করোনায় ‘আক্রান্ত ও মৃত্যুর’ সংখ্যা নিয়ে সরকার জাতিকে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে - বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৫৮ এএম, ৩ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:১১ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
করোনায় ‘আক্রান্ত ও মৃত্যুর’ সংখ্যা নিয়ে সরকার জাতিকে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সোমবার সকালে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে তিনি এই অভিযোগ করেন। লালমনিরহাট বিএনপির উদ্যোগে জেলার কোভিড-১৯ হেল্প সেন্টারের উদ্বোধন এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদানে এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারের যে হিসাব তা এতোটুকু সঠিক নয়। তাদের হিসাবে দেখা যাচ্ছে যে, ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৩২৮ জন গতকাল পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন-এটা একদম ডাহা মিথ্যা কথা। মানুষজন টেস্টই তো করতে পারছেন না। তারা উপজেলা পর্যায়ে টেস্ট দেন না। জেলা পর্যায়ে টেস্ট দেয়, সেখানে গিয়েও মানুষ টেস্ট করতে পারে না। ঢাকায় যে পরীক্ষার কেন্দ্রগুলো আছে সেখানেও দুই ঘন্টা টেস্ট করা হয় বাকি আর হয় না। এখানেই কিন্তু স্ক্রিন আউট করে দিচ্ছে। এর পরে তারা যে বলে, তারা যে তথ্যগুলো দেয় সেটা শুধুমাত্র তাদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য, জনগণকে বিভ্রান্ত করা জন্য, প্রতারণা করার জন্য তারা এই তথ্যগুলো জনগণের সামনে দেয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, তারা (সরকার) বলছে, আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার ৯১৪ জন মারা গেছে। আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, পত্রিকাতেই আছে বাড়িতে মৃত্যুর সংখ্যা হচ্ছে ৬৫ ভাগ। তাহলে চিন্তা করেন। এই ২০ হাজার ৯১৪ জনের সঙ্গে ৬৫ ভাগ যোগ করেন। তাহলে এই সংখ্যা একলাখের নিচে কখনোই না। আজকের একটি পত্রিকায় হেডিং হচ্ছে- করোনা নিয়ে সরকারের নানা অসঙ্গতি। এই কথাটা আমরা বার বার বলে আসছি। ইফ ইউ ডোন্ট গ্যাট দেট এক্সজেট ডেটা- আপনি সমাধান করবেন কি করে? সুতরাং আপনি প্রথমেই ভুল করছেন এবং সেটা জেনেশুনে ভুল করছেন। আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার এতো বড় একটা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে এটা কোনো দায়িত্বশীল সরকার করতে পারে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার করোনা মোকাবিলা করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং জনগণের জীবন নিয়ে তারা ছিনিমিনি খেলছে। আমরা প্রথম থেকে বলছি যে, এটা যেহেতু বৈশ্বিক মহামারি এবং ভয়াবহ একটি বিষয়, এটাকে মোকাবিলা করতে হবে সকলকে সঙ্গে নিয়ে। আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম একটা জাতীয় কমিটি গঠন করে জাতীয় বিশেষজ্ঞসহ সমস্ত জনগণকে সম্পৃক্ত করে এই করোনা মহামারিকে মোকাবিলা করবার জন্য। দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি, যেকোনা দুর্যোগ অথবা যেকোনো মহামারি পুরোটাই হয়ত নির্মূল করা যায় না, কোনটারই সমাধান করা যায় না কিন্তু এটা অনেক সুষ্ঠু ও সন্দুরভাবে করা যায় যদি দেশের মানুষকে আমরা সম্পৃক্ত করতে পারি। আজকে যদি রাজনৈতিক দলগুলো সম্পৃক্ত হতো, আজকে যদি সমস্ত এনজিও সম্পৃক্ত হতো, আজকে যদি স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলো সম্পৃক্ত হতে পারতো তাহলে দেখা যেতো যে, আজকে এই পরিস্থিতি এতো মারাত্মক আকার ধারণ করতো না।
তিনি বলেন, এই সরকার যারা তাদের বিত্তের জন্য, তাদের টিকে থাকার জন্য শুধুমাত্র আমলাদের ওপর নির্ভর করছে এবং দেখা যাচ্ছে যে, সেই আমলাদেরই তারা করোনা মোকাবিলার চেষ্টা করছে। ফলে কি হচ্ছে যতটুকু সম্ভাবনা থাকে এটা নিয়ন্ত্রণে আনার সেটি তাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যে দুর্নীতি তা বর্ণনার বাইরে। তিনশ টাকার জিনিস তারা তিন হাজার টাকায় নেয়, পাঁচশ টাকার জিনিস তারা পঞ্চাশ হাজার টাকায় নেয় এবং আমরা দেখেছি যে, এখন পর্যন্ত যতগুলো তথ্য আমাদের কাছে এসেছে, পত্র-পত্রিকায় বেরিয়ে এসেছে যে, এই করোনাকালে দুর্নীতি করে তাদের (স্বাস্থ্য অধিদফতরের) ড্রাইভার পর্যন্ত ৪/৫ কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে।
