে তার সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ জনসমক্ষে প্রকাশের জন্য সরকারের প্রতি আহবানও জানান টুকু।
তিনি বলেন, আপনারা জোর করে ক্ষমতায় বসে আছেন, ভোট ছাড়া ক্ষমতা দখল করে আছেন। যারা ক্ষমতায় বসিয়েছে তাদের ওপর ভর করে আপনারা জনগনকে মাইনাস করবেন-এটা হতে পারে না।এদেশের জনগণ একদিন জবাব দেবে। অতীতে বাংলাদেশের জনগন জবাব দিয়েছে। এককালে একটা গান নবীন ছাত্র-ছাত্রীরা বলতো, তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে সেই জনতা। এটা বাংলাদেশে হবে। আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খানের সময়ে হয়েছে যুগে যুগে হয়েছে। আজকে যেভাবে হচ্ছে জনতা একদিন জাগবেই। এই সরকারকে উত্তর দিতে হবে। টুকু বলেন, বিএনপি বিরোধী দলে, জনগনের পাশে থাকবে, তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করবে-এটাই হচ্ছে বিএনপির রাজনীতি, এটা হচ্ছে শহীদ জিয়াউর রহমানের রাজনীতি, এটা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি, এটাই হচ্ছে তারেক রহমানের রাজনীতি। আমরা তাদের সৈনিক হিসেবে সেই কাজটাই করে যাচ্ছি। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদের সভাপতিত্বে ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিমের সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুস সালাম, ফরিদপুরের মোদাচ্ছির আলী ইসা, মাহবুবুল হাসান পিন্টু, খন্দকার নাসিরুল হক নাসির প্রমুখ নেতা বক্তব্য রাখেন।