শিক্ষা, স্বাস্থ্য অর্থনীতিসহ সরকার সব শেষ করে দিয়েছে - ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১২ এএম, ২০ জুন,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৫৫ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
দেশে সরকার ‘লুটেরা অর্থনীতি’ চালু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, পঞ্চাশ বছরে আমরা যত অর্জন করেছিলাম এই সরকার সব কিছু শেষ করে দিয়েছে। আমাদের শিক্ষা শেষ করেছে, আমাদের স্বাস্থ্য শেষ করেছে, আমাদের অর্থনীতিকে শেষ করেছে।
একটা লুটেরা অর্থনীতি চালু করেছে, সম্পূর্ণ লুটেরা অর্থনীতি। কিচ্ছু হয় না আপনার লুট ছাড়া। আপনার ১০ হাজার কোটির টাকার একটা প্রজেক্ট হয়ে যায় ৪০ হাজার ৫০ হাজার কোটি টাকা এবং এই ৪০/৫০ হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে যায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের পত্রিকায় আছে যে, সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশিদের একাউন্টস বাড়ছে অনেকভাবে। আপনার কানাডা, মালয়েশিয়াতে সেকেন্ড হোম তৈরি হচ্ছে। কাদের এসব?
আমি নাম বলছি না, তিনি এখানেই (অনুষ্ঠান) আছেন তার সঙ্গে কথা বলছিলাম। তিনি একটা রেসিডেন্সিয়াল এরিয়াতে থাকেন। ওখানে যতগুলো প্লট আছে তার অর্ধেকই নাকি তারা (ক্ষমতাসীনরা) নিয়ে গেছে। কাদের লোকেরা নিচ্ছে? এরকম অবস্থা সব জায়গাতে। এভাবে দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়া, রাজনীতিকে ধবংস করে দেয়া, একদলীয় শাসনে দেশকে নিয়ে যাওয়া.. এটাই করছে তারা। বর্তমান অবস্থাকে ‘বড় সংকট’ হিসেবে অভিহিত করে এর থেকে উত্তরনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এগিয়ে আসান হওয়ার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ওরা (সরকার) গোয়েবলসীয় কায়দায় মিথ্যাচার প্রচারণা করছে, ইতিহাসকে বিকৃত করছে। আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনারা হচ্ছেন সবচাইতে সচেতন শ্রেণির পেশাজীবী। আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করবেন, গোটা জাতিকে তৈরি করতে হবে, আপনাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের তৈরি করতে হবে এবং লাখো সৈনিক তৈরি করতে হবে। আসুন, আমরা সবাই মিলে একসাথে কাজ করে এই বড় সংকট থেকে কাটিয়ে উঠি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করি, গণতন্ত্রকে মুক্ত করি এবং আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আয়োজনে ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান : ইতিহাসের ধ্রুব তারা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।
গ্রন্থে জিয়াউর রহমানের নিজের লেখা তিনটি প্রবন্ধ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ জন শিক্ষকের লেখা স্থান পেয়েছে। সংকলিত গ্রন্থটির প্রকাশক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দল। এর প্রচ্ছদ এঁকেছেন মো. ইসরাফিল প্রামাণিক রতন। ২শ পৃষ্ঠার গ্রন্থের মূল্য ধরা হয়েছে ৪শ টাকা।
দলীয় রাজনীতিতে লীন হবেন না : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করার আহবান দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দল। আমরা যারা শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গে কিছুটা পরিচিত আছি তারা জানি যে, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শনে যারা বিশ্বাস করেন তাদের সম্মিলিত একটা সংগঠন এটি। আমার কাছে যেটা মনে হয় যে, একেবারে দলীয় সংগঠনে পরিণত হওয়াটা বোধহয় খুব একটা ভালো হবে না। দলের