আইসিইউ বেড নিয়েও মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত কয়েকটি হাসপাতালে আইসিইউ বেড না থাকলে তারা (স্বাস্থ্য অধিদফতর) তথ্য দিচ্ছে যে, আইসিইউ শয্যা আছে। যেমন আপনার ভোলা, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, জামালপুর- স্বাস্থ্য অধিদফরের হিসাবে এই পাঁচ জেলায় করোনা রোগীদের জন্য ২০টি আইসিইউ রয়েছে। কিন্তু আসলে এগুলোতে কোনো আইসিইউ নাই। মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। সিলেটে তারা বলেছে যে, চারটা হাসপাতালে সরকারি হিসাব ১৩৬ জন চিকিৎসাধীন ছিলো গতকাল পর্যন্ত। প্রকৃতপক্ষে সেখানে চিকিৎসাধীন আছে ৪৩৬ জন। তিন শ রোগী নাই-গায়েব। এখন গায়েবী মামলার মতো গায়েবী বেড, গায়েবী সংখ্যা, গায়েবী রোগী উড়ে যাচ্ছে, চলে যাচ্ছে। হাসপাতালও উধাও হয়ে গেছে। আপনারা দেখেছেন যে, একটা হাসপাতাল নাই হয়ে গেছে। এই হচ্ছে সরকারের মানুষের চরম দুর্দিনে, মানুষের মারা যাওয়ার সময়ে যখন সে চায় যে, সরকার তার পাশে দাঁড়াবে, যখন সে চায় তার অন্তত চিকিৎসা হবে। অক্সিজেনের জন্য মানুষ হাহাকার করছে সেই অক্সিজেন নেই।
লকডাউন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কঠোর লকডাউনে কয়দিন পরে গণপরিবহন ছেড়ে দিলো, ঈদ আসলে ছেড়ে দিলো। তারপরে শ্রমিকদের ছুটি দিলো তারা ঈদের আগে ছুটিতে চলে গেলো। ৭টা দিন এভাবে তারা সংক্রমণ গ্রামের দিকে আরো বেশি করে পাঠিয়ে দিলো। সীমান্ত আমরা বন্ধ করতে বলেছিলাম কারণ ভারতে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট বাড়ছে। সেইভাবে সরকার বন্ধ করলো না। বিভিন্ন স্থলবন্দরগুলোতে ভারত থেকে ট্রাক আসলো, চালক, সহকারীরা আসলো, তারা এই পাশে থাকলো, সংক্রমণ বাড়িয়ে দিলো। সমস্ত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ বেড়ে গেলো যা আপনারা দেখেছেন। আপনারা দেখেছেন, ঢাকা থেকে গাদাগাদি করে হাজার হাজার মানুষ বাড়ি গেলো। এখন হঠাৎ করেই এক তারিখ থেকে কলকারখানা সরকার খুলে দিলো। যানবাহন খুললো না। ফলে মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। পায়ে হেঁটে, রিকশায়, যে যেভাবে পারে কাজে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছে। এরপরে তাদের বোধোদয় হয়েছে যে, রাত্রিতে বললো, গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত গণপরিবহন খোলা থাকবে। তোঘলকও হেরে যায়। আমি এজন্য বলেছিলাম কয়েকদিন আগে যে, আমার কাছে মনে হয় যারা এসব সিদ্ধান্ত দেন তারা সব পাবনার হেমায়েতপুর থেকে এসেছেন।
তিনি বলেন, এটা তাদের সিদ্ধান্তহীনতা নয়, এটা পরিকল্পিত। তারা তো বলেই যে, বাংলাদেশে ৫ লক্ষ লোক ১০ লক্ষ লোক মরে গেলে কি হবে। এতো দেশের মানুষ। এই হচ্ছে এই সরকার। যাদের জনগণের প্রতি কোনো দায়িত্ব নেই, যারা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে রাজনৈতিকভাবে। এখন তারা মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। দেখুন মানুষগুলোকে ঘরে রাখতে হলে প্রণোদনা দিতে হবে। আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, দিন আনে দিন খান, অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক, কামার-কুমার-মাঝি, হকার তাদেরকে এককালীন ১৫ হাজার টাকা প্রণোদনা দেয়া হোক। সেটা সরকার দেয়নি। নেতা-কর্মীদের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন। আমাদের জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, আমাদের দলের স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটি তারা মানুষের সঙ্গে থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করছে। বিএনপি জনগণের পাশে আছে, পাশে দাঁড়াচ্ছে। ওরা (সরকার) বলে যে, বিএনপিকে দেখা যায় না। বিএনপিকে দেখার দায়িত্ব না, দেখার দায়িত্ব সরকারের। দেখার দায়িত্ব ওবায়দুল কাদের সাহেবের, হাসান মাহমুদ সাহেবের যে আপনারা জনগণের সঙ্গে থেকে তাদের সহযোগিতা করছেন, ত্রাণ দিচ্ছেন, এই কষ্টের দিনে তাদের পাশে দাঁড়ানোর। দেখি না তো।