জন্য হবে না, নিজেদের জন্য হবে না, রাজনীতির জন্যও হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দল তার নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়ে গড়ে উঠেছিলো, সেটাই আপনারা প্রতিষ্ঠিত করবেন-এটাই আমরা বাইরে থেকে সেভাবে আশা করি। আপনারা সাদা দল জিন্দাবাদ দেন, সাদা দলের রাজনীতিকে জিন্দাবাদ দেন, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের রাজনীতিকে জিন্দাবাদ দেন, জিয়াউর রহমানকে জিন্দাবাদ দেন। কিন্তু বিএনপির মধ্যে একেবারে লীন হয়ে যাইয়েন না।
তিনি বলেন, আপনারা কিছু মনে করবেন না। আমি কথাগুলো আমার অনুভূতি থেকে বলছি যে, এটা হলে আমরা (বিএনপি) অনেক বেশি উপকৃত হবো, আমাদের রাজনীতি উপকৃত হবে। আপনারা সেভাবে এগোন আপনারাও উপকৃত হবেন। আপনারা আমাদেরকে পরামর্শ দেন, আমাদেরকে বুদ্ধি দেন যে, এভাবে আপনারা কাজ করবেন। আমরা সেইভাবে কাজ করব। মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের দেশ এখন পুরোপুরি বিভক্ত হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি এই দুইভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে। তার ফলে কী হয়েছে? একজন মানুষ আপনি ধরেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো বলছেন সেটাও অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। সে হয়ত বিএনপি অথবা আওয়ামী লীগের লোক। এই বিষয়গুলো থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার। যার জীবনী নিয়ে আজকে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হলো, যেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তিনি কিন্তু সব সময় জাতীয় ঐক্যে বিশ্বাস করতেন। তিনি বিভক্তিতে বিশ্বাস করতেন না। তার কৃতিত্বটা সেই জায়গায়। গোটা জাতি যখন বিভক্ত করেছিলো আওয়ামী লীগ ১৯৭২-৭৫ সালে, সেই অবস্থা থেকে বের করে নিয়ে এসে তিনি একটা ঐক্যবদ্ধ জাতিতে পরিণত করেছিলেন। এই বিষয়টা অত্যন্ত জরুরি।
জিয়াউর রহমানকে একজন বিপ্লবী নেতা হিসেবে আখ্যা দিয়ে ফখরুল বলেন, আমরা এক সময় শপথ নিয়েছিলাম ছাত্রজীবনে। সমাজ পাল্টিয়ে দেবো, বিপ্লব করবো। কিন্তু বিপ্লবটা করেছেন জিয়াউর রহমান। এতো অল্প সময়ের মধ্যে সব কিছু পাল্টিয়ে দিয়েছেন, মানুষের চিন্তাগুলোকে পাল্টিয়ে দিয়েছেন। গণতন্ত্র ছাড়া অর্থনীতি টেকসই হবে না, খালকাটা কর্মসূচিতে হাজার হাজার মানুষকে নামিয়ে দিয়েছেন, প্রশাসন ও অর্থনীতি পরিচালনার জন্য গ্রাম সরকার তৈরি করেছেন-এই বিষয়গুলোর এসেছে জিয়াউর রহমানের মৌলিক চিন্তা, স্বকীয় চিন্তা থেকে। জিয়াউর রহমান আমাদের নিজস্ব পরিচিতি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ দিয়েছেন। জিয়াউর রহমান জীবন-কর্মের ওপর গবেষণাধর্মী কাজ এবং নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানাতে সাদা দলের শিক্ষকদের এগিয়ে আসার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে একটা ক্যাম্পেইন শুরু করেছে যে, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক ছিলেন না, অনেকে বলে যে, উনি মুক্তিযুদ্ধ করেননি, উনি পাকিস্তানের অনুচর ছিলেন। বিভিন্নভাবে তাকে একটা খলনায়কে তারা পরিণত করতে চায়। শিশুদের শেখানো হয় আমি জাানি বলে বলছি যে, জিয়াউর রহমান নাকি একজন কিলার, শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমান নাকি জড়িত ছিলেন। একথা প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে তাদের নেতা থেকে কর্মী সবাই একই কথা বলে। ওটাকে আমাদের কাউন্টার করতে হবে। যারা আমরা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি তাদেরকে বলতে হবে যে, এটা সঠিক নয়। উপরন্তু তারা উল্টো মিথ্যাটা বলছে। কেনো বলছে, কি কারণে বলছে এটা আমাদেরকে বুঝতে হবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, জিয়াউর রহমান জনগণের কল্যাণের জন্য ১৯ দফা কর্মসূচি দিয়েছেন, সবাই পছন্দ করেছে সেই কর্মসূচি। তারপরেও তিনি জনগনের গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন বলে তার রাষ্ট্রপতি পদ এবং ১৯ দফা কর্মসূচির জন্য তিনি গণভোটের আয়োজন করেছিলেন, জনগনের সমর্থন নিয়েছিলেন। কোনো দরকার ছিলো। কিন্তু যেহেতু তিনি জনগনের শক্তিতে বিশ্বাস করতেন সেজন্য জনগনের সমর্থনটা তিনি প্রয়োজন মনে করেছিলেন। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও সংসদ নির্বাচনেও সবাইকে নিয়ে করেছেন এবং বিজয়ী হয়েছেন। ‘তার অনন্য দেশপ্রেম, অদম্য কর্মোদ্যোগ, প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস, ঈর্শ্বনীয় দূরদৃষ্টি এবং সাথীদের উদ্দিপ্ত করার অসামন্য যোগ্যতা, সত ও নির্বিক এই মানুষটিকে মহামানবে পরিণত করেছে। তোষামোদী, স্বজনপ্রীতি, দূবর্লতা, চারিত্রিক দূবর্লতা কিংবা দুর্নীতি তাকে এড়িয়ে চলেছে। তার মতো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ হচ্ছে বড় সেকুলারিজম। সেই জাতীয়তাবাদে মুসলমান, হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধসহ আর যত ধর্ম আছে সব আছে, নৃ-তাত্বিক যত গ্রুপ চাকমা থেকে শুরু করে যত আছে আর আমরা বাঙালী সব মিলে হলো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। এই ফ্যাসিস্ট সরকার যাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে ঋণ করে ঘি খাওয়া আর জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারকে ধবংস করার পরিকল্পনা করা, জিয়াউর রহমানকে ভিলেন বানানো। তিনি যে সত্যিকার অর্থে দেশমাত্রিকাকে ভালোবাসতো, সে যে দেশের টানে তার শপথ ভঙ্গ করে বিদ্রোহ করেছিলেন একথা বলতে তাদের লজ্জা লাগে। ঢাপ্রকাশিত গ্রন্থের সম্পাদনা পরিষদের আহবায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিভাগের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সাদা দলের আহবায়ক অধ্যাপক মো. লুতফর রহমানের পরিচালনায় আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচায্র্ অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, গ্রন্থের সম্পাদনা পরিষদের নির্বাহী সম্পাদক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান ও সদস্য অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সুকোমল বড়–য়া, অধ্যাপক আবুল কালাম সরকার, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক মোজাদ্দেদী আল ফেসানী,অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক মিজানুর রহমান, অধ্যাপক তোজাম্মেল হোসেন, অধ্যাপক হাসানুজ্জামান স্বপন, অধ্যাপক মতিউর রহমান, অধ্যাপক দেবাশীষ পাল, অধ্যাপক আল আবদুল করীম, অধ্যাপক কামরুল হাসান, অধ্যাপক মঞ্জুর এলাহী, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক ছবিরুল ইসলাম হাওলাদার, অধ্যাপক আতাউর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, হেলেন জেরিন খান, শামীমুর রহমান শামীম, খালেদ হোসেইন ফাহিন, সেলিমুজ্জামান সেলিম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সহ-সভাপতি রাশেদুল হক, যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলবার্ট পি কস্টা, প্রকৌশলী মাহবুব আলম, আবদুর রহিম, কাজী মনিরুজ্জামান, শফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।